আসহাবে কাহাফের শিক্ষা: আমাদের বিপদেও মুক্তির উপায়
সূরা কাহাফ। জুম্মার দিন পড়া বিশেষ ফযিলতপূর্ণ।
সূরাটিতে কয়েকটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা বর্ণিত আছে। প্রধান ঘটনাটি আসহাবে কাহাফের, অর্থাৎ গুহাবাসীদের।
আমাদের প্রিয় নবী ﷺ-এর যুগের নয়, তার আরো আগের ঘটনা। সে ঘটনাটি আল্লাহ তাআলা নবীজি ﷺ-কে জানালেন।
কয়েকজন যুবক। তারা নিজ যুগের নবীর প্রতি বিশ্বাসী, খাঁটি ঈমানদার। হঠাৎ তাদের সামনে বিরাট পরীক্ষা। ঈমান ত্যাগ না করলে অত্যাচারী শাসকের কঠোর শাস্তি পেতে হবে! হয় ঈমান ছাড় অথবা তোমাদেরকে জালেম বাদশাহর সম্মুখীন হতে হবে। যুবকেরা কুফুর থেকে বাঁচার পথ খুঁজছিল। বাহ্যত কোনো পথ ছিল না। উপায়হীন হয়ে এক পর্যায়ে, ঈমান বাঁচানোর তাগিদে প্রত্যেকে নিজ পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। বের হয়ে গেল নিজ এলাকা আর শহর থেকে।
মানুষ যত দিশেহারাই হোক, সে ঈমানদার হলে তার জন্য মুক্তির পথ আছেই। আর সেই পথটি আমরণ খোলা থাকে। ঈমানদারের করণীয় হল সেটি অবলম্বন করা। তাহলেই মুক্তি ও সফলতা! এমন হবে না যে, ঈমানদার মুক্তির কোনো পথ পাবে না! এটি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ছাড়া কিছু নয়। হাঁ স্থান, কাল, পাত্রভেদে সে পথ ভিন্ন হতেই পারে এবং হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঈমানদারের জন্য পথ রেখেছেন।
তো সেই যুবকেরা যখন পথহারা, তখন তারা নিজেদের সাধ্যে যেটি ছিল সেটি করল, অর্থাৎ বের হয়ে গেল সেই স্থান ছেড়ে যেখানে থাকলে ঈমান সম্পূর্ণ হুমকির মধ্যে। আর তারপর তারা আল্লাহ তাআলার কাছে দোআ করল। সেই দোআটি সূরা কাহাফের ১০ নম্বর আয়াতে আছে:
إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
অর্থ: যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে তখন দোআ করে, হে আমাদের পালনকর্তা,আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন। সুরা কাহাফ:১০
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ৩০০ বছরের অধিক কিছু সময় একটি গুহার মধ্যে ঘুম পারিয়ে রাখলেন। তাদের সাথে একটি কুকুরকেও রাখলেন। এক দীর্ঘকাল তারা সেই গুহায় ‘এক ঘুমে’ অতিবাহিত করল!
চাইলে আল্লাহ তাআলা অন্য কোনো পথে মুক্তি দিতে পারতেন। কিন্তু তাদেরকে এভাবেই তিনি নিরাপদ রাখলেন। অবশ্যই এতে গভীর হেকমত রয়েছে! একটি শিক্ষা হল, যারা নিজেদের পুনরায় জীবিত হওয়া নিয়ে সন্দিহান তারা দেখুক। আল্লাহ তাআলা কোনো রকম ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অন্যান্য জৈবিক প্রয়োজন ছাড়াই তাদেরকে ঘুমের মধ্যে রেখে দিলেন। আমাদের কাছে বিস্ময়কর। আল্লাহ তাআলার কাছে মোটেই কঠিন নয়!
কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য এ ঘটনায় অনেক শিক্ষা রয়েছে। সূরা কাহাফের অন্যান্য ঘটনায়ও আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরতের শিক্ষা দিয়ে হুঁশিয়ার তিনি আমাদেরকে করেছেন। আল্লাহ তাআলার আশ্রয় যে কেমন, তাঁর কুদরত যে কতভাবে প্রকাশ পেতে পারে, তিনি যা চান তা যে বস্তু জগতে কত সূক্ষ্মভাবে বাস্তবায়িত হয়ে যাচ্ছে, ঈমানদার ও কাফের — সবার জন্য এ সূরার ঘটনাগুলোতে রয়েছে এসব শিক্ষা।
বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার বাণীই যথেষ্ট! দেখুন আল্লাহ তাআলা খোলাখুলি বলেছেন:
وَكُـلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ وَجَاءكَ فِي هَـذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ: আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই আপনাকে বলছি, যদ্দ্বারা আপনার অন্তরকে আমি মজবুত করছি। আর এভাবে আপনার নিকট এসেছে সঠিক ও সত্য বিষয় এবং ঈমানদারদের জন্য উপদেশ ও স্মারক। সুরা হুদ:১২০
আমাদেরকে পর্যায়ক্রমে কুরআন এমনভাবে পড়তে ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে যেন আমাদের জীবন কুরআন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই যেমন চিন্তা করুন, আমাদের কার জীবনে কোনো প্রতিকূলতা নেই?! প্রতিকূলতা তো আছেই, বরং কখনো এমন প্রতিকূলতাও তো চলে আসে যখন আমাদের মনে হয় যে এ থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ কোথায় (কোনো উপায়ই তো দেখছি না!)? আমরা ঈমানদার হলে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যও তাঁর পক্ষ থেকে মুক্তির পথ রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের চেষ্টার সঙ্গে যখন আন্তরিকভাবে দোআ হবে তখন দেখবেন আমাদের পক্ষে আল্লাহ তাআলার কুদরত কিভাবে পথ খুলে দেয়!
অতএব, কেন আমরা আসহাবে কাহাফের দোআটি পড়ব না? এ শব্দগুলো তো কবুল ও মকবূল শব্দ! সেজন্যই তো কুরআনে নাযিলকৃত দোআ!! অতএব, অবহেলা করা কত বড় মাহরূমি (বঞ্চনা)!?
Last Updated on March 21, 2023 @ 12:47 pm by IslamInLife বাংলা