আব্দুল্লাহ্ইবনে ইদ্রীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৯২ হিজরী : ৮০৮ খৃস্টাব্দ)
কল্পনাসদৃশ কীর্তিমান জীবন যাঁর। তাকওয়ার জগতে তিনিই তাঁর উদারহণ। অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। বাড়িতে বসে চার হাজার বার কুরআন খতম দিয়েছিলেন। (কোন কিছু চেয়ে) কারও প্রতি যার হাত সম্প্রসারিত হয়নি। সাদামাঠা জীবনযাপন করতেন। সর্বাধিক মোটা কাপড় পরিধান করতেন। রাজা-বাদশাহ’র চেয়ে বেশি যার ইজ্জত-সম্মান ও সমীহ ছিল। আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তি। ইমামুল মুসলিমীন। মুসলিম জাহানের কর্ণধার। তিনি আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইদরীস আওদী কুফী। হাফেযে হাদীস শ্রেণিভুক্ত মহামনীষীদের সারিতে তিনিও একজন। ইবাদতগুজার এবং বর্ণিত হাদীসের ক্ষেত্রে প্রামাণ্য ব্যক্তি।
ভক্তিমিশ্রিত এক দীপ্তি এবং পরিতুষ্টি আরোপিত গাম্ভীর্যম-িত এক ব্যক্তি। ইমাম মালিকের সাথে বন্ধুত্ব ছিল। মদীনাবাসীরা যার মাযহাব ও মতাদর্শ গ্রহণ করেছিল। বাদশাহ হারূনুর রশীদ তাকে বিচারপতি বানানোর প্রস্তাব করেছিলেন; কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ইবনে ইদরীদ একজন অদ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। ইবনে আরাফা বলেন, কুফা নগরীতে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ আমি দেখিনি। হাসান বিন রবী রহ. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইদরীসের যুহদ ও তাকওয়া সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন। বলছেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীসের সাথে ছিলাম। চলে আসার সময় তিনি আমাকে বললেন, তুমি কিছু মশকের মূল্য চেয়ে নিও। পরক্ষণে মানা করলেন। বললেন, চাইবে না। কারণ তুমি আমার থেকে হাদীস লিখে থাকো। আমার কাছে এটা অপছন্দনীয়, যে আমার থেকে হাদীস শোনে সে কিছু চাইবে।
ইবনে ইদরীদ রহ. বাদশাহ হারূনুর রশীদের নিকট গেলেন। বাদশাহ বললেন, জানেন কেন আপনাকে ডাকছি? তিনি বললেন, না। হারূনুর রশীদ বললেন, আপনার এলাকার লোকেরা আমার কাছে একজন বিচারপতি চেয়েছে। তারা কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেছে। তাদের মধ্যে আপনিও রয়েছেন। আমার মনের ইচ্ছে, আপনি আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করবেন। জাতির করণীয় কল্যাণমূলক কাজে আপনিও আমার অংশীদার। আপনি দায়িত্ব নিন এবং বিচারকাজ শুরু করুন।
ইবনে ইদরীস বললেন, এ কাজের জন্য আমি যোগ্য নই। বাদশাহ হারূনুর রশীদ রেগে গিয়ে বললেন, আপনার সাথে দেখা না হলেই ভালো হতো!! ইবনে ইদরীস বললেন, আমার জন্যও ভালো হতো যদি আপনার সাথে আমার দেখা না হতো। এ কথা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন। বাদশাহ হারূনুর রশীদ পাঁচ হাজার দিরহাম ভর্তি একটি ব্যাগ পাঠালেন। লোক পাঠিয়ে বললেন, আমীরুল মুমিনীন আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তিনি আপনাকে বলছেন, এসব মুদ্রা আপনি সফরে খরচ করুন; কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীস রহ. প্রত্যাখ্যান করলেন। কোন কিছুই নিলেন না। হারূনুর রশীদ চিরকুট পাঠালেন। তাতে লিখা ছিল, আল্লাহ তাআলা আপনাকে এবং আমাদেরকে নিরাপদে রাখুন। আপনাকে অনুরোধ করলাম আমাদের কাজে অংশগ্রহণ করতে কিন্তু আপনি তার করলেন না। আপনাকে অর্থকড়ি দিলাম তাও গ্রহণ করলেন না। আমার ছেলে মামুন আপনার নিকট পড়তে আসবে আল্লাহ চায় তো সেটা করবেন। তাকে হাদীস শেখাবেন।
তিনি বার্তাবাহককে বললেন, অন্যদের সাথে মামুন আসলে ইনশাআল্লাহ পড়াবো। ইবনে ইদরীস যখন মৃত্যুমুখে পতিত হলেন এবং প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয় তার মেয়ে কাঁদলো। তিনি বললেন, বেটি! কেঁদো না। এই ঘরে চার হাজার বার কুরআন খতম করেছি। কুফা নগরীতে ১৯২ সালে তিনি মারা যান।