কুরআন

সফল কে?

আল্লাহ তাআলা বলেন (অর্থ): প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং সবাইকে (তোমাদের কাজের) পুরোপুরি প্রতিদান কেবল কেয়ামতের দিনই দেওয়া হবে। তারপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে। আর (জান্নাতের বিপরীতে) এই পার্থিব জীবনতো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়। সূরা আল ইমরান: ১৮৫

পার্থিব জীবনের মান-মর্যাদা, চাওয়া-পাওয়ার মাপকাঠি নয়, এ ধারণা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুল। টাকা-পয়সা, পদ-মর্যাদা, লেখাপড়া সবই পার্থিব জীবনের প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ; এসব শীঘ্রই নিঃশেষ হয়ে যাবে। এগুলোর প্রয়োজনীয়তাও সীমাবদ্ধ। মূলত এগুলি পরীক্ষার বস্তু। এগুলি মৌলিকভাবে শান্তির  কোনো উৎস নয়। এগুলিকে আল্লাহ তাআলার আদেশে ব্যবহার করা হলে মানুষ তা থেকে প্রকৃত ও চূড়ান্ত উপকার পাবে। তবে এমনও হতে পারে যে, কেউ আল্লাহ তাআলার বিধান মানল, কিন্তু বাহ্যত এসব উপকরণের বাহ্যিক উপকার পেল না। এটাই পার্থিব জীবনের পরীক্ষারই অন্তর্ভুক্ত! মানুষের আমল বা কৃতকর্মই নির্ধারণ করবে তার পার্থিব জীবন, কবরের জীবন ও আখেরাতের অনন্ত অসীম জীবনের মূল ও চূড়ান্ত ফলাফল।

মনে হতে পারে, যারা ধন-সম্পত্তি পেয়েছে তারাই সফল। বা যারা ক্ষমতাধর তারাই সফল। বিষয়টি মোটেই এমন নয়। মানুষের অন্তরের প্রশান্তির সাথে সফলতার সরাসরি সম্পর্ক। পার্থিব জীবনে খোলা চোখেই এটা দেখা যায়ে যে, ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, লেখাপড়া অর্জন করেও কত মানুষের মধ্যে হাহাকার!

লক্ষ করলেই দেখা যায়, আল্লাহ তাআলার অনুগত বান্দা দুনিয়াতে অল্প খাওয়া-পরা পেলেও অস্থির হয়ে ওঠে না। কারণ তার অন্তরে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ-এর কথা জাগরূক থাকে। মুমিন বান্দা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনকে কখনো চিরকালের নেয়ামতের উপর প্রাধান্য দেয় না। তার মাথায় সবসময় এ কথাই ঘুরপাক খায় — আমিতো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব। হয়ত হঠাৎ করেই একদিন যেতে হবে। আমাকে দাঁড়াতে হবে সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার সামনে। আমাকে তিনি সবসময় দেখছেন। আমি কখন কী করছি, কী আমার চিন্তা আর পরিকল্পনা, আর কী-ই বা আমার ফন্দি-ফিকির – সবই তিনি জানেন। আমি সবাইকে ফাঁকি দিতে পারি, তাঁকে ফাঁকি দিতে পারিনা। আমার রিযিক, অবস্থা, জীবন, মরণ তাঁর হাতে। দুনিয়াতে বিভিন্ন অবস্থা দিয়ে আসলে তিনি আমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। দেখছেন — আমি কোন্ দিকে যাই আর কী করছি।

দুনিয়ার বিভিন্ন অবস্থা যখন একজন মুমিনের সামনে আসতে থাকে, তখন সে আল্লাহ তাআলার প্রতি মনোনিবেশ করে। কেউ তাকে বলে হারাম উপার্জন করতে, কেউ বলে মান-সম্মান অর্জনের জন্য এই করো-সেই করো। এমনকি তার মন (নফস) এবং শয়তান তাকে ভয় দেখায় অভাব আর না খেয়ে থাকার। চারপাশ থেকে তার কাছে আসতে থাকে তাকওয়া, নেক আমল, ইখলাস থেকে দূরে সরার আহবান।

কিন্তু আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসাকারীর অবস্থা তো বলাই হল। হয়ত সারা জগত উলট-পালট হয়ে যাবে আর সবাই তাকে মন্দ বলবে। সবাই ছি ছি করবে আর তাকে ধিক্কার দিবে। সবাই তাকে বোকা বলবে। তবু তার দৃষ্টি আল্লাহ তাআলার দিকে থাকবে। সে নেক আমলের করতে থাকবে, গুনাহ থেকে বাঁচতে থাকবে। গুনাহ হয়ে গেলে তওবা করে আবার আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে চলতে থাকবে। আর আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। এই সাহায্য একজন ঈমানদার দেখবে। সে বুঝবে ও উপলব্ধি করবে। ফলশ্রুতিতে তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে। বৃদ্ধি পাবে আল্লাহ তাআলার ওপর তার ভরসা। দুনিয়া আর দুনিয়ামুখী বিভিন্ন আহবান তাকে প্রভাবিত করবে না। দুনিয়ার অন্যায় ভোগ-বিলাস তাকে প্রবঞ্চিত করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলাই মুমিনের অভিভাবক।

যখন কোনো ঈমানদার বান্দার মৃত্যু চলে আসে তখন তার কপালে ঘাম আসে। হাদীস থেকে জানা যায় যে, মৃত্যুকালে ঈমানদারের কপালে ঘাম দিয়ে বের হয় (নাসাঈ)। আমরা জানি, পরিশ্রমের ফলে শ্রমিকের মাথায় ঘাম আসে। অন্যভাবে বলা যায়, এ ঘাম শ্রমিকের পরিশ্রমের প্রমাণ। আর একজন শ্রমিক  ঘামঝড়া এ পরিশ্রমের বিনিময় যথাসময়ে পেয়েই থাকে। ঈমানদার ব্যক্তি পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় পরিশ্রম করে। মৃত্যুকালে তার কপালে ঘাম আসে। অর্থাৎ, আর দেরী নয় গো আল্লাহর বান্দা! তোমার সব কষ্ট-ক্লেশের দিন শেষ, এখন পুরষ্কার গ্রহণের পালা। অন্য বর্ণনামতে, তাকে দেখানো হয় জান্নাতের দৃশ্য! আনন্দে সে আত্মহারা হয়ে উঠে। যেমনটা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহিমাহুল্লাহ ইন্তেকাল মুহূর্তে তেলাওয়াত করেছিলেন (অর্থ): ঐ পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সব লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে বড়ত্ব চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যই । সূরা কাসাস: ৮৩

এটিই চূড়ান্ত সফলতা!

Last Updated on May 26, 2022 @ 11:49 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it