রূহের উন্নতির প্রয়াস – ১
মানুষের রূহ ও শরীর উভয়েরই খাদ্য প্রয়োজন। আমরা শরীরকে কমপক্ষে তিন বেলা পেট ভরে খাবার খাওয়াই। এছাড়াও গোসল, ঘুম, ব্যায়াম, রূপচর্চা এবং আরও নানান উপায়ে শরীরের প্রতি অনেক যত্ন নেয়া হয়। কিন্তু মানুষ বলতে শুধু শরীর নামক খোলস তো আর নয়! যে রূহ এই শরীরকে সচল রেখেছে সেই রূহেরও এক স্বাস্থ্য আছে। তারও বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। দেখার বিষয় হল, এই রূহ বা অন্তর্জগতের প্রতি আমাদের খেয়াল ও যত্ন কতটুকু? রূহের খাবার ও খোরাকের যোগান কী পরিমাণ ও কী মানের হচ্ছে?
যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক কোন উপায়ে শরীর ও রূহের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। দুটির গুরুত্বই অনেক। কিন্তু শরীরের মৃত্যু বলতে যেমন আমরা মানুষের মৃত্যু বুঝি, রূহের মৃত্যু হল মনুষ্যত্বের মৃত্যু। শরীর খারাপ মানে হল খোলস বিপদে আছে আর রূহ রোগাক্রান্ত মানে অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত।
এ কথাও বিস্মৃত হলে চলবে না যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট উল্লেখ করে দিয়েছেন। মানুষের কীসে উন্নতি আর মানুষের কীসে অবনতি তা নবী (আ:)-এর মাধ্যমে হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন।
জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে কোন বিষয়ে সর্বাধিক মনোযোগ দিতে হবে, কোন বিষয়গুলো শুধু প্রয়োজন হিসেবে সম্পন্ন করে ক্ষান্ত হতে হবে, কোন বিষয়গুলো অহেতুক এবং কোনগুলো তার জন্য গর্হিত ও অন্যায় (তাই সম্পূর্ণ বর্জনীয়) – তা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে খুলে খুলে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো মানুষ নিজে নিজে কখনো বুঝতে পারে না। কেননা মানুষের সুন্দর গঠন, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি ও বিবেক তার নিজের চূড়ান্ত সফলতার কোনো চিত্র আঁকতে পারে না। আঁকলে ভুল আঁকে। সেই পথে চললে সে ভুল করে বসে। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই মনুষ্যত্ব বিকাশের চিত্র এঁকেছেন। তা বর্ণনা করেছেন আর সেটা দেখিয়েও দিয়েছেন মানুষেকে।
পার্থিব হায়াতে এক দল লোক ধোঁকা খাচ্ছে। তারা ইন্দ্রিয়জাত ও বুদ্ধির সাফল্য যথেষ্ট মনে করছে। তাদের উন্নতির শিকড় ও শিখর ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতি ও সিদ্ধান্ত অবলম্বন – শুধুমাত্র এ দুইয়েরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের কাছে যে কোনো কিছু জানার ও বোঝার কেবল এ-ই উৎস, আর কোনো উৎস নেই। কোনো অসীম ক্ষমতাবান সত্ত্বা আছেন, তিনি কী বলেছেন, এরও বাইরে তিনি জ্ঞানার্জনের অন্য কোনো উৎসের সন্ধান দিয়েছেন কিনা – এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন তারা।
তাদের উদাসীনতা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যদি অর্থ-কড়ির আলোচনা আসে – তারা সর্বাগ্রে, যদি রূপ-লাবণ্যের প্রশ্ন আসে – তারা সবচে আগ্রহী, যদি যশ-খ্যাতির প্রতিযোগিতায় নামতে হয় – তারা যে কোনো মূল্যে এর প্রত্যাশী। ব্যাপার কী?! ব্যাপার হল যেমনটা কবি বলেছেন,
এপার তোমায় দিয়েছে ধোঁকা
ওপার গেলে বুঝবে,
সফল কে আর বৃথা কে বা
অসময়ে হুঁশবে!
ইনশাআল্লাহ চলবে…..
Last Updated on October 24, 2022 @ 11:18 am by IslamInLife বাংলা