আখলাক ও আত্মশুদ্ধি

সময়ানুবর্তিতা – ২

মুমিনের কাছে সময়ের হেফাজত অর্থ অনেক ব্যাপক। কারণ তার জানা আছে জীবনের উদ্দেশ্য কী। তার জানা আছে পার্থিব জীবনের পর হিসাবের জীবন আসছে। তার কাছে (পার্থিব জীবনে) আল্লাহ তাআলার দেয়া সীহাত (স্বাস্থ্য), অবসর, সচ্ছলতা অমূল্য সম্পদ। এ জীবনে কষ্ট-ক্লেশ ও সাধনার দ্বারা যে সফলতা আসে — তার কাছে এরও এক মাপকাঠি আছে। তার কাছে তো রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহর আলো। যা শুধু মাপকাঠিই নয়, বরং পূর্ণ সফলতার বিস্তারিত বর্ণনা ও পথনির্দেশ।

সুতরাং একজন মুমিন হিসাব কষে যে আল্লাহ তাআলা যিনি সৃষ্টিকর্তা, মালিক — তার বিধান প্রতিষ্ঠায় এ হায়াত যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না(?)

সময়ের মূল্যায়ন একজন মুসলমান বুঝবে না?! এটা হতেই পারে না। যার লক্ষ্য স্থির, যার গন্তব্য সুনির্দিষ্ট, সে কখনো অমূল্য সময়কে হেলায় হারাবে না। যদিও বা ত্রুটি হয়ে যায়, সে শুধরে নেবে।

আল্লাহ তাআলার হুকুমের বলয় থেকে কোনো মুসলমান বের হতে পারে না। এমনকি দেখুন, মুসলমানের কোনো সুযোগ নেই যে টানা সে জাগতিক কাজ করে যাবে। তাকে দৈনিক পাঁচ-পাঁচ বার টেনে নেয়া হয় আল্লাহর ডাকে বিশেষ ভাবে সাড়া দেয়ার জন্য। এই সুযোগও নেই টানা সে নিদ্রায় মগ্ন থাকবে। ঘুমে বিভোর অবস্থায়ও সেই ভোর বেলায় একই বন্দোবস্ত। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার….হাইয়্যা আলাস সালাহ্….হাইয়্যা আলাল-ফালাহ। কেবল শুরু হল…এক একটি লমহা (মুহূর্ত), এক একটি শ্বাস, এক একটি পদক্ষেপ যা সময়ের সাথে সম্মুখে আগাতেই থাকে। শুধু যেন একই প্রতিধ্বনি দেয় – যাচ্ছি, চলে যাচ্ছে, শেষ হয়ে গেল। কী নিলে, কী সংগ্রহ করলে? কিছু কর, কিছু কামাই কর যা কামানোর, আজকেই কিছু জমাও যা আসলেই (চিরকাল) কাজে লাগবে।

আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুম তো সময়রেই তাকাযা (চাহিদা)। কোনো একটি ছাড়লেই তো জীবন বিপন্ন, হুকুম অনুপাতে ক্ষতি (হুকুম যত বড়, তা ছেড়ে দেয়ার ক্ষতিও তত ব্যাপক)। যতটুকু ছাড়লাম, ততটুকুই তো হারালাম!

যারা সময়ের মূল্যায়ন করেছে তাদেরই কেবল দেখুন, যারা করেনি – তাদের দেখে বিলকুল সময় নষ্ট করেন না।

সূরা আসর-এর অর্থ ও তফসীর সাধ্যমত প্রত্যেক মুসলমানের পড়া উচিত। আল্লাহ তাআলা এ সূরায় সময়ের (বা কালের) কসম করেছেন। কসম করে জানিয়ে দিয়েছেন কারা ক্ষতিগ্রস্ত, কারা ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। এই ক্ষতিটাও কেমন — অনন্ত অসীম কালের ক্ষতি। যে যেই বিষয়ের উপর তার বিশ্বাস ও আস্থা স্থির করেছে তার কাছে সেটাই লাভ বা ক্ষতির মানদণ্ড। কেউ ব্যবসায় ক্ষতি হলে সেটা বড় ক্ষতি মনে করে। কেউ চাকুরি হারালে মনে করে সে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কেউ পরীক্ষায় ফেল করলে মনে করে সে ব্যর্থ হয়ে গেল। হ্যাঁ, এগুলো ক্ষতি হতে পারে, কিন্তু যেকোনো পার্থিব ক্ষতিই ক্ষণস্থায়ী। এমন নয় চিরকাল তার কষ্ট ভোগ করতে হবে। আখেরাতের ক্ষতি হল চিরস্থায়ী ক্ষতি এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট শাস্তি ও কষ্ট এতটাই ভয়াবহ ও যন্ত্রণাময় যা ‘আমাদের’ ভাষায় প্রকাশ করা এক প্রকার দুঃসাধ্য। স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ সেই আযাবের বর্ণনা দিয়েছেন, মানুষকে সতর্ক করেছেন, মানুষকে বাঁচতে বলেছেন তা থেকে। কারণ সেই শাস্তিতে পাকড়াও হওয়া অর্থই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হওয়া।
 
পার্থিব হায়াতের এ সময়টুকু দুনিয়া ও আখেরাতের সব ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র সুবর্ণ সুযোগ। সে কথাটিই অত্যন্ত সংক্ষেপে কিন্তু সারাংশ আকারে সূরা আসর-এ তুলা ধরা হয়েছে। যার সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী رحمة الله عليه ‘যদি এই একটি মাত্র সূরাই নাযিল হত, তাহলে মানুষের হেদায়াতের জন্য তা যথেষ্ট হত’ – এমন উঁচু মন্তব্য করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সূরাটি বার বার পড়া। তার অর্থ ও তাফসীর পড়ে এর উপর বিশেষ মনোযোগের সাথে চিন্তা-ফিকির করা।

——————————————————————————-

* অথচ জাগতিক জায়েয কাজতো যথাযথ ভাবে করা শরিয়তে উদ্দেশ্য

ইনশাআল্লাহ চলবে……

Last Updated on November 13, 2022 @ 10:50 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it