কী হারালে বেশি কষ্ট হয়-১
দুনিয়ার সামান্য থেকে সামান্য কিছু হাতছাড়া হলে আমাদের মাঝে অনেক বড় রকমের হা-হুতাশ দেখা যায়, অনেক কষ্ট লাগে। অথচ কত বিশেষ নেয়ামত আমাদের কাছে রয়েছে, কত বড় বড় নেয়ামতের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা – সেগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপই নেই। যেন সেগুলো আছে অবহেলার মাঝে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যা কিছু হারানোর জন্য অনেক কান্নাকাটি করা হয় তা “অমূল্য” কিছু নয়, বরং তা দুনিয়ার কোনো ক্ষণস্থায়ী বস্তু মাত্র। এর বিপরীতে সাধারনত যে নেয়ামতগুলোর প্রাপ্তি বা হারানোর তেমন কোনো আকাঙ্ক্ষা অথবা কষ্ট অনুভূত হচ্ছে না সেগুলো বরং অমূল্য ও চিরস্থায়ী।
এটা কত বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় (যেমনটা আজকাল পরিলক্ষিত হচ্ছে) যদি অমূল্য ও চিরস্থায়ী কোনো নেয়ামত হাতছাড়াও হয়ে যায় – সেদিকে তেমন পরোয়া করা হয় না, আর না হয় তার জন্য তেমন কোনো আফসোস! এটা তো আসলে এজন্যই যে, বুঝেই আসেনি কী হাতছাড়া হল, কত বড় নেয়ামত হারানো গেল!
মুমিনের উদ্দেশ্য দুনিয়া নয়, আখেরাত। সুতরাং, দুনিয়ার ক্ষতি ও আখেরাতের ক্ষতিকে মুমিন কখনই এক পাল্লায় মাপে না। যখনই দুনিয়া ও আখেরাতের মোকাবিলা হয় (অর্থাৎ, কোনো অবস্থা আসে যেখানে একটা গ্রহণ করতে হবে), মুমিন আখেরাতকে প্রাধান্য দেয়, আখেরাতের ফলাফলের ভিত্তিতেই ফয়সালা করে। এটি বলাই বাহুল্য যে, মুমিনের দুনিয়া প্রকৃতপক্ষে দ্বীন। কারণ দুনিয়ার বস্তুসমূহ অর্জন বা ত্যাগ, তার লাভ-ক্ষতিসমূহের হিসাব – সবই মুমিন বান্দা আখেরাতের ফল-কে সামনে রেখেই করে। দুনিয়ার কাজে দ্বীনদারি-পরহেজগারী থাকলেই মুমিন নিজেকে সার্থক ও সফল বলে দৃঢ় বিশ্বাস করে। যদি সেজন্য বাহ্যিকভাবে পার্থিব ক্ষতিও হয়ে যায় তা সে আনন্দের সাথে গ্রহণ করে নেয়। কাফিরের সামনে আখেরাত নেই (অর্থাৎ, সে আখেরাতকে অস্বীকার করে) বিধায় তার দৃষ্টির শেষ সীমা দুনিয়া। হালাল-হারামের কোনো তমিজই সে করে না। তার সকল দুঃখ-কষ্ট ও সুখ-শান্তি কেবল পার্থিব চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করেই!
আল্লাহ তাআলার নেক ও পরহেজগার বান্দাদের অবস্থাতো এমন যে, দুনিয়ার ক্ষতি অনেক হয়ে গেলেও হোক, আখেরাতের এক ফোঁটা ক্ষতিও বরদাশত করা তাদের পক্ষে খুবই কঠিন। এমন বান্দাগণ কখনই দুনিয়ার কোনো ক্ষতিকে চিরকালীন তথা আখেরাতের ক্ষতির তুলনায় বড় করে দেখে না।
মূলত দুনিয়ামুখী মানুষ ও আখেরাতমুখী মানুষের লাভ-ক্ষতির হিসাবই আলাদা। বাহ্যিক অনেক কাজকর্ম দেখতে একরকম হলেও দৃষ্টিকোণে ব্যাপক পার্থক্য।
যদি আমাদের অবস্থা এমন হয় যে, দুনিয়ার কিছু ক্ষতির জন্য আফসোস ও গ্লানি আখেরাতের ক্ষতির উপর প্রাধান্য পায়, তবে এটা নিঃসন্দেহে বিরাট ঈমানী দুর্বলতা ও অনেক আশংকার বিষয় – এ থেকে অতি শীঘ্রই তওবা-ইস্তেগফার জরুরি।
বিনা ওজরে এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা হওয়া, একটি রোযা নষ্ট হওয়া – এত অনেক ঊর্ধ্বের বিষয় (যেগুলো আল্লাহ তাআলার ফরয হুকুম)! মুমিন-তো ইচ্ছাকৃত তা ছাড়তেই পারে না। বরং একজন মুমিন তার প্রতিটি চিন্তা-ফিকির ও প্রচেষ্টাকে যথাসম্ভব আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের ﷺ আনুগত্যের অনুগামী রাখতেই সর্বোচ্চ প্রশান্তি ও আরাম অনুভব করে থাকে। ত্রুটি মুমিনের হতেই পারে, কিন্তু ত্রুটির উপর স্থায়ী হওয়া মুমিনের শান নয়। সে তাৎক্ষণিক তওবার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের ﷺ আনুগত্যের মধ্যে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার শান্তি মিলবে না। পক্ষান্তরে যদি এমন হয় যে, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের ﷺ আনুগত্যের অহরহ লঙ্ঘন হচ্ছে, কোনো কষ্টই অনুভূত হচ্ছে না – তা বিরাট মুসিবত বটে!
ইনশাআল্লাহ চলবে…..
Last Updated on June 18, 2022 @ 10:30 am by IslamInLife বাংলা