নেক মানুষের কথার প্রভাব
বুঝে আসুক বা না আসুক, ভাল লাগুক বা না লাগুক, আমি আল্লাহ তাআলার পথে চলতে থাকব। নবীজি ﷺ-কে অনুসরণ ও অনুকরণে চেষ্টা চালিয়ে যাব। আলেমগণকে ভালোবাসব, তাদের কথা শুনতে থাকব, মানতে থাকব। এটি সাধারণ একটি উপদেশ। কিন্তু প্রতিটি উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশ।
দ্বীন তথা ইসলামের গুঢ় তত্ত্ব ও বিস্তারিত জ্ঞান একবারে আসে না, আসার প্রয়োজনও নেই। আবার সবার জন্য তা অর্জন করাও জরুরি নয়। শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি জানাটা সবার জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এবং মৌলিক জ্ঞানগুলোকে ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ মনে করার কোনো অবকাশই নেই। কেউ যতই অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ আলেম হোক না কেন, তার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য (দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান তো তার অবশ্যই আছে। এজন্যই তিনি আলেম)। আন্তরিকতা বা ইখলাস, যেটা মনের এমন একটি অবস্থা, যা মুমিন যেকোনো কাজ করার সময় ‘আল্লাহর জন্যই করছি’ এই উপলব্ধি সবার ওপর স্থান দেয়। এর মূল্য এত বেশি যে, অনেকক্ষেত্রে শুধু এতটুকুই আল্লাহর পথে কোনো নেক কাজ কবুল হতে সহায়ক হয়। যখন আল্লাহর পথে চলতে আন্তরিকতার সঙ্গে একটু সাধনা করা হয়, তখন দায়িত্ব আল্লাহ তাআলাই নিয়ে নেন।
মুফতী তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ বড় দরদের সঙ্গে হাকীমুল উম্মত মাওলানা থানভী رحمة الله عليه -এর একজন খলিফার একটি ঘটনা বলেছেন। উনার নাম বাবা নজম আহসান رحمة الله عليه। তিনি তেমন বিশেষ কোনো মজলিস করতেন না; ছোট্ট একটা কামরায় বসে থাকতেন। মানুষ তার কাছে আসত, তিনি দু-এক কথা উপদেশ স্বরূপ বলতেন।
একদিনের ঘটনা। এক স্বাধীনচেতা টগবগে যুবক ওই আলেমের নিকট আসলো। দেখলে তার সম্পর্কে আন্দাজ করা যায় যে, বর্তমানকালে সাধারণ রীতি রেওয়াজ যেমন হয়ে থাকে, সে বেচারা সেভাবেই জীবনযাপন করছে। যুবকটি এসে হযরতকে বলল, তার কোনো এক আত্মীয় কিছু দিন পূর্বে হুজুরের এখানে এসেছিলেন। তিনি একটি কলম ফেলে গেছেন। নজম আহসান رحمة الله عليه সেই কলমটি বের করে যুবকের হাতে দিলেন। যুবক কলমটি নিয়ে ফেরত যেতে লাগল। হযরত তাকে ডেকে বললেন, ভাই একটা কথা শুনে যাও। যুবকটি ডাক শুনে হযরতের কাছে বসল। তিনি যুবককে বললেন, এই যে দ্বীনের ওপর চলা – এটা কঠিন কিছু না। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে একটু তওবা-ইস্তেগফার করে নিলেই চলে। এতুটকুই কথা। বড় কোনো উপদেশ সম্বলিত কথা নয়, বা ওয়াজ নয়।
আল্লাহ পাকই জানেন এই কথার কী প্রভাব সেই যুবকের উপর পড়ল। পরে জানা গেছে, হযরতের এই একটি উপদেশ সেই যুবকের জীবন সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেই যুবক নেক মুসলমান বনে গিয়েছিল। মূলত নেক ব্যক্তির কথার প্রভাবে এমনটি হয়েছে।
একজন আল্লাহওয়ালা ও একজন সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা – উভয় উদাহরণই এ ঘটনায় বিদ্যমান। আমরা আল্লাহ তাআলার পথে চেষ্টা-তদবীর করতে থাকলে তার ফল আল্লাহ আমাদের দিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
Last Updated on September 5, 2022 @ 12:39 pm by IslamInLife বাংলা