ঈমান ও আক্বীদা

মানুষ পুরষ্কার ও শাস্তি পাবে কেন

যে প্রশ্ন অনেকের মনে জাগে

মানুষের চেষ্টা করার এখতিয়ার বা সাধ্য আছে কিনা। মানুষের কি কাজ করার কোনো ক্ষমতা আছে, নাকি আল্লাহ তাআলাই সবকিছুর মালিক বলে, সবকিছুর কর্তাও আল্লাহ তাআলা? যেহেতু সবকিছুর মালিকই আল্লাহ তাআলা, তাহলে মানুষ পুরষ্কার ও শাস্তি কেন পাবে — মানুষের কৃতিত্ব বা দোষ কোথায়? এমন প্রশ্ন করা হয়, অনেকের মনে এ জাতীয় প্রশ্ন জাগে।

ভালো করে বুঝে নিন

আল্লাহ তাআলা সবকিছুর মালিক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। মানুষসহ সবকিছুর এবং সব কর্মের। মানুষকে আল্লাহ তাআলা কিছু ক্ষমতাও দিয়েছেন। তাই মানুষের চেষ্টা করার এখতিয়ার বা সাধ্য রয়েছে। এমন নয় যে মানুষ চেষ্টা করতে পারে না। মানুষকে ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের সাধ্য-সামর্থ্য দেওয়া হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী মানুষ কোনো দিকে ধাবিত হতে পারে। এজন্যই আল্লাহ তাআলা মানুষকে আদেশ নিষেধ করেছেন। এটা করবে, ওটা করবে না। আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ মানার সঙ্গে পুরষ্কারের সম্পর্ক আর তাঁর আদেশ-নিষেধ অমান্য করার সঙ্গে শাস্তির সম্পর্ক।

মানুষ যখন কোনো ইচ্ছা ও চেষ্টা করে

যখনই মানুষ ইচ্ছা করে আর চেষ্টা শুরু করে তখনই যে কাজের ইচ্ছা আর চেষ্টা সে শুরু করেছে সেই কাজটি আল্লাহ তাআলার আদেশে বাস্তবায়িত হয়। মূলত সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, এভাবে সব কাজেরও সৃষ্টিকর্তা তিনি। যেহেতু তিনি ভালোকে সংজ্ঞায়িত করে দিয়েছেন আর মন্দকেও সংজ্ঞায়িত করেছেন তাই আমাদের উপর আদেশ হল ভালো কাজ করার, মন্দ থেকে বিরত থাকার। তাই ভালো কাজটি করলে সেটির পুরষ্কার আমাদেরকে দেওয়া হবে আর মন্দটি করলে সেটার শাস্তির যোগ্য আমরাই হব।

যে কথাটির অর্থ আমরা ভুল বুঝি 

পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে তোমরা ইচ্ছা করতে পার না আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইচ্ছা না করলে (দেখুন সূরা: ৭৬:৩০ ও ৮১:২৯) — এ কথার অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহ ইচ্ছা করেন বলেই মানুষ সম্পূর্ণ তাঁর অধীন হয়ে ‘স্বয়ক্রিয়ভাবে’ সেই ইচ্ছা অনুযায়ী নেকি বা গুনাহ করতে থাকে। বরং অর্থ এটা যে, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা সবকিছুর ওপর, তিনি ইচ্ছা করেছেন ও সাধ্য-সামর্থ্য দিয়েছেন ও দেন বলেই মানুষের ইচ্ছা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়, মানুষ ইচ্ছা করতে পারে। কী ইচ্ছা করবে, কোন পথে পা বাড়াবে — এই ব্যাপারে মানুষকে এখতিয়ার বা ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে। নেকি করব নাকি গুনাহ করব সেটা বাছাই করা মানুষের সাধ্যে আছে।

মানুষের সাধ্য-সামর্থ্য কতটুকু

এ কথা ঠিক এবং সত্য যে, মানুষের ক্ষমতা, সাধ্য, সামর্থ্য অনেক বেশি নয়, বরং কম। এজন্যই তো সঠিক, সত্য ও ন্যায় পথে চলার জন্য ও টিকে থাকার জন্য আল্লাহ তাআলার সাহায্য চাইতে আমরা আদিষ্ট। তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন সেই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

প্রান্তিক দুই ভুল চিন্তা ও বিশ্বাস 

এক কথায়, মানুষ জড় পদার্থের মত পুরোপুুরি বেকার, অচল-নিশ্চল নয়, আবার এমন নয় যে. মানুষের এখতিয়ার অনেক বেশি, (এত বেশি যে) তার কর্মের উপর তার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আছে ও সে তার কর্মকে সৃষ্টি করতে পারে। এই উভয় প্রান্তিকতা ভ্রষ্ট দুই পথ, ভুল আকীদা ও বিশ্বাস। এর উভয়ের মধ্যপথে সঠিক আকীদা নিহিত।

সঠিক আকীদা হল: মানুষ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক আদিষ্ট কাজ করার জন্য মানুষ নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা প্রয়োগের কিছু হলেও ক্ষমতা রাখে। তাই আল্লাহ তাআলার আদেশ পালনে মানুষ পুরষ্কৃত হয় আর তাঁর আদেশ অমান্য করায় হয় শাস্তির উপযোগী। আল্লাহ তাআলার আদেশেই মানুষের ইচ্ছা, কাজ ও ফলাফল সৃষ্টিলাভ করে তথা বাস্তবায়িত হয়। কারণ সবকিছুর মালিক, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলাই।

সর্বশেষ কথা: খোদায়ী এ নিয়মের ওপর আর/আরো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এটিই ইনসাফপূর্ণ পথ, এটি মেনে নিতে হবে। মানুষের জ্ঞান খুবই সীমাবদ্ধ। মানুষকে এই বিষয়ে এতটুকু জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে। এর উপর প্রশ্ন উত্থাপন করলে মানুষ অহেতুক পেরেশান হবে, বিপথগামী হবে এবং হতে পারে সে আল্লাহ তাআলার বেঁধে দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহর পানাহ!

Last Updated on March 14, 2023 @ 5:51 pm by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it