লাইস বিন সা’দ রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৭৫ হিজরী : ৭৯১ খৃস্টাব্দ)

যাঁর সততা বিদ্যুৎবেগে তাকে জান্নাতে নিয়ে গিয়েছিল। আখেরাতের গুপ্তভা-ার পাওয়ার লক্ষ্যে দুনিয়ার দিরহাম খরচ করেছিল। আলো ও জ্যোতির কলম দিয়ে নিজের জীবনগল্প লিখেছেন। মানুষ তাকে পেয়ে স্বস্তিতে কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ে ক্লান্ত। সব ধরনের খায়েশ, হাউস ও স্বাদ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। দান-অবদানে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন হয়েছিলেন। দানশীলতার লাগাম নিজের ডান হাতে ছিল। দিয়ারে মিসর তথা মিসর ভূ-খ-ের গৌরব। যাহিদ ও ফকীহ। দুনিয়াত্যাগী ও বিশিষ্ট ইসলামিক আইনজ্ঞ।
তিনি লাইস বিন সা’দ ইবনে আব্দুর রহমান আবুল হারিস। যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন। মিসর দেশের প্রধান আলেম। মুহাদ্দিস ও হাদীস বিশারদ এবং আল্লামা ও অনন্য সাধারণ আলেম।
খুরাসান বংশোদ্ভূত। কালকাশান্দা শহরে জন্মস্থান। অতি বড় দানশীল ও দাতা ছিলেন। লোকদের অভাব পূরণের লক্ষ্যে বসতেন। কেউ চাইলে তাকে ফিরিয়ে দিতেন না। যে কোন অভাবী লোকের আশ্রয় ছিল তার বাড়ি। শীতকালে খেজুর রস দিয়ে হারায়েস খাদ্য লোকদেরকে খাওয়াতেন। গ্রীষ্মকালে চিনি আর পেষা বাদাম দিয়ে ছাতু খাওয়াতেন।
হৃদয়জুড়ে গাম্ভীর্য ছিল। তখনকার যুগে আমীরগণ কারও জন্য কোন জমি জায়গিরদারি হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞাসা করে নিতো। ইমাম লাইসের বাৎসরিক আয় পঁচিশ হাজার দীনার ছিল। তিনি এগুলো খরচ করতেন। বছর শেষ না হতেই তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। কখনও তার উপর যাকাত ফরয হতো না। ইবনে ইউনুস বলেন, মিসরে ইমাম লাইস বিন সা’দের বিশাল ভূসম্পত্তি ও জোতজমি ছিল। সেটার নাম ছিল ফারমা। সেটার খাজনা আসতো অনেক। সেই খাজনা বস্তা ভরে আনা হতো। বাড়ির গেইটে বসে সেগুলো বিলাতে থাকেন। একজনকে এক বস্তা দিতেন। সামান্য রেখে সবগুলো দান করে দিতেন।
একদিন সকালে ইয়াহইয়া বিন বুকাইর রহ. লাইস বিন সা’দের নিকট গেলেন। গিয়ে দেখেন, লাইসের দোআরে দীনদরিদ্রের ভিড়। তিনি তাদেরকে দান করছেন। এক পর্যায়ে সবাইকে দান করেন। ইয়াহইয়া বলেন, এরপর তিনি পায়ে হেঁটে গেলেন। আমিও তার সাথে। সত্তর জন বিধবার বাড়িতে গেলেন। ফিরে এলেন। সাথে আমিও আছি। কাজের লোককে এক দিরহাম দিয়ে পাঠালেন। সে কিনে আসে রুটি আর যয়তুন। বাড়িতে এসে দেখি চল্লিশ জন মেহমান। তিনি তাদের জন্য গোস্ত আর মিষ্টান্ন নিয়ে আসেন। সকাল বেলায় কাজের লোককে বললাম, সত্যি কথা বলবে, এই রুটি আর যয়তুন কার জন্য? কাজের লোকটি বলল, লাইসের জন্য…(কী চমৎকার ব্যাপার!! নিজে খান রুটি আর যয়তুন আর অন্যদের জন্য) গোস্ত আর মিষ্টান্ন। মেহমানদের জন্য এমন আয়োজন।