আল্লাহ তাআলার একনিষ্ঠ ইবাদত ও তাঁর দানে সন্তুষ্ট হয়ে দোআর মাঝে মগ্নতায় প্রভূত কল্যাণ
আল্লাহ তাআলার হকুম মানার মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি। কিন্তু মুমিন যে আল্লাহ তাআলার হকুম মানে, তা কি আসলে শান্তি পাওয়ার জন্য?
শান্তি অর্জন করা আল্লাহ তাআলার ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য নয়। ইবাদতের উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা। শান্তি, স্বাদ বা মজা অর্জন করা নয়। ইবাদত তো হল আল্লাহ তাআলার হক।
বহু মানুষ “ইবাদত করলে শান্তি পাব” — এ কথার ওপর ভিত্তি করেই ইবাদত করতে থাকে। এক পর্যায়ে গিয়ে যখন দেখে, আরে শান্তির সে সুখ পাখি কই? কোনো শান্তিই তো মিলছে না; তাহলে রাখো, বাদ দাও ইবাদত।
ইন্না-লিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে এরকম ধ্যান-ধারণা থেকে রক্ষা করুন।
আমরা কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে তাঁর ইবাদত করতে থাকব। মুমিন ইবাদত বন্দেগি ও জাগতিক কাজ করা মধ্যে সবর ও শোকর অবলম্বন করতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য যা উত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তাঁর প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ সত্য। অবশ্য শান্তিও চাব — শান্তির জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোআ করব। কিন্তু আমরা ১টন শান্তি চাইলে তিনি ১ছটাক শান্তি দিলেও তাঁর ইবাদত ত্যাগ করা যাবে না। তিনিই মালিক। ইবাদত তাঁরই হক। আমরা তাঁর বান্দা। আমাদের কাজই তাঁর ইবাদত করা।
এ কথা শতভাগ সত্য যে, আল্লাহ তাআলার আদেশ মানার মধ্যেই মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি আসবে। কিন্তু ইবাদতের মধ্যে কেবল শান্তির সন্ধানে পড়ব না। একদনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে যাব ইনশাআল্লাহ৷
আল্লাহ তাআলার দান তো অপরিসীম। তিনি তো ওয়াহাব, না চাইতেই দেন। তিনি কারীম, অযোগ্যকেও দান করেন। তাঁর দান-অবদান পরিপূর্ণ বোঝার বোধশক্তি আমাদের নেই। অতএব, তাঁর শোকর করতেই হবে; তাঁর ইবাদতে একনিষ্ঠভাবে লেগে থাকতে হবে। এতেই দুনিয়া ও আখেরাতের প্রশান্তি ও সফলতা।
যখন আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে সুনির্দিষ্ট কিছু পাওয়ার মধ্যে আমরা প্রশান্তি ও সফলতা খুঁজব তখনই সমস্যা হবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বান্দার কল্যাণ অনুযায়ী তাকে দান করেন। প্রশান্তি হল আল্লাহ তাআলার গোলামি করে তাঁর দানে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যে।
হে আল্লাহ! এই মন আর শয়তান তোমার পথ থেকে যেন আমাদেরকে ছিটকে না ফেলতে পারে। তুমি আপন রহমতে আমাদেরকে রক্ষা কর, আমাদেরকে হাত ধরে পার করে দাও।
সালাত/নামাযের প্রতি রাকআতে আমরা পড়ে থাকি:
إِيَّاك نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
অর্থ: আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি, তোমার কাছেই সাহায্য চাই। সূরা ফাতিহা: ৫
আমাদের প্রিয় রাসূলে কারীম ﷺ কী দোআ শিখিয়েছেন দেখুন। কী অপূর্ব তাঁর অর্থ একটু লক্ষ করুন। দোআটি পড়ুন ও নিয়মিত পড়ে মুখস্থ করে ফেলুন ইনশাআল্লাহ।
اَللّٰهُمَّ إِنَّ قُلُوْبَنَا وَنَوَاصِيَنَا وَجَوَارِ حَنَا بِيَدِكَ، لَمْ تُمَلِّكْنَا مِنْهَا شَيْئًا، فَإِذَا فَعَلْتَ ذٰلِكَ بِهِمَا فَكُنْ أَنْتَ وَلِيَّهُمَا، وَاهْدِنَا إِلٰى سَوَاءِ السَّبِيْلِ
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের অন্তর, আমাদের ঝুঁটি ও আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আপনারই কব্জায়। এর কোনো কিছুর উপরই আমাদেরকে (পূর্ণ) ক্ষমতা দেননি। অতএব আমাদের সঙ্গে আপনি যখন এমনটিই করেছেন তখন আপনিই হোন আমাদের সাহায্যকারী এবং আমাদের প্রদর্শন করুন সৎ পথ। তিরমিযী
এছাড়াও, আমাদের প্রিয় রাসূলে কারীম ﷺ শান্তি, সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ দিয়ে দোআ শিখিয়েছেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِي وَمَالِي
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, এবং আমার দ্বীন ও দুনিয়ায়, আমার পরিবারবর্গ ও সম্পদে আফিয়াত (সুস্থতা, শান্তি ও নিরাপত্তা) দান কর। ইবনে মাজাহ
Last Updated on March 14, 2023 @ 12:36 pm by IslamInLife বাংলা