রমযান/রোযা

রমযানে যে কাজগুলো করা বেশি জরুরি

রমযানে কোন্ আমল বেশি করব, কিভাবে রমযান অতিবাহিত করব — এ নিয়ে সবার মনে চিন্তা। প্রতিটি ঈমানদার চায় রমযান মাসটি অন্তত অবহেলায় অতিবাহিত না হোক! তাই একেবারে সবার জন্য জরুরি কিছু বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে:

– জীবনের সবক্ষেত্রে তাকওয়া বৃদ্ধির প্রচেষ্টা বাড়ানো। অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে (যখন আমরা একা থাকি), পারিবারিকভাবে (পরিবারের মাঝে আমরা যখন থাকি), এভাবে অফিসে, রাস্তাঘাটে, দোকানে, বাজারে, আর মসজিদে তো অবশ্যই — সব জায়গায় গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন। এটাই তাকওয়া। পুরাপুরি বাঁচতে পারছি না কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে। চেষ্টা অব্যাহত রাখা খুব জরুরি।

– সারা বছর যেমন তওবা-ইস্তেগফার জরুরি, রমযানে তওবা ও ইস্তেগফার করা আরো বেশি জরুরি। আন্তরিকভাবে গুনাহ থেকে তওবাকারী ব্যক্তির জন্য তাকওয়া অর্জন (অর্থাৎ গুনাহ তেকে বাঁচা) সহজ হয়।

– রমযান কুরআন নাযিলের মাস। যত বেশি কুরআন পড়ব তত বেশি রহমত, বরকত, মাগফিরাত আশা করতে পারব! পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করে তাঁর বন্ধু হওয়া যায়! রমযানে কুরআনের প্রতি বিশেষ যত্নবান হলে সারা বছরও ইনশাআল্লাহ কুরআনের প্রতি আকর্ষণ থাকবে। তেলাওয়াতও হবে, আমলও হবে ইনশাআল্লাহ।

– ইবাদত যেন আরও সুন্দর ও সুস্থভাবে করতে পারি সেজন্য স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকা উচিত। এটি রমযান মাসে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার বিষয়। কারণ, খাওয়ার রুটিন, আইটেম/মেনু, পরিমাণ ইত্যাদিতে অনেকের পরিবর্তন আসে। যারা আসলে একটি শৃঙ্খলা ঠিক করে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখে তাদের ইবাদত ও আমল সুন্দর হয়। আমরা যারা পারি না, তারা একটু সতর্ক হলেই তো পারব ইনশাআল্লাহ! অতিরিক্ত খাওয়া মন্দ অভ্যাস। ভরা-পেট, ক্লান্তি নিয়ে ফরয্ ইবাদতই সুন্দর করে হয় না, তারাবি তো আরো কঠিন। উচিত হল, ইবাদতের নিয়তে খাওয়া। রমযানের রোযার রহমত ও বরকত অর্জনের জন্য পানাহারের বাড়াবাড়ি থেকে বাঁচা খুব জরুরি। ইসলামে তো এটির গুরুত্ব অনেক! আর ভুলে গেলে চলবে না যে, পানাহার নিজেই একটি স্বতন্ত্র অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত! আসলে শুধু রমযানের রোযা-তারাবির জন্য পানাহারে শৃঙ্খলা নয়, সারাজীবনই আল্লাহ পাকের ইবাদতের জন্য পানাহারে শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি। রমযানে সেটির অনুশীলন করে নিতে পারি!

– মানুষের প্রতি আরও সদয় ও সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করা। আচার-ব্যবহার, দান, অনাথ-গরীব-অসহায়দের খাওয়ানো সবই এর অন্তর্ভুক্ত। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, প্রতিবেশি, আত্মীয়, বন্ধু-শত্রু — সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ ও সুন্দর রাখা খুব জরুরি। পবিত্র রমযান সার্বিক সংযমের শিক্ষা দেয়।

– দোআ ও যিকির বৃদ্ধি করা উচিত। সারা বছরের তুলনায় রমযানে দোআ ও যিকিরে বেশি সময় ব্যয় করা উচিত। কাজের ফাঁকে সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানআল্লাহি ওয়াবি হামদিহি সুবহানআল্লাহিল আযীম, ছোট দরূদ শরীফ, ছোট ইস্তেগফারের বাক্য পড়া কতই না সহজ! কোনো স্মরণিকার ব্যবস্থা করতে পারি। যেমন: বাসায় কেউ একবার একটু জোরে পড়লে অন্যান্যরাও সজাগ হয়ে আমল করতে পারে। ফরয নামাযের পর, ইফতারী, সাহরির সময়গুলোতে দোআ যেন না ছুটে যায় — বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।

– পুরো জীবন আর বিশেষভাবে পবিত্র রমযান রহমত ও মাগফিরাতের জন্য ব্যয় করা উচিত। আরও বিশেষভাবে ইবাদতের জন্য ব্যয় করা উচিত রমযানের শেষ দশক! শেষ দশকে নিজেকে ক্ষমা করিয়ে জীবন নবায়ন করতেই হবে! হায়াত কিন্তু শেষ হয়েই যাবে। একদিন মানুষ আমার জানাযা পড়বে, আমাকে দাফন করবে। আমাকে আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়াতে হবেই হবে। এ চিন্তা করে কি জীবনকে আরও আল্লাহ-মুখী করা উচিত নয়?!

আল্লাহ! তুমি তাওফীক দাও (আমীন)।

 

Last Updated on March 2, 2025 @ 1:01 pm by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it