ইবাদতহজ্ব ও উমরাহ

হজ্জ-যাত্রীর প্রতি কিছু সরল উপদেশ

হজ্জ করতে পারা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার।

যে কাজটি যত বেশি সৌভাগ্যের হয় সেটিতে পরীক্ষাও বেশি থাকে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে তো দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা। আর যদি ব্যাপকভাবে অবহেলা করা হয়, ক্ষতির আশংকা! সফর এমনিতেই কষ্ট — তার ওপর হজ্জ কোনো আনন্দ-ভ্রমণ নয় — অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদতের উদ্দেশ্যে সফর। পদে পদে মাসআলা জানার আছে, সে অনুযায়ী আমল করতে হয়। একটি কাফেলার সঙ্গে যেতে হয়। নানা অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এসবই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে! এর মাঝেই পরীক্ষা হয় নিয়ত, শোকর, সবরের।

বর্তমানে একদিকে আমরা অধিকাংশ মুসলমানগণ পবিত্র জীবনযাপনে অবহেলা করে থাকি, আরেকদিকে গুনাহের মাধ্যমগুলি খুব চাঙ্গা! এসব কিছুর মধ্যে একজন হাজীকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে সুন্দরভাবে হজ্জ সম্পন্ন করতে হবে।

নিজের কামনা-বাসনা যে যত বেশি দাবাতে পারবে, হজ্জ তার তত সুন্দর হবে ইনশাআল্লাহ! সবকিছু যত প্রতিকূলই হোক, আমাদের নিয়ত ও প্রচেষ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেককে দেখতে হবে, আমি কী করছি, আমি কতটুকু আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি।

হজ্জের সফর পবিত্র সফর। হজ্জের জায়গাগুলো দুনিয়ায় পবিত্রতম ভূমি। সেখানে পবিত্র মন ও শরীর নিয়ে যেতে হয়। সারাজীবনে যা করেছি, করেছি — খাঁটি তওবা করে এ সফর শুরু করতে হবে। মানুষের সঙ্গে লেনদেন, অন্যান্য বিষয় মীমাংসা করে হজ্জে যেতে পারলে সবচেয়ে উত্তম — অন্তত সাধ্যমতন এদিকগুলো সমাধান করে হজ্জের সফর করতে পারলে খুব ভালো। এর অর্থ এ নয় যে, এসব শেষ না করতে পারলে আমি হজ্জে যাওয়ার প্রস্তুতিই নেব না! তাহলে তো আমাদের সারাজীবনে হজ্জ আদায় হবে না।

জীবনে আমরা কয়বার হজ্জ করতে পারি?! চিন্তা করা উচিত। এমন একটি সুমহান ইবাদত, যা কিনা কষ্ট করে করতে হয় আর তার বিনিময়ও অতুলনীয় — সেটির জন্য কেমন প্রস্তুতি প্রয়োজন?! হজ্জের প্রস্তুতির দুটি দিক — বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ। দুটোই আপন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ যেটি আসলে আত্মিক প্রস্তুতি সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর এটিতেই অবহেলা বেশি। কারণ আমরা ভিসা, টিকেট, লাগেজ প্রস্তুতিতে সবাই উল্লেখযোগ্য সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করি। কিন্তু হজ্জের উদ্দেশ্য ও কাজ কিভাবে সম্পন্ন করলে আল্লাহ পাক খুশি হবেন, তাঁর কাছে কবুলের আশা করা যায় তা ভুলে যাই। সোজা কথা, আত্মিক প্রস্তুতিতে আমাদের অবহেলা হয়ে যায়। এমন নয় যে আমরা আত্মিক প্রস্তুতি নিতে চাই না। কিন্তু কোনো উপায় বুঝতে না পেরে আমরা কিছু বই পড়ি, ইন্টারনেট ব্রাউয করি। আসলে এখানেই অনেক সমস্যা ও অসুবিধার উদ্ভব হয়! যেটা উচিত তা হল, কোনো আলেমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তার পরামর্শ ও পথনির্দেশ নেওয়া। মহিলাগণকেও এটি করতে হবে তার মাহরামের মাধ্যমে। আমার কাফেলায় যারা অভিজ্ঞ  তাদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। তবে মাসআলা-মাসআয়েল আলেমগণ থেকেই জানব। সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে হজ্জের কাজগুলো সম্পন্ন করাটি সবচেয়ে জরুরি। হজ্জের সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত — যাবতীয় কাজ দ্বীনদার অভিজ্ঞ হাজীদের সঙ্গে আলাপ করে করা বুদ্ধিমানের কাজ।

