মানুষ নেক তাওফীক থেকে বঞ্চিত হয় কখন – ৫
শাক্বীক বিন ইব্রাহীম رحمة الله عليه -এর মতে মানুষ নেক তাওফীক থেকে বঞ্চিত হওয়ার আরেকটি (পঞ্চম) কারণ হল, দুনিয়ার জীবন, যা কিনা পেছনে চলে যাচ্ছে, সেই দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়া।
দুনিয়ার জীবন আখেরাত তৈরির জন্য। একজন মুসলমানের মূল উদ্দেশ্যই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন, যা ইবাদতের মাধ্যমেই সম্ভব। নামায-রোযার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবনযাপন ও সকল প্রয়োজন পূরণ করা ইবাদতেরই অংশ। যখনই দুনিয়াতে অবস্থান কালে মানুষ আল্লাহ থেকে বিস্মৃত হয়ে যায় তখনই সে দুনিয়ার জীবনকে উদ্দেশ্য বানায়। তখনই দুনিয়া তথা পার্থিব জীবন প্রাধান্য পায়। আল্লাহর হুকুম মানা ও আখেরাত তৈরিতে সে গাফলতি করে বসে। দেখুন কি স্পষ্টভাবে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং বলেছেন (অর্থ): হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য, অতএব পার্থিব জীবন যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে এবং সেই বড় প্রতারক (শয়তান)ও যেন আল্লাহর নাম নিয়ে (ও তাঁর দয়ার কথা বলে) তোমাদের প্রতারিত না করতে পারে। সূরা ফাতির: ৫
আসলে দুনিয়ার ভালোবাসা ও মোহ কী? কোন সে দুনিয়া-প্রীতি যা মন্দ ও ধ্বংসাত্মক? সেটা, যা কিনা মানুষকে তার রব -আল্লাহ থেকে গাফেল করে দেয়। নচেৎ সবই ভালো! কামাই-রোজগার, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া, খেলাধুলা – সবকিছুই দ্বীন; কারণ, আল্লাহর হুকুম নষ্ট করাই বদদ্বীনি। আল্লাহর স্মরণ থেকে সরে গিয়ে তাঁর হুকুম লঙ্ঘনই ‘দুনিয়া’।
আফসোস আমাদের নিয়ে! আমরা নিষিদ্ধ দুনিয়াকে ‘হাসানা’ (কল্যাণ) ঠাউরেছি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার হুকুম লঙ্ঘন করে বলতে চাই যে, এই তো – আমরাও নামায-রোযা করি! অথচ কী অবস্থা নামায-রোযার? এত বড় ইবাদতগুলো পর্যন্ত মন মত সম্পন্ন করা হয়! এটা কত ভয়ের কথা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতার দুনিয়া ‘হাসানা’ তো নয়ই, বরং সেটাই অকল্যাণকর ও ধ্বংসের কারণ।
রাসূলে কারীম ﷺ আমাদেরকে দুনিয়ার বিষয়ে অত্যাধিক সতর্ক করেছেন। কারণ মানুষ দুনিয়ার অভিলাষী হয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে আখেরাতকে সে ভুলে বসে। এক হাদীসের একাংশ (অর্থ): আমি আমার উম্মতের যে জিনিসটির সবচেয়ে বেশি ভয় করি সেটা হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ ও দীর্ঘ আশা। বস্তুত: প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে সত্য ও বাস্তবতা গ্রহণ করা থেকে ফিরিয়ে রাখে, আর দীর্ঘ আশা মানুষকে আখেরাতের কথা ভুলিয়ে দেয়। (বায়হাকী)
বায়হাকীর অন্য হাদীসে আছে (অর্থ): এ উম্মতের কল্যাণের মূল হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ইয়াকীন ও দুনিয়ার প্রতি অনীহা। আর তাদের অনিষ্টের মূল হচ্ছে কৃপণতা ও দীর্ঘ আশা। বায়হাকীরই আরেকটি হাদীসে আছে (অর্থ): যে কোন বান্দা দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত হয়ে থাকে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে হেকমত ও সূক্ষ্মজ্ঞান উৎপন্ন করে দেন এবং তার মুখ দিয়ে এটা প্রকাশ করে দেন।আল্লাহ তাআলা তার চোখের সামনে দুনিয়ার দোষ-ত্রুটি, এর রোগ-ব্যাধি এবং এগুলো থেকে উত্তরণের পথ তুলে ধরেন। আর দুনিয়া থেকে নিরাপদে বের করে জান্নাতে নিয়ে যান।
দুনিয়ার জীবন তো কদর এজন্য করা চাই যে, এর মাধ্যমে আখেরাত তৈরি করা হবে। দুনিয়াতে কেউ আজীবন থাকতে পারবে না বলে প্রয়োজন পরিমাণ ব্যতীত দুনিয়ার ব্যস্ততা ও মনোযোগ ক্ষতিকর।
কত বড় সৌভাগ্য ঐ ব্যক্তি যে কিনা আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পেয়ে যায়। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ-এ বর্ণিত একটি হাদীসের অর্থ: (যখন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে এমন কোনো কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহও আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষও আমাকে ভালবাসবে। তিনি ﷺ উত্তরে বললেন: তুমি দুনিয়া-বিমুখ হয়ে যাও, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের কাছে যে জিনিস রয়েছে (অর্থাৎ, সম্পদ ও পদমর্যাদা), এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।
এটি একটি বাস্তব সত্য যে, দুনিয়ার ভালোবাসা ও এর চাহিদাই মানুষকে দিয়ে এমন সব কাজ করিয়ে থাকে, যার দরুন সে আল্লাহর ভালোবাসার যোগ্য থাকে না। এ জন্য আল্লাহর ভালোবাসা লাভের পথ এটাই যে, মানুষের অন্তরে দুনিয়ার (না-জায়েয) চাহিদা ও এর আকর্ষণ থাকবে না।
আলেমগণ বিষয়টিকে সহজ করে এভাবে বলেন, (প্রয়োজন পরিমাণ) দুনিয়া তোমার হাতের মুঠোয় এমনকি জামার পকেটেও থাকুক, কিন্তু অন্তরে যেন না ঢুকে। অন্তর তো কেবল আল্লাহর জন্য। অন্তরের ভেতর দুনিয়া ঢুকলে মানুষ কিভাবে আল্লাহর প্রিয়-পাত্র থাকবে?! বস্তুত: দুনিয়ার পরীক্ষা তো এটাই যে, কে একে ব্যবহার করে আখেরাত তৈরি করে, আর কে একে গ্রহণ করে আখেরাতকে করে বরবাদ! শেষোক্ত শ্রেণীর মানুষ নেক তাওফীক থেকে বঞ্চিত। চলবে ইনশাআল্লাহ
Last Updated on December 12, 2024 @ 8:41 am by IslamInLife বাংলা