মা’রূফ আলকারখী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ২০০ হিজরী : ৮১৫ খৃস্টাব্দ)

শাহি হৃদয় নিয়ে জীবন যাপন করেছিলেন এবং নিঃস্ব শরীর নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। যাঁর দোআ ছিল আকাশের বন্ধন। দুনিয়া থেকে চলে গেলেন নিঃস্ব অবস্থায়। যেভাবে দুনিয়ায় আসলেন ঠিক তেমনিভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। পরিচ্ছন্ন মেধাবী হৃদয়জুড়ে খোদাভীতি টইটুম্বর ছিল। নিষ্ঠাবান ও সাচ্চা ঈমানদার। শীর্ষ যাহিদদের মধ্যে তিনি একজন। সময়ের তিনি বরকত। তিনি আবূ মাহফূয মা’রূফ ইবনে ফাইরূয আলকারকী। বেশি বেশি রোযা রাখতেন। দোআ করলে গৃহীত হতো। কোন দোআ বাদ যেতো না। তার দোআর দোহাই দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হতো।
বাগদাদের ‘কারখ’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। বহুত ইলমের অধিকারী ছিলেন। আত্মস্থ করার ক্ষমতা ছিল প্রচুর। বর্ণনার চেয়ে ইবাদতে সময় দিতেন বেশি। সততা, যুহদ এবং তাকওয়া গুণের জন্য খ্যাতি লাভ করেন। বিপদাপদের কারণে তখনকার মানুষের মাঝে ইমাম হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। গীবত ও পরনিন্দা সরোবরে পা বাড়াতে বড় অপছন্দ করতেন।
সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন, ‘সেই শহরের অধিবাসীগণ সুখে ও কল্যাণে থাকবে যতদিন তাদের মাঝে আবূ মাহফূয কারখী থাকবে।’ মারূফ কারখী রহ. এর দৃষ্টিতে দুনিয়া একেবারে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ছিল। হিকমতের সায়রে অবগাহন করেছেন এবং দুনিয়া সারাংশ বের করে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছেন, দুনিয়া তো কেবল একটি ফুটন্ত হাঁড়ি এবং পরিত্যাক্ত টয়লেট। তিনি আরও বলেছেন, আমল ছাড়া জান্নাত চাওয়া একটি গুনাহ। কারণ (ওসিলা) ছাড়া সুপারিশের এন্তেজার করা এক ধরনের ধোঁকা।
একদিন মা’রূফকে জিজ্ঞাসা করা হল, হৃদয় থেকে দুনিয়া বের করেন কীভাবে? তিনি বললেন, বস্তুনিষ্ঠা ভালোবাসা এবং সদাচরণ। একদিন তিনি আসরে বসে আছেন। বাদশাহ’র আলোচনা করলেন। বললেন, হে আল্লাহ! তুমি যার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে চাও না আমাকে তার মুখম-ল দেখিও না। এক লোক তার নিকট গিয়ে বসল। এরপর লোকটি মানুষের গীবত করতে শুরু করে দিল। মা’রূফ রহ. বললেন, তুলার কথা স্মরণ করুন তারা যখন সেই তুলা আপনার চোখের উপর রাখে।
সব ধরনের কল্যাণ ও ভালো কাজের প্রতি লালায়িত ছিলেন। সব দোআর ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। যে কোন আহ্বানকারী আহ্বানে সাড়া দেওয়ার প্রবণতা ছিল। একবার তিনি রোযাদার। হেঁটে যাচ্ছে সাকি। সে বলছে, যে পান করবে আল্লাহ তাআলাকে রহম করবেন। এ কথায় তিনি নিজেও পান করলেন।
তাঁর আওয়াজ শোনার জন্য আকাশবাসীরা উদ্গ্রীব। তিনি আওয়াজ করলেই সাড়া দিতে তারা তৎপর। এক প্রচ- তাবদাহে কিছু লোকের জন্য দোআ করলেন। হাত তোলা অবস্থায় বৃষ্টি নামতে শুরু হল।
অল্প আশা দিয়ে ইখলাসের সেরা অংশ খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা তার মাঝে পরিলক্ষিত হয়েছিল। একদিন মারূফ নামাযের ইকামত দিলেন। পরে ইবনে আবী তাওবাকে বললেন, তুমি এগিয়ে যাও। সে বলল, আমি যদি আপনাদের নিয়ে নামায পড়াই তাহলে পরবর্তীতে আপনাদের নিয়ে কোন নামায আমি পড়াবো। মা’রূফ বললেন, তোমার মনে কী করে আসলো যে, তুমি আরও নামাযও পড়াবে? দীর্ঘ আশাবাদ সম্পর্কে তোমার মনের যে অবস্থা তা থেকে তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাও। কারণ দীর্ঘমেয়াদি আশা ভালো কাজ করতে দেয় না।
দুনিয়ায় যেভাবে নিঃস্ব অবস্থায় এসেছিলেন ঠিক যাওয়ার সময়ও তেমন ছিলেন। দুনিয়ার নিগড়ে নিগড়িত হননি। মৃত্যুশয্যায় তিনি শায়িত। বলা হল একটু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আমার এই অবস্থায় মৃত্যু হলে তোমরা আমার এই জামাটি দান করে দিও। কারণ আমি দুনিয়া থেকে বস্ত্রহীন অবস্থায় যেতে চাই। যেভাবে দুনিয়ায় আসার সময় বস্ত্রহীন ছিলাম যাওয়ার সময়ও তেমন বস্ত্রহীন থাকতে চাই।

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it