নিয়ত করুন, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ করব। সময়গুলো যেন সর্বোত্তম ভাবে ব্যয় হয় — সে চিন্তা ও পরিকল্পনা থাকবে। সেখানে গল্প করতে, ভালো ভালো খেতে আর ঘুরতে যাচ্ছি না — যাচ্ছি আল্লাহর ঘরে, যাচ্ছি পবিত্র হজ্জ সম্পন্ন করতে — জীবনকে নতুন করে শুরু করার লক্ষ্যে। অতএব, গুনাহ করার প্রশ্নই আসে না! ছবি তোলা, ভিডিও করার করার মতন নিকৃষ্ট কাজ সেখানে করব না।

চেকলিস্ট করে জিনিসপত্র নিতে হয়। অতিরিক্ত নয় আবার জরুরি কোনো জিনিস বাদ না পড়ে যায় — এমনভাবে জিনিস নিতে হবে। নিজের সামানপত্র (সফরের যাবতীয় জিনিস) নিজ দায়িত্বে রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব জরুরি।

সফর সঙ্গীগণ যত আল্লাহওয়ালা বা দ্বীনদার হবে — তত উত্তম! আবার দ্বীনদার হল কিন্তু একদম অপরিচিত হলে সমস্যা হতে পারে। তাই আগে থেকেই পরিচিত হয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়া উচিত।

পুরো সফরে সময় হেফাজত করার জন্য সজাগ হতে হবে। তেলাওয়াত, যিকির, দোআ ও অন্যান্য ইবাদতে মশগুল থাকার কোনো বিকল্প নেই! কোনোভাবেই আড্ডা-গল্প ও চারপাশ ঘুরে দেখার কাজে লিপ্ত হতে নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, হজ্জের সফরে অহেতুক কথা-কাজে লিপ্ত হওয়া। আরও ভয়াবহ হল, বাক-বিতণ্ডা ও ঝগড়া করা।

হজ্জের সফরে হোটেল/তাবু থেকে একাকী বের হওয়া নিরাপদ নয়। বিশেষ প্রয়োজনে পুরুষগণ বের হবে।

মাহরামগণের উচিত নিজ নিজ মহিলাদের ভালোভাবে দেখাশোনা করা। বাচ্চাদের নিয়ে গেলে তাদের উত্তমরূপে দেখাশোনা করা খুব জরুরি।

হজ্জের সফরে নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রেখে কাজ করা, খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরা করাও খুব জরুরি। আর হজ্জের আগের সময়টিতে শক্তি-সামর্থ্য জমিয়ে রাখা খুব জরুরি। অনেকে সামর্থ্যের বাইরে খুব বেশি নফল তওয়াফ করে ফেলে — যা অনুচিত।

ইচ্ছাকৃত কষ্ট-ক্লেশ বরণ করা ঠিক নয়। আর যে কষ্টগুলি চলে আসে — তাতে সবর করতে হবে। একদমই নালিশ বা অভিযোগ তোলা যাবে না!

মনে রাখতে হবে, হজ্জে যে যেতে পারে সে আসলে আল্লাহ তাআলার মেহমান! অতএব, আল্লাহ পাকের মেহমানদারি আমার জন্য সবই মুবারাক। আমি কোনো অবস্থায় কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলব না। ছোটখাট বিষয়ে কথা বলতে গেলেও অনেক বড় ঝগড়া লাগতে পারে! আমার হজ্জ বরবাদ হতে পারে — শুধু এই ভয় করব।

সব প্রস্তুতি ও চেষ্টার সঙ্গে দোআ অতীব জরুরি! আল্লাহ তাআলার তাওফিক ছাড়া হয় না, তিনি সাহায্য না করলে হয় না। তিনি কবুল না করলে আমরা বিফল। এ চিন্তা অন্তরে রেখে নিতান্ত বিনয়ের সঙ্গে হজ্জ পালন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আপন রহমতে আমাদের সবার হজ্জ, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী — সবার হজ্জ কবুল করুন! আমাদেরকে পরিপূর্ণ আফিয়াত ও সুন্নাহ মুতাবিক হজ্জ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Last Updated on May 28, 2024 @ 6:15 pm by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *