মনগড়া পদ্ধতিতে ঈমান ও আমল গ্রহণযোগ্য নয়
নেক আমলের পথে উম্মত আজ সাধারণভাবে যে ধোঁকা খাচ্ছে, তার অন্যতম হল মনগড়া পদ্ধতি অবলম্বন করে আমল করা। যেভাবে ইচ্ছা নামাজ পড়া, যেভাবে ইচ্ছা যিকির করা, যেভাবে ইচ্ছা কুরবানী করা ইত্যাদি। আর মন গড়া পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য সবই আমাদের নেক আমলকে অসম্পূর্ণ ও বরবাদ করে দিচ্ছে। যেখানে দুনিয়ার কাজ-কারবারই যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে করলে লাভের বদলে ক্ষতি হয়, সেখানে ইবাদত বন্দেগী মনগড়া ভাবে করলে যে কত ক্ষতি – সেটা তো সহজেই অনুমেয়! আর যে কিনা সাধারণত ইবাদত বন্দেগি নিয়ম মাফিক করার বিষয়ে উদাসীন হয়, সে দুনিয়ার কাজ করার সময়ও হালাল-হারাম, জায়েয-নাজায়েয, সুন্নত-বিদআত ইত্যাদি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়।
এক তো হল জানার চেষ্টা না করা, আরেক হল সরাসরি অবহেলা। আরেকটা হল দ্বীন যে সকল উৎস থেকে শেখা হয়, সেটাকেই বাঁকা চোখে দেখা ও অবজ্ঞা করা। হায়! আজ ব্যাপকভাবে আমাদের ইবাদত থেকেই ইসলামের নির্দেশনা বের হয়ে যাচ্ছে; সামাজিকতা, কায়-কারবার – এগুলো যে অমুসলমানদের রীতিনীতিতে হচ্ছে – সেটাতো একদমই স্পষ্ট!
এই যে কিছু দিন আগে সমাপ্ত হজ্ব ও কুরবানীর কথাই ধরুন। কত ঈমানদার ভাইয়েরা হজ্বে গিয়েছেন, কুরবানী করেছেন – মাশাআল্লাহ! কিন্তু আফসোস, শরীয়তের বিধি-বিধানকে জেনে অনেকে হজ্ব-কুরবানী করছেন না। হজ্ব-কুরবানী এতো বড় ইবাদত, কিন্তু কিভাবে পালিত হয়েছে, যেভাবে আসলেই আল্লাহর দরবারে তা কবুল ও মকবুলের আশা করা যায়, নাকি সে বিষয়ে কোনো চিন্তা ছিল না?!
অনেক ভাইদের কর্ম পদ্ধতি একদম খোলা চোখে এই প্রমাণই বহন করে যে, তেমন ‘কিছুই না জেনে’ খুব দায়সারা ভাবে এত বড় বড় আমল আঞ্জাম দিচ্ছে, অথবা যেমন দেখছে, মনে হচ্ছে ব্যস – সেটাই করছে। ঈমান এনেছি, নেক আমল করছি – আত্মতৃপ্তি এখানেই। শয়তান ধোঁকা দিচ্ছে, আল্লাহ মেহেরবান। আরে, যে জানাটাই ফরয, সেখানে না জেনে করলেও ‘আল্লাহ মেহেরবান’?!
ঈমানের দাবী কী, ইসলাম-এর উপর চলা অর্থাৎ দ্বীনের উপর চলার অর্থ কী – তা একদম এড়িয়ে এড়িয়ে চলছি আমরা। বই-পুস্তক পড়ে “যা কিছু” বুঝে আসছে – সেটা করছি। যা মনে চায় তা করছি। যেভাবে নিজের মনটা ভরে সেটাই করছি। আমার ছেলের/মেয়ের বিয়ে আমি দিব – যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দিব, কার কী? আমার নামায আমি পড়ব, যেভাবে ইচ্ছা পড়ব, আমার হজ্ব আমি করব – কিভাবে করতে হবে, আমি ভালো জানি, আমার টাকা দিয়ে আমি কুরবানী দিব – যেমনে মনে হয় তেমনে দিব – এই যে এক প্রবণতা শুরু হয়েছে আমাদের মাঝে, তা নিতান্তই দুঃখজনক এবং সর্বনাশা! এভাবেই অনেক ভাইয়েরা সুদ খাওয়া হালাল মনে করে নিয়েছে, এভাবেই তারা নানান রকম হারাম-কে জায়েয ভেবে একদম আশ্বস্ত। সবাই করছে, এভাবেই চলতে হয়, তা না হলে কেমনে চলব? আলেম-উলামারা কি দুনিয়া জানেন আর বুঝেন? অনেকের মনই এই সব চিন্তায় হাবুডবু খেয়ে ধোঁকা খাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেফাজত করুন!
