মহিমান্বিত রমযান: ক্ষমা পাওয়ার ও জীবন পরিবর্তনের অপূর্ব সুযোগ
আল্লাহ তাআলার কত বড় রহম ও করম। তিনি এক দিন বা দুই দিন নয়, সম্পূর্ণ একটি মাস দিয়েছেন এই উম্মতকে। যেই মাসটিতে মাগফেরাত, দোআ কবুল ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন একেবারে সহজ করে দেওয়া হয়েছে। বাদশাহ যখন ক্ষমার এমন সুযোগ দেন, তার সদ্ব্যবহারই সবচেয়ে বড় দাবি রাখে। যেকোনো বুদ্ধি-বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই এমন সুযোগ হাতছাড়া করাকে চরম বোকামী মনে করবে।
বছর ঘুরে রমযান আবার আসছে। যে রমযান মুমিনকে পূর্ণ বছরের জন্য প্রস্তুত করার প্রয়াস দেয়। পবিত্র কুরআনকে আঁকড়ে ধরার কথা মনে করায়। যেই মাস বান্দাকে উদ্বুদ্ধ করে জান্নাত অর্জনের। তার অন্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের খাঁটি তলব সৃষ্টি করে। আত্মিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে বিস্ময়কর ইবাদতের সুযোগ দিয়ে মুত্তাকী হওয়ার আহ্বান জানায়। সিয়াম ও কিয়ামের সম্মিলন – বান্দাকে বন্দেগীর এক অনাবিল স্বাদ দান করে! গুনাহকে গুনাহ মনে করার সুযোগ দেয়। যত্ম সহকারে গুনাহ থেকে বাঁচার বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। নেক কাজে অগ্রসর হওয়ার বিরাট আকাঙ্ক্ষা পয়দা করে। দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করতে সহায়ক হয়। আখেরাতেই যে শান্তি, সেই কথা মনে করায়। আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা, আর তাঁর রাসূল ﷺ -এর ভালোবাসা যে আসল পুঁজি, তা স্মরণ করায়।
রমযান মাস যে পেল, কিন্তু মাগফিরাত তথা ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ হেলায় হারাল, সে কতই না হতভাগ্য! রমযান পেয়ে যে গুনাহ ত্যাগের অনুশীলন করতে পারল না, সে কত বড় বেওকুফ! রমযান পেল, কিন্তু ইবাদত-কে একটু আপন করতে পারল না, সে কতই না নাদান!
আসলেই আমাদের ভাবা দরকার। চিন্তা-ফিকির করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলছেন:
(অর্থ): “রমযান মাস – যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। এই কুরআন – মানুষের জন্য হেদায়াত; যেই কুরআন সঠিক পথ দেখায় ও সত্য-মিথ্যার প্রভেদ করে দেয়।…..” (সূরা বাকারা)
রাসূলে আকরাম ﷺ সারা বছর তো ইবাদত করতেনই, রমযানে একেবারে কোমড় বেঁধে ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতেন। গুরুত্বের সঙ্গে ইবাদতে মগ্ন হতেন। সেই পবিত্র হাদীসে, মিম্বরে উঠতে উঠতে পা রেখে জিবরাঈল عليهم السلام -এর দোআর সঙ্গে যে তিন বার আমীন বলেছেন, তার মধ্যে একটি দোআ এই ছিল: ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি, যে রমযান পেল আর নিজেকে ক্ষমা করাতে পারল না। এর অর্থ, রমযানে এতই ব্যাপক রহমত নাযিল হতে থাকে যে, এই সুযোগ হাতছাড়াকারী সত্যিই কপালপোড়া।
তাই আমরা কোনোভাবেই রমযান মাসকে অবহেলা না করি। খাব, ঘুমাব, কাজ-কর্ম করব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু রোযা তো রাখবই, তারাবীহও পড়ব, কুরআন তেলাওয়াত বাড়াব। জামআতে নামাযের পাশাপাশি নফল নামায বাড়াব, অন্যান্য নফল ইবাদত বেশি করে করব। যিকির-আযকারে মন দিব যত্ন সহকারে, বেশি বেশি দোআ করব, তওবা-ইস্তেগফার করব খুব বেশি। গুনাহ ছাড়ার পোক্ত নিয়ত করে নিব হারাম ত্যাগের ব্যাপারে কঠোর হয়ে যাব, আজীবনের জন্য। নিজেকে আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল করানোর জন্য ব্যাকুল হব ইনশাআল্লাহ।
হে আল্লাহ তুমি তাওফীক দাও, এছাড়া সম্ভবই না।
আখেরাতমুখী হওয়ার এই অপূর্ব সুযোগকে আমরা কাজে লাগাই। গুনাহর দ্বারা, গাফলতির দ্বারা আমরা রমযানকে হেলায় না হারাই। জানিনা এটিই কি আমাদের শেষ রমযান কিনা? জানিনা এটিই কি আমাদের জীবনে শেষ সুযোগ কিনা ক্ষমা অন্বেষণের।
Last Updated on December 12, 2024 @ 8:55 am by IslamInLife বাংলা