রূহের খাবার
আমরা তিন বেলা খাই। কোনো বেলা ক্ষুধা কম লাগলে কম খাই। কোনো বেলা ক্ষুধা না থাকলে খাইনা – এর কারণ সাধারণত এটাই যে আগের বেলায় বেশি বা অতিরিক্ত খেয়েছি। তবু শরীরকে খাওয়া যোগানে কম-বেশি সজাগ থাকি।
তাহলে যিকিরের (তেলাওয়াত, তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদির) ব্যাপারে কোন নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত? আত্মা বা রূহের খাবার যোগানে আমাদের কী করা উচিত?
বিস্তারিত নয়, খুব সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা হচ্ছে…
মনে করুন, তিন তাসবীহ। মাত্র দুবেলা করলে হয় (সকাল-বিকাল এ তাসবীহ করার বিশেষ লাভ ও উপকারের কথা যেহেতু কুরআন ও হাদীসে আছে)। যেই বেলা কোনো কারণে আলসেমি লাগে সেই বেলাতেও তাসবীহ করা একদম ছেড়ে দিয়েন না, কম করেন। যেমন দশ-দশ বার করে তাসবীহগুলো পড়ে নেন। পরে শেষ করেন। কিন্তু একদম বাদ দিলে পুরোটাই “পরে করব” চিন্তা করলে হয়ই না অথবা ঐদিন হয়ত আর করাই হবে না। ফলে সময়মত একদম হল না আর রূহ সময়মত খাবার পেল না।
এভাবে কুরআন তেলাওয়াত। হয়ত নির্ধারণ করেছেন অন্তত সকালে ফজরের পর এক পৃষ্ঠা পড়বেনই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কোনো দিন শরীর খারাপ লাগছে, বা ঘুম প্রবল। এক আয়াত হলেও পড়ে তারপর শুয়ে পড়ুন। তবু আপনার দৈনিক নেক কাজটি ‘একটু’ জারি থাকল।
এভাবেই ধীরে ধীরে নেক-কাজে দৃঢ়তা আনতে হবে। সত্যিকার একজন মুমিন তার দ্বীন ও দুনিয়ার সব কাজে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করে। ইবাদত-যিকিরের অন্তর্ভুক্ত কেবল তাসবীহ-তেলাওয়াত-নামায নয়। আল্লাহর বান্দাদের, অর্থাৎ, মানুষের অধিকার পূরণ করা এবং জগত-সংসারের সব কাজ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী করা ইবাদত ও যিকিরের মধ্যেই পড়ে। তবে, তাসবীহ-তেলাওয়াত-নামায (যেগুলো সরাসরি ইবাদত, তা) উপেক্ষা করে অন্য সব কাজ সঠিকভাবে করলেও মানব-আত্মার মূল চালিকাশক্তির (আত্মিক ও রূহানী শক্তির) বিরাট ঘাটতি দেখা দেয়। একজন বুদ্ধিমান ও সতর্ক মুমিন কখনো এগুলোকে উপেক্ষা করতে পারে না। ঠিক যেভাবে মানুষ তার দেহকে ঠিক রাখার জন্য অন্তত তিন বেলা খায়, মুমিন তার দৈনন্দিন জীবনে প্রতি ওয়াক্ত নামায পড়ে, তেলাওয়াত ও তাসবীহ করে আত্মাকে বিশেষ খাবার যোগান দেয়। এ আত্মার বা রূহের খাবার কেবল পরকালীন নয়, জাগতিক জীবনে অনেক উপকারে আসে। মানুষের অন্তরের সুস্থতা, শান্তি, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা মূলত এগুলোর ওপরই নির্ভর করে।
——————-
*তিন তাসবীহ হল সর্বসাধারণ ও সব স্তরের মুসলমানদের জন্য প্রাথমিক, উপকারী ও এক অর্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি তাসবীহ: প্রথম তাসবীহ (১০০ বার)- সুবহানআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার (পৃথক পৃথক ১০০ বার পড়া যায়), দ্বিতীয় তাসবীহ (১০০ বার) – যেকোনো একটি দূরূদ শরীফ (ছোট হোক, যেমন: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তৃতীয় তাসবীহ (১০০ বার) – যেকোনো একটি ইস্তেগফার, যেমন: আস্তাগফিরুল্লাহ বা রাব্বিগ ফিরলী। অনেক আলেম এটির ক্রমটিকে উল্টা করে পড়তে বলেন, প্রথমেই ক্ষমা-চাওয়া বা ইস্তেগফার দিয়ে শুরু করতে বলেন।
Last Updated on February 28, 2023 @ 11:38 am by IslamInLife বাংলা