পার্থিব বিষয়গুলির কথা চিন্তা করুন। অল্প লেখাপড়া করলে বা ফাঁকি দিলে তো ছাত্র বেশি থেকে বেশি ফেল করতে পারে, ব্যবসায়ীর ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হলে ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, চাকুরীজীবীর চাকুরীতে বড় সমস্যা হলে বড়জোর চাকুরীটা চলে যেতে পারে। কিন্তু দ্বীনি বিষয়ে না জেনে, না শিখে, মন মতন চলা, মন মতন আমল করা, যা ইচ্ছা করতে থাকা – ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনে। ফল এই হয় যে, দুনিয়াতে জীবন হয়ে যায় অশান্তির, আর গাফলতি ও অবহেলার আমরণ লেগে থাকলে তো আখেরাতে আসছে কঠোর শাস্তি। বহু বছরের নামাজি, বহু বছরের হাজি, যত্নের সাথে লম্বা লম্বা কুর্তা-জামা পরিধানকারী, বাহ্যিক বেশভূষায় দাড়ি ও টুপিওয়ালা পর্যন্ত ‘ধরা’ খেয়ে যাবে। কারণ শুধু এই যে, তুমি ঈমানের দাবী করেছ, নেক আমল করেছ, কিন্তু তোমার শ্রম পন্ড। তোমার কাজের সাথে তোমার নবীর কাজের মিল হয়নি। তুমি ঠিক-ঠাক মতন জেনে, দ্বীন-কে শিখে-বুঝে জীবনে দ্বীন বাস্তবায়ন করনি।
একটি কথা এতো শুনি আমরা, কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষ এর দ্বারা ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত। সেটা হল আমাদেরকে রাসূল ﷺ-এর অনুকরণ-অনুসরণ করতে হবে। ব্যাপকভাবে উম্মত আজ এই বিষয়ে চরম অবহেলা প্রদর্শন করছে। প্রতিটি কাজে নবীজী ﷺ-এর যে নীতি নির্দেশনা রয়েছে তা একজন মুসলমানের আমল করার জন্য মৌলিক মানদন্ড বটে। কিন্তু সুস্পষ্ট নির্দেশনাগুলি অহরহ আমাদের দ্বারা লঙ্ঘিত হচ্ছে! অথচ অনেক খুঁটিনাটি দ্বীনি বিষয়ে আমরা (সাধারণ মানুষ) আলোচনা, পর্যালোচনা ও তর্কে লিপ্ত, যেটা মারাত্মক অনধিকার চর্চাই বটে।
আমরা প্রত্যেকে নিজেদের উপর রহম করি। পবিত্র কুরআন, আহাদীস-এর ধারক ও বাহকগণ আজও রয়েছেন (সব সময় থাকবেন); মনগড়া পদ্ধতিতে নয়, নিজেকে আন্তরিকভাবে তাদের হাতে আমরা সোপর্দ করি। সাথে সাথে আন্তরিকভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে দোআ-র মধ্যে লেগে যাই। আন্তরিক দোআ ও প্রচেষ্টা ছাড়া সঠিক পথ পাওয়া অসম্ভব – আরো বিশেষভাবে এই কঠিন ফেতনার যুগে। আন্তরিকতা থাকলে ও সাধ্যমত প্রচেষ্টা থাকলে সিরাতে মুস্তাকীম সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হন। (আমীন)
Last Updated on January 4, 2024 @ 4:45 pm by IslamInLife বাংলা