রবীয়াতুর রায় রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৩৬ হিজরী : ৭৫৩ খৃস্টাব্দ)
যাঁর আদব ও শিষ্টাচারের প্রতি লোকজনের অলক্ষ্যে আমল হয়ে যেতো। ইয়াকিন ও সুদৃঢ় বিশ্বাসের উষ্ণতায় যাঁর হৃদয় ছিল টইটুম্বর। যুহদ ও দুনিয়াবিমুখিতার পাঠশালাসমূহের তিনি একটি পাঠশালা। যাঁর মৃত্যুতে ফিকহের স্বাদ ফুরিয়েছে। ইলমের সূযোদয় ও সূচনালগ্নে শিক্ষা-দীক্ষার যিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আবূ উসমান রবীয়া’ ইবনে ফাররূখ তামীমী মাদানী। মনীবের বংশসূত্রে তিনি তামীমী। তিনি একাধারে অসাধারণ আলেম, হাফিযে হাদীস, ফকীহ, মুজতাহিদ ও মূলনীতিনির্ভর মুসলিম গবেষক, দানশীল, মদীনার অন্যতম মুফতী। ইমাম মালিক রহ. যাঁর থেকে ফিকহ শাস্ত্র লাভ করেন।
জীবনের সিংহভাগ কাটান ইবাদত-বন্দেগীতে। দিবারাত্রিতে ইবাদত আর ধর্মকর্মে মশগুল থাকতেন। রবীয়া রহ. সম্পর্কে ইমাম মালিক রহ. বলেন, রবীয়া রহ. মারা যাওয়ার পর থেকে ফিকহ শাস্ত্রের স্বাদ শেষ হয়ে গেছে। এক ব্যক্তি রবীয়া রহ. এর নিকট এসে প্রশ্ন করলো, হে আবূ উসমান! যুহদের প্রাণ কী? তিনি বললেন, হালাল তরিকায় এবং বৈধ পন্থায় বিভিন্ন কিছু সংগ্রহ করে সেগুলো যথাস্থানে রাখা। (যাবতীয় গ্রহণ ও বর্জন বা উপার্জন ও খরচ হালাল তরীকায় ও বৈধ পন্থায় হওয়াই যুহদের মূলকথা)।
একদিন তিনি মাথা ঢেকে বসে আছেন। পরে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে লাগলেন। এক পর্যায়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। জিজ্ঞাসিত হলেন, কাঁদেন কেন? ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললেন, বাহ্যিক রিয়া ও লৌকিকতা, গোপনীয়ভাবে খায়েশ ও প্রবৃত্তিপূজা। সাধারণ মুসলমানগণ খুবই নিরাপদ। মায়ের কোলে শিশুরা যেমন উলামা কেরামের কাছে সাধারণ লোকজন তেমন। তাদেরকে যা কিছু করতে নির্দেশ দেওয়া হয় তারা তা করে। উলামা কেরাম যা করতে নিষেধ করেন তারা তা পরিহার করে। (তাদের মধ্যে গরিমা ও লৌকিকতার কোন উপসর্গ নেই)।
শাসকবর্গের দিরহামের কাছে নিজের মাথা কখনও নত করেননি। জীবনভর হক্বের আওয়াজ বুলন্দ করে গেছেন। আমীরুল মুমিনীন আবুল আব্বাসের নিকট হযরত রবীয়া আগমন করেন। বাদশাহ আবুল আব্বাস হযরত রবীয়া রহ. এর ইলম ও মর্যাদার খাতিরে পুরস্কার লিখে দিলেন। কিন্তু রবীয়া রহ. তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। পরে বাঁদী কেনার জন্য পাঁচ হাজার দিরহাম দেওয়ার কথা বললেন। কিন্তু তিনি তাও নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যেভাবে খালিহাতে গেলেন ঠিক সেইভাবে ফিরে এলেন।
তিনি দানশীল, মর্যাদাবান, খান্দানী এবং বুদ্ধিমান ছিলেন। অসুস্থ হলে লোকজন তাকে দেখতে তার বাড়িতে আসতো। তিনি তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করতেন। যতদিন বাড়িতে অসুস্থ থাকতেন ততদিন লোকজন আসতে থাকতো এবং তিনিও তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করে রাখতেন। আম্বার এলাকায় তিনি হিজরী ১৩৬ সালে মারা যান।