সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধকারী
ইবনে আসাকার এবং আল্লামা যাহাবি رحمة الله عليه লিখেছেন যে, আবু হাসিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ খুরাসানি নূরী رحمة الله عليه একবার বাগদাদের দাজলা নদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
নদীর কূল ঘেসে বড় একটা নৌকা বাধা ছিল। মাঝি অনেকগুলো মটকা নিয়ে বসে আছে। আবু হাসিন নূরী নৌকায় উঠলেন।
মাঝিকে বললেন: এগুলো কী?
মাঝি বলল: তা জেনে আপনার লাভ কী?
তিনি আবার প্রশ্ন করলেন: এগুলো কার?
মাঝি বলল: আল্লাহর কসম আপনি অনেক বাচাল লোক। এগুলো খলীফা মুতাদি বিল্লাহর মদ।
এটা শুনে আবু হাসিন নূরী অনেক রেগে গেলেন। হাতে লাঠি ছিল। তা দিয়ে মটকা ভাঙা শুরু করলেন। মাঝি তাকে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু তিনি শুনছেন না। মাঝি উঁচু আওয়াজে চিল্লাতে শুরু করল। লোকেরা পুলিশ ডাকল। ভাঙতে ভাঙতে তিনি সব মটকা ভেঙে ফেললেন। আর মাত্র একটা মটকা বাকি ছিল। তিনি তা ভাঙলেন না।
পুুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল। খলীফার সামনে নিয়ে হাজির করল। খলীফা জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে?
আবু হাসিন নূরী উত্তর দিলেন: আমি সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধকারী।
খলীফা বললেন: কে তোমাকে এই কাজের জন্য নিযুক্ত করেছে?
তিনি উত্তর দিলেন: আমীরুল মুমিনীন, যিনি আপনাকে খলীফা বানিয়েছেন তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন।
খলীফা মাথা নিচু করলেন এবং বললেন: এই কাজ করার দুঃসাহস কী করে হয়েছে? আর কেন করেছ? আপনার প্রতি ভালোবাসার কারণে আর এটা আপনার জন্য ক্ষতিকর ছিল। খলীফা আবার মাথা নিচু করে ফেললেন।
কিছুক্ষণ ভেবে বললেন: তুমি সব মটকা ভাঙলে কিন্তু একটা বাকি রাখলে; সেটা ভাঙনি কেন?
আবু হাসিন নূরী رحمة الله عليه জবাবে বললেন: আমি যখন ভাঙা শুরু করি আমার মনে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত ছিল। শেষ মটকা ভাঙার সময় আমার মনে আত্মগৌরব চলে এসেছিল। এমন মনে হল, এটা জানা সত্যেও যে এগুলো খলীফার – আমি কত বড় একটা কাজ করে ফেললাম। মনের এই অবস্থাটির কারণে আমার মনে হল যে এখন আমি আর আল্লাহর জন্য কাজটি করছি না। তাই থেমে গেলাম। আর সেজন্যই শেষ মটকাটা ভাঙা হয়নি।
খলীফা বললেন: তোমাকে আমি তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করলাম। নিষেধ যা কিছু দেখবে তা পরিবর্তন করে ফেলবে।
আবু হাসিন নূরী বললেন: এখন আমার এই কাজ করার ইচ্ছা নেই।
খলীফা বললেন: কেন?
তিনি উত্তর দিলেন: আগে আমি একাজ করতাম আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সাহায্যের সাথে, আর এখন করতে হবে আপনার সন্তুষ্টি এবং পুলিশের সাহায্যে।
খলীফা বললেন: আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে বলেন।
তিনি বললেন: আমাকে এ দরবার থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হোক এবং আমার পথে আপনার কোনো লোক যেন বাধা না হয়। বাদশাহ সম্মত হলেন ও এ আদেশ দিলেন। তারপর তিনি বাগদাদ ছেড়ে বসরায় চলে যান এবং সেখানেই অবস্থান করেন।
তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন আত্মগোপন করতে; যেন খলীফা অথবা তার পক্ষের কোনো ব্যক্তি সুপারিশের জন্য না আসে। খলীফার ইন্তেকালের পর তিনি বাগদাদে ফিরে আসেন।
Last Updated on February 14, 2023 @ 4:46 pm by IslamInLife বাংলা