আখলাক ও আত্মশুদ্ধি

ঈমানদারের জীবন: ক্রমাগত সংশোধন ও উন্নতির

প্রত্যেক মুমিন তার চিন্তা, ফিকির, নিয়ত, চেষ্টা, সাধনা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কে যথা সম্ভব আরো উচ্চ শিখরে উন্নীত করায় রত থাকে। তাইতো হাদীসে পাকে আছে, যার আজ ও কাল সমান হল, সে ক্ষতির মধ্যে আছে। আর আল্লাহর হাবীব ﷺ এই দোআ শিখিয়েছেন (অর্থ): হে আল্লাহ! আমাদের আজকের দিনটি গতকাল থেকে উত্তম বানিয়ে দিন এবং আমাদের আগামী কালকে আজকের থেকে উত্তম বানিয়ে দিন।

নিজের সংশোধনের উদ্দেশ্যে শুধু বেশি বেশি দোআ দিয়েই যদি আমরা সূচনা করি, আল্লাহ তাআলার ফযলে সেটা অনেক বড় ফল বয়ে আনতে পারে। দোআর প্রকৃতপক্ষে কোনো বিকল্পই নেই। যত চেষ্টাই করা হোক অথবা করা যাক, আর চেষ্টার যত পথই রুদ্ধ হয়ে যাক না কেন – দোআ সবক্ষেত্রে করতে হবে। দোআ হল ইবাদতের মগজ, দোআ হল মুমিনের হাতিয়ার। দোআ হল সমগ্র আলমসমূহের অধিপতি আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার অপূর্ব ও অতুলনীয় মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা নিজে তাঁর বান্দাদের দোআ করতে হুকুম করেছেন। যদি তিনি দোআ-র হুকুম না করতেন? তাও কি আল্লাহ তাআলার কাছে না চেয়ে বসে থাকতে পারতাম আমরা?! দোআ করা ছাড়া আমাদের কারোর কোন উপায়ই ছিল না।

সাথে সাথে স্মরণ রাখতে হবে, প্রিয় নবীজি ﷺ এর অনুকরণ ও অনুসরণের জীবন গঠনই সকল সফলতার চাবিকাঠি – আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের পরিপূর্ণ উপায়। উলামায়েকেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীন যত রকম উপদেশ আমাদের দেন, যত রিয়াযত-মুজাহাদা আমাদের দিয়ে করান বা যেগুলির উৎসাহ প্রদান করে থাকেন, সবগুলিই আল্লাহ তাআলার প্রিয় হাবীব ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গঠনের লক্ষ্যে – অন্য কিছু নয়।

নিজের মন-মস্তিষ্ক খাঁটিয়ে নিজের ঈমানী অবস্থা বুঝা যাবে না। প্রত্যেকে নিজের চেয়ে জ্ঞানে, গুণে, আমলে, আখলাকে উন্নত ব্যক্তির সাথে পরামর্শ ও আলোচনা করলে নিজ অবস্থা যাচাই করতে পারবে। সেজন্যই উলামা, মাশায়েখ ও বুযুর্গানের দ্বীনের কোনো বিকল্পই নেই। হ্যাঁ, প্রাথমিক অবস্থায় কেউ যদি দ্বীনি বন্ধু-বান্ধব, যারা উলামাদের সাথে সম্পর্ক রাখেন, তাদের সাথে উঠা-বসা করে, পরামর্শ করে – তাতে কিছু হলেও ফায়দা থাকে, সম্পূর্ণ খালি নয়।

দুনিয়ার কাজে তো আমরা আজ অনেক ব্যস্ত ও বিভোর; আবার এই কারণেও নিজের সংশোধনের পথে হুমকি আরো বেশি যে, ফিতনায় চারদিক সয়লাব। নিজের শেষ পরিণতি তথা আখেরাত-কে সামনে রেখে কাজ করতে চাইলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রতিকূল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পথ সংকীর্ণ তো নয়ই, বরং অত্যন্ত সুপ্রশস্ত। তবে সেই পথে চলা জানতে হবে, শিখতে হবে। সেই পথে চলতে জানলে, শিখলে ও যথাযথ চেষ্টা করলে, আখেরাতে তো বিরাট প্রতিদান আছেই, দুনিয়াই রহমত হয়ে যাবে। এই দ্বীনকে জানা ও শিখার মধ্যে ঘাটতিটা আজ খুব বেশি আমাদের। তা না হলে, নামাজ, রোযা – ইত্যাদি ইবাদত তো আমরা করি। অজ্ঞতা ছেয়ে গেছে বলেই আজ দ্বীন ইসলাম বলতে আমাদের (বেশির ভাগের) বাকি রয়েছে শুধু কিছু ইবাদত (তাও প্রাণহীন) এবং রসম-রেওয়াজ। দ্বীনের জ্ঞান থেকে দূরে নয়, বহু দূরে সরে গিয়ে ব্যাপকভাবে আজ মুসলমানদেরর সামাজিকতা, লেনদেন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বিজাতীয় অনুকরণ ও অনুসরণ!

রাসূলে কারীম ﷺ এর পবিত্র সীরাত আমাদের সামনে। হায়াতুস সাহাবা (রা) আমাদের সামনে। এগুলি নি:সন্দেহে হেদায়েতের চেরাগ। সর্বযুগেই উলামাগণ ও বুযুর্গানে দ্বীন খুলে খুলে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা করে আমাদের বুঝাচ্ছেন। উম্মতদরদী, মেহনতি, মুত্তাক্বী দ্বীনের ধারক ও বাহকগণ আজও রয়েছেন, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। আল্লাহ তাআলা এত সহজ ও সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন তাদের কাছ থেকে দ্বীন-ইসলামকে শেখার, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি অর্জনের পথকে সুগম করার – হায়! আমরা যদি এই নেয়ামতের কদর করতাম।

আসুন সঠিক ভাবে দ্বীনকে জানার পিপাসা তৈরী করি। দোআ করি আন্তরিকতার সাথে। অন্যের চিন্তা-আলোচনা বাদ দিয়ে আত্মসমালোচনায় ও আত্মসংশোধনে মনোযোগী হই। হে আল্লাহ! তোমার তাওফীকের মুখাপেক্ষী আমরা। (আমীন)

Last Updated on December 12, 2024 @ 9:11 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it