আখলাক ও আত্মশুদ্ধি

রূহের উন্নতির প্রয়াস – ৩

সত্যকে খাঁটিভাবে সন্ধানের জন্য নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে যথেচ্ছ কাজে লাগানো থেকে বিরত থাকতে হয়। নিজের মন মতন চলার কামনা-বাসনা জলাঞ্জলি দিতে হয়। মানুষ নিজ সত্ত্বাকে সম্পূর্ণ স্বাধীন মনে করলেই সমস্যা। তার সত্ত্বা কেবল ততটুকুই স্বাধীন যতটুকু স্বাধীনতা আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছেন। যারা ঈমান আনল কিন্তু নিজ খেয়াল-খুশিকেই প্রাধান্য দিল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে রইল না — তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ও আশ্চর্যজনকও বটে। এটা নিজের উপর অনেক বড় জুলুম। ঈমানের মত নেয়ামতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা যেন তেন ব্যাপার নয়। প্রথমটা, অর্থাৎ কুফুর হল মনুষ্যত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়া আর পরেরটা, অর্থাৎ ঈমান পেয়েও নাফরমানিতে লিপ্ততা হল মনুষ্যত্ব থেকে বের হতে চাওয়া। এক দলের রূহ মৃত, আরেক দলের রূহ অসুস্থ। এমনকি এদের কারও কারও রূহ মুমূর্ষু।

যদি আল্লাহ তাআলার নীতিমালা পছন্দ না হয়, তাঁর সাম্রাজ্য থেকে বের হয়ে যেতে হবে। আর তা কি কখনো সম্ভব?! কখনই সম্ভব নয়। হ্যাঁ, সম্ভব হল মনুষ্যত্ব থেকে বের হয়ে পশুত্ব বরং তারও নিচে নেমে যাওয়া ছাড়া তার স্বাধীনতা কোথায়?! ঘরের ভিতর স্ত্রী-পুত্র পরিজন চলুক না শতভাগ মন মতন। দেখবেন কি তাণ্ডব লেগে যায়। আজ আমাদের ঘরে ঘরে, সমাজে, পাড়ায়, গ্রামে-শহরে এবং তা থেকে দেশের মাঝে পেরেশানি ছড়িয়ে পড়েছে। সবই আসলে মন মতন চলার কারণে মনুষ্যত্ব নষ্টের কুফল। এ থেকে উত্তীর্ণ হতে হলে সবার আগে বিনা বাক্যে আল্লাহ তাআলার একচ্ছত্র আধিপত্য স্বীকার করতে হবে।

মানুষের আত্মিক উন্নতির পথে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় বাঁধা এটাই যে, সে নিজেকে আল্লাহর ‘বান্দা’ হিসেবে খেয়াল রাখল না। যারা নিজেকে আল্লাহর বান্দা বলে স্বীকারই করে না তারা তো কাফের; চরম পর্যায়ের নাফরমান। যতক্ষণ ঈমান না আনবে তাদের অবস্থা ভয়াবহ। পার্থিব জীবনে খুব সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। মানুষ তার বেঁধে দেয়া সীমা থেকে বের হয়ে অনেক কিছু করে ফেলার সুযোগ পায়। এটাই পার্থিব জীবনের নিয়ম। এখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সুযোগ যেমন রয়েছে, অন্যায় পথ অবলম্বনের রাস্তাও খোলা আছে। মানুষকে সুস্পষ্ট হেদায়েত (সঠিক নির্দেশনা) দেয়া হয়েছে ভালো ও মন্দ সম্পর্কে। এ দ্বারা মানুষ পরীক্ষিত হচ্ছে। সুতরাং অবাধে মনুষ্যত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে মন মতো পথে পা বাড়ানো যাবে ঠিকই, কিন্তু যেই না এই জীবন শুধু শেষ হবে…!

এটি সৃষ্টিজগতে আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَ تَعَالَى -র এক নিয়ম, যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তর নিয়ে সত্যকে খুঁজবে সে আল্লাহর পথ পেয়ে যাবে। সে বঞ্চিত হবে না।  বরং, আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَ تَعَالَى-র রহমত তো এত বেশি যে, মানুষ তার সাধ্যানুযায়ী যদি দ্বীনের প্রতি সামান্য একটু মনোযোগী হয়, সত্যের পথে অগ্রসর হওয়ার সাধারণ চেষ্টাও করে, আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَ تَعَالَى তাকে কবুল করে নেন। বান্দাকে তিনি তাঁর পথচলায় সাহায্য করেন। আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَ تَعَالَى-র অপার রহমত সম্পর্কে বাস্তবিকই আমাদের ধারণা খুব সীমিত।

আফসোস হল, ঈমান অর্জন করে এবং আল্লাহ তাআলার রহমত সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সেই রহমত প্রাপ্তির জন্য আমাদের দোআ ও চেষ্টায় খুব ত্রুটি!‍ এক সাহাবি رضي الله عنه ইফতারের সময় অপূর্ব দোআ করতেন। বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার যে রহমত সকল সৃষ্টিকে বেষ্টন করে আছে সেই রহমতের উসিলায় আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও!’

Last Updated on November 20, 2023 @ 7:48 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it