আব্দুল্লাহ্ উমারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৮৪ হিজরী : ৮০০ খৃস্টাব্দ)
আলো ও নূরের কালি দিয়ে ইতিহাস যার নামটি লিখেছে। সোনার আখরে যান নামটি ইতিহাসে খোদাইকৃত। যাঁর প্রভাবে রাজা-বাদশাহদের সিংহাসন কেঁপেছে। যাঁর অপরিসীম তাকওয়া এক হাজার গুনাহগার লোকের মাঝে বিতরণ করে দিলে তারা সবাই বুযর্গে পরিণত হয়ে যাবে। দুনিয়ায় তিনি আল্লাহ তাআলার জন্য হয়েছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছেন আল্লাহ তাআলা যেন তার জন্য আখেরাতে হয়ে যান। স্বপ্নীল সত্য কথাবার্তা তিনি বলতেন। যে কথাগুলো কর্ণকুহরে বজ্রনিনাদের মতো ধ্বনিত হতো। তিনি আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ্। বিখ্যাত শাস্ত্রবিশেষজ্ঞ, আদর্শ অনুকরণীয়, যাহিদ ও ইবাদতগুজার ব্যক্তি। ঈমান ও বিশ্বাসে ভরা এক ব্যক্তি।
মুত্তাকী এবং আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক মনীষী। নিজের জন্য ব্যস্তসমস্ত একজন মানুষ। হাদীস বর্ণনা করতেন কম। সত্য কথা বলতে বেশ পারঙ্গম ছিলেন। আল্লাহ তাআলার হকের ব্যাপারে নিন্দুকের নিন্দা পাত্তা দিতেন না। বাদশাহ হারূনুর রশীদ তাকে সমীহ করতেন এবং তাকে নিয়ে শঙ্কিত থাকতেন। শাইখ উমারী বাদশাহ’র দরবারে গিয়ে তাকে উপদেশ দিতেন, ওয়ায করতেন এবং সতর্ক করতেন।
বাদশাহ বা অন্য কারও কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করতেন না। আত্মীয় বা পরিচিত ক্ষমতাবান কারও সাথে কথা বলতেন না। নিজের সহোদর মদীনার শাসক হওয়ায় তিনি তার সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। থাকতেন গোরস্থানে। যাওয়ার সময় কিতাব নিয়ে যেতেন। অধ্যয়ন করতেন। বলতেন, সমাধি থেকে আমি উপদেশ গ্রহণ করি, কিতাবের সাথে আমি অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করি এবং নিঃসঙ্গতাই আমার সর্বাধিক নিরাপত্তা।
প্রাজ্ঞ এই মনীষীর অনেক প্রজ্ঞা ও হিকমতের কথা বর্ণনায় পাওয়া যায়। বলতেন, নিজের ব্যাপারে উদাসীনতা বস্তুত আল্লাহ তাআলাকে এড়িয়ে যাওয়া। খোদার নারাজি বিষয়ক কোন কিছু দেখার পরও না দেখার ভান করা। মানুষের ডরে আদেশ-নিষেধ না করা।
মুসআ’ব যুবাইরী রহ. বলেন, মদীনায় তার চেয়ে অধিক আল্লাহভীতু মানুষ আর দেখিনি। বাদশাহ হারূনুর রশীদ হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে আসলেন। তিনি মারওয়া থেকে সাফা পাহারের দিকে যাচ্ছেন এমন সময় তাকে উমারী ডাক দিলেন, হারূন! বাদশাহ বললেন, জি চাচা! উমারী বললেন, সাফা পাহাড়ে উঠুন। সাফা পাহাড়ে উঠলেন। উমারী বললেন, বাইতুল্লাহ্ শরীফের দিকে তাকান। হারূনুর রশীদ বাইতুল্লাহ শরীফের তাকালেন। নজর বুলালেন সে দিকে। এরপর উমারী বললেন, বাইতুল্লাহ্ শরীফের তাওয়াফকারীদের সংখ্যা কত হবে? হারূনুর রশীদ বললেন, অনেক। সঠিক তথ্য কেবল আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। উমারী বললেন, হারূন! শোনেন, তাওয়াফকারীদের প্রত্যেককে তার ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে কেয়ামত দিবসে জিজ্ঞাসা করা হবে। পক্ষান্তরে আপনি। আপনাকে একা এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। এ কথায় হারূন রশীদ কাঁদলেন এবং বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। এরই মধ্যে উমারী রহ. চলে গেলেন।
জনৈক ব্যক্তি উমারী রহ. এর নিকট এসে বলল, আমাকে উপদেশ প্রদান করুন। উমারী ভূমি থেকে একটি পাথরকণা নিলেন। বললেন, এই পরিমাণ তাকওয়া কারও অন্তরে থাকা পৃথিবীবাসীর নামায অপেক্ষা উত্তম। লোকটি অশ্রুনয়নে বলল, আরও উপদেশ দিন। তিনি বলেন, আগামীকাল যেভাবে চাও যে, আল্লাহ ্ তাআলা তোমার জন্য হয়ে যাক। আজ তুমিও তার জন্য হয়ে যাও।
উমারী দুর্বল শরীর নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাড়তি রোগের চাপে তিনি বিপর্যস্ত। প্রাণ ওষ্ঠাগত। বেহুঁশ হয়ে গেলেন।