২৪তম তারাবীহ: ২৭তম পারার মর্মার্থ
সূরা যারিয়াতে ঐ ফেরেশতাদের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা হযরত ইবরাহীম عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ এর কাছে মেহমানের বেশে এসেছিলেন। ইবরহীম عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ তাদেরকে মানুষ ভেবে আতিথেয়তা স্বরূপ তাদের সামনে ভুনা গো-বৎস পেশ করেন। তারপর যখন তিনি টের পান এই মানুষরূপী ব্যক্তিগণ প্রকৃত মানুষ নন, মহান ফেরেশতা; তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, “কী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনাদের আগমন?” তারা জবাব দেন, “লুৎ সম্প্রদায়ের উপর পাথর বৃষ্টি বর্ষণ করে তাদের ধ্বংস করার জন্য আমরা প্রেরিত হয়েছি।”
এ ছাড়াও ফিরআউন সম্প্রদায়, আদ ও সামূদ জাতি এবং হযরত নূহ আ. এর সম্প্রদায়ের পরিণতি কী হয়েছিল তাও তুলে ধরা হয়েছে উক্ত সূরায়। এরপর আাসমান যমীনের সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে এবং বৈজ্ঞানিক একটি বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে যা বর্তমান কালের গবেষকরা বহু চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার পর বের করতে সক্ষম হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, “প্রতিটি জিনিস আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি”। (৪৯, দ্রষ্টব্য: সূরা ইয়াসিন)
সূরার শেষাংশে জ্বিন ও মানব জাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করার জন্য এবং তার মারেফাত হাসিল করার জন্য। প্রত্যেকের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার ওপর। তবে যারা কুফুর ও শিরকে লিপ্ত হবে কেয়ামতের দিন তাদের ওপর অবধারিত ধ্বংস নেমে আসবে।
সূরা তূর
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৯, রুকু ২
সূরার শুরূতে পাঁচটি জিনিসের কসম করে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আপনার রবের শাস্তি বাস্তবায়িত হবে, তা প্রতিহত করার মতো কেউ নেই।”
এই আয়াতগুলোর তাফসীরের অধীনে কুরআন মজীদের তাফসীরকারকগণ কুরআন মাজীদের প্রভাব যে কত প্রচন্ড এ সম্পর্কে সাইয়্যেদুনা জুবাইর বিন মুতঈম رضي الله عنه এর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। কাফের অবস্থায় তিনি এসেছিলেন মদীনা মুনাওয়ারায়। বদরের যুদ্ধ-বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য। তিনি মদীনায় পৌঁছে দেখেন, নবীজি ﷺ মাগরিবের নামাযে সূরা তূর তেলাওয়াত করছেন। যখন নবীজি সূরার সাত নং আয়াতটি পড়েন যার অর্থ হল : “নিঃসন্দেহে আপনার রবের আযাব বাস্তবায়িত হবেই হবে” তখন জুবাইর বিন মুতঈম رضي الله عنه এর অবস্থা এমন হয়ে গেল যে, তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছিল, আমার অন্তরাত্মা ফেটে যাবে। আমি তখনই আযাব চলে আসার ভয়ে ইসলাম কবুল করে নেই।
এরপর হুযুর ﷺ যখন ৩৫ ও ৩৬ নং আয়াত তেলাওয়াত করেন যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রশ্ন করছেন, “এরা কি কারো সৃষ্টি করা ছাড়াই সৃষ্টি হয়ে গেছে নাকি এরা নিজেরা নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে, নাকি এরা আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছে? (না;) বরং এরা তো বিশ্বাসই করে না।” জুবাইর رضي الله عنه বলেন, এ আয়াতগুলো শুনার পর আমার মনে হচ্ছিল, আমার হুঁশ জ্ঞান সব উড়ে যাবে।
সাইয়্যেদুনা ওমর رضي الله عنه এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি এক রাতে মদীনার গলিতে হাঁটছিলেন। এক ঘরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি শুনতে পেলেন, ঘরওয়ালা সূরা তূর তেলাওয়াত করছে। লোকটি যখন ৭ নং আয়াতে পৌঁছল যার অর্থ হল : “নিঃসন্দেহে আপনার রবের আযাব বাস্তবায়িত হবেই হবে।” তখন আয়াতটি শুনে সাইয়্যেদুনা ওমর رضي الله عنه গাধা থেকে নেমে পড়েন এবং একটি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত তিনি এ অবস্থাতেই ছিলেন। বাড়িতে ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে যান এবং এক মাস পর্যন্ত তিনি অসুস্থই থাকেন। মানুষজন হযরতকে দেখতে আসত, কিন্তু বুঝতে পারত না কি রোগ হয়েছে আমিরুল মুমিনের।
কুরআনের তাফসীর সংক্রান্ত সব ঘটনা উল্লেখ করা এখানে মাকসাদ নয়। উদ্দেশ্য হল, আমরাও যেন কুরআন পড়ি এবং শুনি মনোযোগ দিয়ে, চিন্তা-ভাবনার সাথে, উপদেশ লাভের উদ্দেশ্য। যেন আমাদের মনও প্রভাবান্বিত হয়, তা’সীর গ্রহণ করে।
সূরায় বলা হয়েছে, মুত্তাকীদের চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জান্নাতে, সেখানে তাদের জন্য থাকবে হুর গেলমান ও নানান প্রকার সুস্বাদু ফলমূল। তারা সুসজ্জিত বিভিন্ন আসনে বসে কথাবার্তায় মশগুল থাকবে। তারা বলবে, “পূর্বে আমরা পরিবার পরিজনের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম এরপর আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন। আগেও আমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতাম, তিনি তো কৃপাময় ও দয়ালু।” (২৬-২৮)
পুরো পড়তে ক্লিক করুন: ২৭তম পারা
Last Updated on July 1, 2024 @ 3:44 pm by IslamInLife বাংলা