কুরআনতারাবীহ

২৬তম তারাবীহ: ২৯তম পারার মর্মার্থ

আজ হবে ২৯তম পারা

সূরা মূলক
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩০, রুকু ২
এ সূরার ফজিলতে বহু হাদীস বর্ণিত রয়েছে। আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন, ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট কুরআনের একটি সূরা পাঠ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। সেই সূরাটি হল ‘তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মূলক’। তিরমিযী

এই সূরার অপর নাম ‘মানেআ’ জাহান্নামের আগুন বাধাদানকারী এবং ‘মুনজিয়া’ জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী। এই সূরা কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে। এজন্যই অধিকাংশ বুযুর্গের আমল হল তারা এশার নামাযের পর অনেক গুরুত্বের সাথে উক্ত সূরাটি তেলাওয়াত করেন।

সূরা মূলকের মৌলিক বিষয় তিনটি :

১. আসমান-যমীনের প্রকৃত রাজত্ব শুধু আল্লাহ তাআলার। জীবন-মরণ, মান-সম্মান, লাঞ্চনা-বঞ্চনা, দরিদ্রতা-সচ্ছলতা, দান করা-বঞ্চিত রাখা সব কিছুর নেজাম ও মালিকানা তাঁরই হাতে, তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বাহিত। কণা পরিমাণ জিনিষেরও জ্ঞান রাখেন তিনি। যমীনে চলা ফেরার রাস্তা বানিয়েছেন তিনি। শূন্যে উড়ন্ত পাখিকে ধরে রেখেছেন তিনি। প্রত্যেককে রিযিকও দান করেন শুধুই তিনি। (১, ২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৯, ২১)

২. সৃষ্টির সবকিছুই রাব্বুল আলামীনের অস্তিত্ব ও একত্ববাদের প্রমাণ বহন করে- আসমানের ছাদ, তাতে তারকা সদৃশ প্রদীপমালা, যমীনের বিছানা এবং প্রবহমান পানির ফোয়ারা সবকিছুই এক প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞ সত্তার অস্তিত্বের জানান দেয়। (৩-৫)

৩. কেয়ামতকে যারা আস্বীকার করে তাদের পরিণাম হল সেই জাহান্নাম যা গর্জন করছে, উত্তেজনায় আকাশকেও যেন বিদীর্ণ করে ফেলবে। (৫-৭) জাহান্নামীরা যখন সে আযাব সামনে থেকে দেখতে পাবে তখন তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে আর তাদেরকে বলে দেয়া হবে, তোমরা যা চাচ্ছিলে এই তো তা। (২৭) (আল্লাহ হেফাজত করুন)

সূরা কলাম
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫২, রুকু ২
এই সূরার সূচনায় আল্লাহ তাআলা যেহেতু কলমের শপথ করেছেন তাই এর নাম সূরা কলাম। আল্লাহর এই শপথ কলমের গুরুত্ব, বড়ত্ব এবং তা যে বিশাল বড় নেআমত সে কথাই প্রমাণ করে।

হাদীসেও কলমের বড়ত্বের কথা বর্ণিত আছে। হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম কলম তৈরি করে বললেন, লিখ। কলম বলল, কি লিখব? আল্লাহ বললেন, তাকদীর লিপিবদ্ধ কর। ফলে সে দিন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হওয়ার ছিল কলম তার সবকিছু লিখেছিল। এরপর আল্লাহ তাআলা ‘নূন’ তথা দোআত সৃষ্টি করেন”। ইবনে কাসীর : তাবারী

এই কলমই পূর্ববর্তীদের জ্ঞান-ভাণ্ডার আমাদের পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে আর এ কলমই সারা পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করার এবং প্রচার করার মাধ্যম। কুরআন এমন পরিবেশে কলম এবং শিক্ষা-শিখনের গুরুত্ব বর্ণনা করেছে যে পরিবেশ বই-খাতা চিনত না, জানত না কলম কী জিনিষ।
সূরা কলমের মৌলিক আলোচ্য বিষয় তিনটি :

