ইস্তেকামাত অর্জনের প্রাথমিক ধাপ
ইস্তেকামাত। মানে, দৃঢ়তা। আল্লাহর পথে দৃঢ় ও অবিচল থাকা। কখনো তাঁর দিকে ঝুঁকব আর কখনো অন্য কিছুর বা কারো দাসত্ব করব — এটা করা যাবে না। চরম ও পরম গোলামী কেবল আল্লাহ তাআলারই করতে হবে। সবকিছুর মূল ও উদ্দেশ্য আল্লাহ। মুমিনের ভরসাস্থল একমাত্র আল্লাহ। সব অবস্থাতেই এটি অপরিবর্তনীয়।
দৃঢ়তার সঙ্গে নেক আমল করে যেতে হবে। অর্থাৎ, যে পথে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কেবল সেই পথে চিন্তা ও চেষ্টা করে যেতে হবে। সেটি হোক সালাত-সিয়াম সংশ্লিষ্ট কিংবা পারিবারিক, লেনদেন, আচার-আচরণ সংশ্লিষ্ট। সবকাজে নিয়ত ও প্রচেষ্টা হবে আল্লাহ তাআলা নির্দেশিত পথে। ভুল-ত্রুটি বা গুনাহ হয়ে গেলে তার জন্য তওবা-ইস্তেগফার করে এগিয়ে যেতে হবে। হত্যোদম না হয়ে আল্লাহর পথ আঁকড়ে ধরে চলতে থাকতে হবে।
দৃঢ়তা একবারে আসবে না ঠিক, কিন্তু সবসময় দৃঢ়তা অর্জনের চেষ্টা করে যেতে হবে। এর ফলে একদিন দৃঢ়তা আসবে ইনশাআল্লাহ। অস্থির হয়ে হাল ছাড়তে নেই। ভুল হবে, কষ্ট হবে। মন ছুটে যাবে। কিন্তু আবার শুরু করতে হবে। এটিও কম নয়। আল্লাহর পথে সাধনা তো চলছে, এটি অনেক প্রশংসনীয়। নেককাজে লেগে থাকার চেষ্টা করা – এটিই প্রাথমিক কাজ। এটিও এক প্রকার দৃঢ়তা। কখনো কখনো বান্দার জন্য এটিই উত্তম। কারণ এতে আমাদের আমলের ভিত্তি মজবুত হয়। নিয়ত পরিশুদ্ধ হয়। গর্ব-অহংকার হ্রাস পায়। অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়। ধীর-স্থিরভাবে আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়ার মধ্যে বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
নিজে থেকে কোনো ভালো অবস্থা অর্জনের সময়সীমা ঠিক করা ও তার পিছু পড়া মোটেই বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়। বরং মধ্যমপন্থায় কাজ করে যেতে হবে। আমাদের নফস বা মন খুব চতুর। তার থেকে কাজ নেওয়া সহজ নয়। কখনো এমন হতে পারে যে একসাথে অনেক কষ্ট করে ফেললে সে আর বোঝা নিতে চাবে না। তাই যতটুকু নফল আমল আমাদের পক্ষে করা সহজে সম্ভব তা নির্ধারণ করে করতে থাকা উচিত। এতে নিয়মিত নেক আমল হয়। অন্তর অস্থির হয় না। অবশ্য ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি করাও উচিত।
দৃঢ়তা অর্জনের লক্ষে একটি সহজ সরল রুটিন করুন। কখন কোন কাজ করবেন নোট করুন। মাসখানেক পর্যবেক্ষণ করুন। না হয় রুটিনটি আবার একটু পরিবর্তন করে কাজ করুন। এভাবে ইনশাআল্লাহ সাধ্যের মধ্যে সহজ একটি রুটিন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। দৈনিক তেলওয়াত, যিকির, দোআ, দ্বীনি বই পাঠ ইত্যাদি সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
মানুষ যখন গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা-ফিকির শুরু করে এবং নেক আমলে অগ্রসর হওয়ার জন্য কিছু প্রচেষ্টা শুরু করে, আল্লাহ তাআলা সাহায্য করেন। এটি তাঁর প্রতিশ্রুতি। আমাদের উচিত গুরুত্ব দিয়ে নেককাজ শুরুর চিন্তা করা এবং সেই অনুযায়ী রুটিন করে আমল শুরু করে দেওয়া। সঙ্গে করা উচিত দোআ। আল্লাহ তাআলাকে বলব, হে আল্লাহ! এগুলো তো আসলে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টামাত্র। তোমার রহমত ছাড়া এক চুলও কিছু হবে না। তুমি সাহায্য কর আমায়।
পরিশেষে, রাসূলে কারীম ﷺ-এর একটি হাদীস পড়ুন। অর্থ: সঠিকভাবে, আন্তরিকতার সঙ্গে এবং মধ্যমপন্থায় নেক কাজ করে যাও এবং জেনে রাখ যে, তোমার আমলসমূহ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না, আর আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হল যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা (পরিমাণে) অল্প। (বুখারী)
রাসূলে কারীম ﷺ-এর হাদীসটি আমাদের মনের জন্য প্রশান্তিময় নয়?! আমরা সাধ্যানুযায়ী নিয়মিত কিছু আমল করে যাই না। ইনশাআল্লাহ বেড়া সহজেই পার হবে।
Last Updated on March 7, 2023 @ 11:56 am by IslamInLife বাংলা