বস্তু ও বিষয়াদির তাৎপর্য: প্রকৃত উপলব্ধি ও সফলতা কার
আমরা কোনোকিছুর তাৎপর্য কখন বুঝব? যখন বিষয়টি আন্তরিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করা হবে। আর মুমিন হিসেবে যেহেতু এ কথা আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করেই নিয়েছি যে, সবকিছুর মালিক ও খালিক কেবলই আল্লাহ তাআলা, তাই তাঁর প্রদত্ত বস্তু ও বিষয়কে হৃদয়ঙ্গম করতে হলে প্রয়োজন তাঁরই কাছে নতি স্বীকার, আত্মসমর্পণ।
কোনোকিছু গ্রহণ ও বর্জনে মূলনীতির অন্যতম হল এটা জানা যে, কোথা থেকে বা কার কাছ থেকে এ নির্দেশ আসছে? কারণ, গুরুত্বের ‘ভার’ কর্তৃপক্ষের শক্তি, দাপট ও ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
কোনোকিছুর তাৎপর্য বোঝার জন্য শ্রোতার যত যোগ্যতা লাগে তার মধ্যে বিনয় ও নম্রতা অন্যতম। বিনয়াবনত হবার পর সঠিক জ্ঞানার্জন এবং সে জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ করতে হয়। যখন এ শর্তগুলো পূরণ হয় তখনই তার তাৎপর্য অনুভব ও অনুধাবন সহজ হয়। বরং, মুমিন হিসেবে আমাদের শতভাগ বিশ্বাস হল, আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ব্যতীত কিছুই অনুভব ও অনুধাবন সম্ভব নয়। কারণ, সবকিছুর ফলাফলও তাঁর কুদরতি হাতে।
আমরা ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধিকে যদি আল্লাহ পাকের প্রেরিত শরিয়তের সামনে নত না করি, তাহলে তাৎপর্য কি করে বুঝব? ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধি আল্লাহ তাআলার দান। এগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, সে শিক্ষা তিনিই দিয়েছেন। সেটাই শরিয়ত। কেবল শরিয়ত দেননি। এর উপর শতভাগ আমলকারী নবী পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। নবীগণের মাধ্যমে যে শিক্ষা মানুষ পেয়েছে, সেটাই শ্রেষ্ঠ শিক্ষা, যার কোনো তুলনা নেই। অর্থাৎ, নবী কর্তৃক প্রদর্শিত ‘শরিয়ত’ শ্রেষ্ঠ পথ ও পন্থা। কোনোকিছুর তাৎপর্য বোঝার এটাই হল শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি। তাই দুনিয়ার সব জ্ঞান-বিজ্ঞান একদিকে আর ‘ইলমে ওয়াহী’ আরেক দিকে রাখলে দুনিয়ার যাবতীয় জ্ঞান ইলমে ওয়াহীর কাছে অত্যন্ত নগণ্য হবে, বরং এ তুলনাই অনুচিত।
এবার চিন্তা করুন, শুধু ঈমান আনার কারণে একজন সাধারণ থেকে সাধারণ মুসলমানেরও ইলমে ওয়াহীর সাথে যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায়। তাই কোনোকিছুর তাৎপর্য বোঝায় একজন ঈমানদার ও একজন কাফেরের অবস্থানে থাকে বিস্তর পার্থক্য।
আমাদের (মুমিনদের) এজন্য শোকরগুযার হওয়া দরকার। এবং হ্যাঁ, শুধু কথায় নয়, আমলীভাবেও। কারণ ঈমান ছাড়া অকাট্য সত্যকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বাস্তব জ্ঞানার্জনই সম্ভব নয়। স্রষ্টাকে অস্বীকার করে, চর্মচক্ষু দিয়ে দেখে কিছু পার্থিব বিষয়বস্তু স্বীকার করে নিলে কিভাবে সত্যের উপলব্ধি হবে? এমন স্বীকারোক্তি দর্শন, মতবাদ, দৃষ্টিকোণ হতে পারে। মূলত সবই ভ্রান্ত। তাতে জাগতিক কিছু ফায়দা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু মানুষের প্রকৃত সফলতা, চিরকালীন মুক্তির সাথে এর কেন সম্পর্ক থাকবে না। একজন কাফেরের জাগতিক কোনো আবিষ্কারে তাই অবাক হওয়ার কিছুই নেই। প্রথমত, সব কাজের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই। দ্বিতীয়ত, ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকার করে যে সম্মান ও যশ অর্জন করল, তার মূল ফলাফল ব্যর্থতা বৈ কিছুই নয়। কারণ, মূল স্রষ্টাকে অস্বীকার, তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা, তাঁকে উপেক্ষা করে বিষয়বস্তুর গবেষণা ও আবিষ্কার সব খোদাদ্রোহিতারই শামিল।
আবারও বলছি, আমাদের (মুমিনদের) এজন্য শোকরগুযার হওয়া দরকার। শুধু কথায় নয়, আমলীভাবেও। যখন শোকরগুযার হব, তখন কিছুটা হলেও ‘আলহামদুলিল্লাহ’-র (সমস্ত প্রশংসা যে কেবলই আল্লাহ’র) তাৎপর্যও বুঝে আসবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং, তাৎপর্য বোঝার সর্বপ্রথম ধাপ ঈমান আনয়ন। তারপর বান্দা যত বেশি আন্তরিক ও কার্যত শোকরগুযার হবে, তত বেশি তারই ফায়দা হবে। ফলশ্রুতিতে বিষয়াদি ও বস্তুর তাৎপর্য বোঝা ও উপলব্ধি তত দৃঢ় হবে। নিঃসন্দেহে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণই এ বিষয়ে সবচেয়ে অগ্রসর ছিলেন, তারপর সাহাবীগণ, তারপর যারা নবী-সাহাবীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আল্লাহ তাআলার যত নিকটবর্তী হতে পেরেছে।
Last Updated on February 4, 2023 @ 11:29 am by IslamInLife বাংলা
আলহামদুলিল্লাহ। অনেক দিনের জমানো একটি প্রশ্নের উত্তর পেলাম। তাহলো কাফেরদের দ্বারা সৃষ্ট বা আবিষ্কৃত বস্তু ও ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে আমাদের কি ধারণা রাখা উচিত। জাযাকাল্লাহ।