দাইগাম বিন মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৮০ হিজরী : ৭৯৬ খৃস্টাব্দ)
যাঁর যুহদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কান্না আর কান্না। ইবাদতের স্বাদ হৃৎপি-কে আস্বাদন করিয়েছিলেন। চোখের পানিতে আত্মা প্রক্ষালিত ব্যক্তি। অশ্রুবিধৌত হৃদয় যার। সালাত যার পৃষ্ঠদেশ সোজা করে দিয়েছে। পিঠের ঋজুতা সৃষ্টি হয়েছে নামাযের মাধ্যমে। জাহান্নামের আলোচনা যাকে আনন্দ করতে দেয়নি। দোযখের চিন্তায় বিনোদন বঞ্চিত এক ব্যক্তি। হৃদয়কম্পিত একজন মানুষ। ভীতসন্ত্রস্ত ইনসান। তিনি আবূ বকর দাইগাম ইবন মালিক রাসী বসরী। অনুকরণীয় যাহিদ। আল্লাহ ওয়ালা বুযর্গ। তাবেঈন থেকে ইলমে দ্বীন হাসিল করেছেন। দিবারাত্রিতে তার ওযিফা ছিল চারশত রাকাত নামায। ভীতসন্ত্রস্ত ও কান্নাপ্রবণ লোকদের তিনি একজন।
ইবনে মাহদী বলেন, সততা, মানসিক পরিচ্ছনতা এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে দাইগামের মতো মানুষ আমি দেখিনি। এক রাতে আকাশে ঈমানের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল। দাইগাম বিন মালিক মনিব আবূ আয়্যূবের নিকট বসে বসে হাদীস শুনাচ্ছিলেন। দাইগাম বলেন, যদি জানতে পারি যে, শরীরের গোস্ত কেটে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে তাহলে কাঁচি দিয়ে আমার গোস্ত কেটে ফেলতাম।
কান্নাপ্রবণ এক ব্যক্তি। বেশি বেশি রোনাজারি করতেন। চোখের জলে নয়ন ভাসতো সবসময়। তার আম্মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, দাইগাম, মৃত্যু তোমার পছন্দনীয়? উত্তরে বললেন, না। আম্মু। মৃত্যু আমার শখের নয়। মা বললেন, কেন বাছাধন? বললেন, আমার গাফলতি অনেক, আমার উদাসীনতা বহুত। তার মাও কাঁদলেন ছেলেও কাঁদলেন। এরপর ঘরের অন্য সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
মালিক বিন দাইগাম বসে আছে হাকাম বিন নূহ এর নিকট। হাকাম জবান খুলতে শুরু করলো। দাইগামের সুরভিত জীবনী নিয়ে আলোচনার অবতারণা করতে লাগলো। আলোচনার এক প্রসঙ্গে বললেন, আমরা কয়েকজন তোমার বাবার সাথে সমুদ্র সফরে ছিলাম। একরাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি শুধু কাঁদতে রইলেন। কোন সিজদা করেননি এবং রুকুও করেননি। সকাল বেলায় আমি তাকে বললাম, আবূ মালিক, সারা রাত নামাযও পড়লেন না, কোন দোআও করলেন না। দীর্ঘ সময় ধরে শুধু কাঁদলেন আর কাঁদলেন। এ কথা বলার পর আবার কতক্ষণ কাঁদলেন। কান্না থামলে চোখের পানি মুছলেন। বললেন, মানুষ যদি জানতো আগামী দিন কী হবে তারা কখনও জীবন নিয়ে ফুর্তি করতো না।
কসম খোদার! যখন রাত দেখলাম, রাতের ভয়াবহতা দেখলাম এবং অন্ধকারের তীব্রতা দেখলাম তখন আমি আগামী দিনের অবস্থান নিয়ে স্মরণ করলাম। সেখানকার সঙ্গিন অবস্থা মনে করলাম। প্রত্যেক ব্যক্তি সেদিন নিজেকে নিয়ে মহাব্যস্ত থাকবে। পিতা নিজ সন্তানের কোন কাজে আসবে না। সন্তানও কোন উপকারে আসবেনা তার পিতার। (সূরা লুকমান, আয়াত : ৩৩)
এ কথা বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। মনে হল লবেজান হওয়া অবস্থা। যথারীতি কাঁপতে লাগলেন। একদিন তার মা ডাকলেন, দাইগাম!! ক্ষীণকণ্ঠে আওয়াজ দিলেন, জি, মা। বললেন, আল্লাহ তাআলার দরবারে যাওয়ার উপলক্ষ্যে কেমন আনন্দ লাগে? এ কথা শোনে দাইগাম প্রচ- আওয়াজে চেঁচিয়ে ওঠলেন। পড়ে গেলেন বেহুঁশ হয়ে। মা বসে কাঁদতে লাগলেন। বললেন, তোমার সামনে পরওয়ারদেগারের কোন কথা বলতে পারবো না।
মহান এই যাহিদ ও সাধক হিজরী ১৮০ সালে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। আরেক ইবাদতগুজার বুসর ইবনে মানসূরও একই দিন চলে গেলেন। দুনিয়ায় চলেছেন দু’জনে বন্ধুত্বের হাত ধরে। পরকালেও চলে গেলেন এভাবে হাত ধরে। [থাকো নিরাপদে, বিশ্রাম কর দু’জনে!! নিকষিত মানুষের সফলতার হাতছানি আমাদের জন্যও বরাদ্দ দাও! হে মাওলা! হে পরওয়ারদেগার!! তুমিই করুণাময়!! তুমিই দয়াময়!!]