আব্দুস সামাদ ইবনে উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ৩৯৭ হিজরী : ১০০৬ খৃস্টাব্দ)
শয়তানের অংশ নেই যে ব্যক্তির মাঝে। শয়তানের প্রভাবমুক্ত এক মনীষী। মৃত্যু যাঁর সাথে হাসিমুখে আলিঙ্গন করেছিল। নিজের যা কিছু থাকতো লোকদেরকে দিয়ে দিতেন; কিন্তু মানুষের কাছে কী আছে তা জিজ্ঞেস করতেন না। তিনি আবুল কাসেম আব্দুস সামাদ ইবনে উমর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক। বিখ্যাত ওয়ায়েয ও বক্তা। যাহিদ ও সৎপরায়ণ। সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করা যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিনয়ী এক ব্যক্তি। মানুষ কথা বললে নিজেকে আসরে প্রকাশ করতেন না।
অনেক সংযমী ও লাজুক ছিলেন। কারও নিকট হাত পাততেন না। কারও থেকে কোন কিছু গ্রহণ করতেন না। একদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে গল্প করছেন। তাদেরকে দুনিয়ার হালত শুনাচ্ছেন। ইতোমধ্যে জনৈক দানশীল ব্যক্তি তাকে দেওয়ার উদ্দেশে একশত দীনার নিয়ে হাজির। আব্দুস সামাদ নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার দরকার নেই। লোকটি বলল, এসব দীনার এখানে উপস্থিত আপনার সঙ্গী-সাথীদের মাঝে বিলিয়ে দিন। আব্দুস সামাদ বললেন, তাহলে এগুলো মাটিতে রেখে দিন। লোকটি একশত দীনার উপস্থিত লোকদের সামনে রেখে গেল। আব্দুস সামাদ বললেন, যার যতটুকু প্রয়োজন সে সেই অনুপাতে নিয়ে যাক।
লোকজন তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনমাফিক দীনার নিয়ে যাচ্ছে। তিনি তাদের মাঝে সেগুলো বিলিয়ে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে আব্দুস সামাদের ছেলে এসে হাজির। সে তার বাবার কাছে খেজুর কিনে দিতে বলছে। তখন তার কাছে কোন অর্থকড়ি ছিল না। তিনি ছেলেকে বললেন, এই সবজিবিক্রেতার কাছে যাও। তার থেকে এক চতুর্থাংশ রিতিল খেজুর নিয়ে যাও। তিনি খেজুর বাকিতে কিনলেন। কিন্তু হাদিয়া দেওয়া দীনার থেকে সামান্যও গ্রহণ করলেন না।
দিন যায় মাস যায়। সময়ের আবর্তনে ঘুরে আসে ঈদের সময় ও দিন। যেখানে অন্যদের দিনকাল সুসময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় সেখানে তার ঘর খাবার ও আহার্য থেকে সম্পূর্ণ খালি। এক লোক কিছু দিরহাম নিয়ে হাজির। বলল, এগুলো নিন। হাসি দিয়ে তিনি বললেন, মিয়া! দোহাই লাগে। এগুলো নিয়ে যাও। ধনীরা যেভাবে প্রাচুর্য ও ধনৈশ্বর্যে মজে থাকে আমি আজ দারিদ্র্য নিয়ে মজে থাকবো।
আব্দুস সামাদ নিজের শাগরিদ ও সঙ্গী-সাথীদেরকে আমল, কষ্ট-মুজাহাদা এবং আখেরাতের খোঁজে থাকতে অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি বলতেন, তোমরা তো দুনিয়া পাওনি। সুতরাং আখেরাত হাতছাড়া কর না।
তার হৃদয়রাজ্যে ঈমান আসন গেড়ে বসেছিল। আল্লাহ তাআলা ভা-ারের প্রতি অগাধ আস্থা ছিল। এইতো আব্দুস সামাদ বিছানায় ঘুমাচ্ছেন। মাওলার সাথে দেখা করার অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। যখন তিনি দুনিয়ার শেষ সময় এবং আখেরাতের শুরু পর্বে হাজির তখনই তার কাছে প্রবেশ করল উম্মুল হাসান বিনতুল কাযী। ঐ মহিলা তাকে দেখাশোনা করতো, খেদমত করতো। সে বলল, দোহাই লাগে, আপনি আমার কাছে কোন প্রশ্ন করছেন না কেন? তিনি বললেন, বেটি! জীবদ্দশায় যেভাবে আমার সাথে ছিলে আখেরাতে সেভাবেই থাকবে। সে বলল, থাকবো, ইনশাআল্লাহ!
একথা বলে নীরব হয়ে গেলেন। বারবার ইস্তেগফার পড়তে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেন, তোমার জন্য আল্লাহ তাআলাই উত্তম। পরবর্তীতে দুঃখ-বেদনা বেড়ে গেলে তিনি বলতে লাগলেন, ইয়া সাইয়্যিদী! এই দিনটির জন্যই তো ইবাদত-বন্দেগী করেছিলাম। এই মুহূর্তের জন্যই সঞ্চিত করেছিলাম। মাবুদ! তোমার ব্যাপার আমার বিশ্বাসকে বাস্তবমুখী কর। একথা বলে তিনি দুনিয়া থেকে চলে গেলেন। হিজরী ৩৯৭ সালে বসরা নগরীতে তিনি মারা যান।