১. সূরার সূচনা ভাগে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর অতুলনীয় গুণ গরিমা, বুদ্ধি-বিচক্ষণতা, বিচার-বিবেচনা এবং আখলাক চরিত্র ও মান-মর্যদার বিবরণ দেয়া হয়েছে। শপথ করে বলা হয়েছে, মুশরিকরা যাই বলুক না কেন তোমার রবের অনুগ্রহে তুমি পাগল নও, তোমার জন্য রয়েছে বেশুমার পরিতোষিক প্রতিদান। আর মহান নৈতিক আদর্শ তো তোমার মজ্জাগত। (১-৪)

হযরত আয়েশা رضي الله عنها কে নবীজির আখলাক-চরিত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বলেন, তোমরা কি কুরআন পড় না? তিনি তো ছিলেন কুরআনেরই বাস্তব নমুনা, কুরআনেরই প্রতিমূর্তি। মুসলিম, আবু দাউদ

কুরআনের প্রতিটি বিবরণের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন নবীজি ﷺ তার পবিত্র জীবনে। নবীজির পবিত্র জীবনটি ছিল কুরআন কারীমের প্রায়োগিক ব্যাখ্যা এবং আমলী রূপ। এমন হবেই বা না কেন? নবীজীকে তো পাঠানোই হয়েছিল সুমহান চরিত্র এবং নৈতিক আদর্শের পূর্ণতা সাধন করার জন্য।

নবীজির সুমহান চরিত্র এবং নৈতিক আদর্শের বর্ণনার পাশাপাশি তার দুশমনদের চারিত্রিক নীচুতা, জঘন্যতা ও চিন্তার স্থূলতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “কোনো শপথকারী ইতর লোকের কথা মেনো না, যে খোঁটা দেয় এবং চোগলখরি করে বেড়ায়, ভালো কাজে বারণ করে, সীমালংঘন করে চলে, মহাপাপী, আনাড়ি সর্বোপরি কুখ্যাত বদনামও (এমন লোকের অনুসরণ কর না), তার আস্ফালন শুধু এজন্যই যে, তার ধন আছে, পুত্রাদি আছে।” (১৯-১৪) তাফসীর বিশারদদের মতে, এই আয়াতটি কুরাইশ নেতা ওয়ালিদ বিন মুগীরার প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে।

২. এই সূরার অন্যতম আরেকটি বিষয় হল, ‘আসহাবুল জান্নাত’ তথা বাগানের মালিকদের ঘটনা। ঘটনাটি আরবদের প্রায় লোকই জানত। বাগানটি ছিল ইয়ামানের কাছাকাছি এক জায়গায়। কোনো এক সময়ে কয়েক ভাই পৈত্রিক উত্তরাধিকারিতা সূত্রে সেই বাগানের মালিক হয়। তাদের পিতার আমলে নিয়ম ছিল, ফল পাড়ার কিংবা ফসল তুলার দিন দরিদ্র মিসকীনরা সেখানে জড়ো হত এবং তিনি তাদের প্রত্যেককেই যথাসাধ্য দিয়ে বিদায় করতেন, এতে তার ফল ফসলে বরকত হত।

সেই মহান পিতার অবর্তমানে পুত্ররা ভাবে, এভাবে গরিব মিসকীনকে দিতে গেলে তো আমাদের কিছু থাকবে না। তাছাড়া আমাদের প্রয়োজন এবং খরচাদিও তো বেড়ে গেছে। তারা ফন্দি আঁটে, অতি প্রত্যুষে মিসকীনরা টের পাওয়ার আগেই উৎপাদিত সবকিছু বাড়ি নিয়ে যাবো। নিজেদের নিদ্ধান্তে তারা এতই নিশ্চিত ছিল যে, ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে তথা তাদের কার্যসিদ্ধি যে আল্লাহর ইচ্ছা নির্ভর এ কথাটি পর্যন্ত মনে করতে তারা ভুলে যায়। ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে আল্লাহর হুকুমে তাদের সমস্ত বাগান তছনছ এবং বিনাশ হয়ে যায়। (১৭-৩৩)

পুরো পড়তে ক্লিক করুন: ২৯তম পারা

Last Updated on February 4, 2023 @ 8:35 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it