বিশ্ব ইজতেমা: উম্মতকে এক ও নেক তৈরির বিস্ময়কর ঈমানী আন্দোলন
প্রতি বছর ঢাকার অদূরে টঙ্গীর মাঠে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ বছরও (২০১৬ ইং) ৮ই জানুয়ারী থেকে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ উপলক্ষে বহু বিদেশী জামআত বাংলাদেশে।
আসলে এই ইজতেমা কী? এর অন্যতম উদ্দেশ্য হল, উম্মতকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে এই উম্মতের মূল্য কত বেশি। সর্বশেষ নবীর আমরাই হলাম সর্বশেষ উম্মত। শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত। কিন্তু কথা হল, যে যার গুণের কারণে শ্রেষ্ঠ হয়, সেই গুণ তার মাঝে না থাকলে কি আর শ্রেষ্ঠ থাকা যায়? আমরা কি শ্রেষ্ঠত্বের গুণ অক্ষুণ্ণ রেখেছি? হ্যাঁ, সাহাবা رضي الله عنهم ছিলেন শ্রেষ্ঠ। সেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন তো অসম্ভব। কিন্তু কমপক্ষে তাদের অনুসরণ ও অনুকরণ কি কিছু হলেও আমাদের মাঝে আছে? উনারা দ্বীনের কাজ যে কুরবানী ও মুজাহাদা অর্থাৎ, ত্যাগ ও কষ্ট-ক্লেশের মাধ্যমে করেছেন, আজ সেই অনুপাতে আমাদের অবস্থা কী? এটা প্রত্যেকের নিজেরটা নিজের ভেবে দেখা উচিত।
দাওয়াত ও তাবলীগ-এর শিরোনামে যে কাজ চলছে, তা কথাটিই স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য।
অন্তর ভরা ব্যথা এবং উম্মতের জন্য দুআ। এটা তো প্রিয় নবীজি ﷺ এর সুমহান সুন্নত। যুগে যুগে উলামাগণ ও আল্লাহ ওয়ালাগণ-তো এই সুন্নত জীবিত করতেই দিন-রাত উজাড় করছেন। এখন সাধারণভাবেও পুরা উম্মত এমনই অবস্থায় উপনীত যে, সত্যিই প্রয়োজন ছিল এমন একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ, বরং সর্বস্তরের উম্মত এক হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে কাজ করবে। আল্লাহ তাআলার শোকর! সেই কাজ তিনি কতিপয় বিশেষ বান্দা এবং খুব উঁচু পর্যায়ের উলামাগণ দ্বারা শুরু করে দিয়েছেন। আজ তো এমন অবস্থা, আরব-আযম – সবখানে এ কাজ চলছে – মাশাআল্লাহ।
আসলে আল্লাহ তাআলার দ্বীন আল্লাহ তাআলা নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ও সমুন্নত রাখবেন। সেজন্য তিনি ব্যবহার করবেন যাকে ইচ্ছা হয় তাকে। দ্বীনি কাজগুলোর মধ্যে দাওয়াত-তাবলীগের কাজ অন্যতম। এই কাজটি আল্লাহ তাআলা মূলত নবী عليهم سلام -এর উপর অর্পণ করেছেন। আজ উম্মতের মাঝে নবী নেই, আর আসবেও না। কে করবে? উলামা অর্থাৎ আলেমগণই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে; যেটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তাদের সাথে পুরো উম্মত সাধ্যানুযায়ী অংশগ্রহণ করবে। দ্বীনের যেকোনো কাজের মূল জিম্মাদার সবসময় উলামায়েকেরাম। তাদের অনুগত হয়ে থাকা উম্মতে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর কায়েম ও দায়েম থাকবে।
এই দাওয়াত-তাবলীগের কাজ যখন উম্মত করবে তখন কী হবে? উত্তর সহজ। সাহাবা رضي الله عنهم যখন করেছিলেন তখন কী হয়েছিল? আল্লাহ তাআলা সাহাবা رضي الله عنهم -কে হেদায়াতের চেরাগ বানিয়েছেন। আমরাও এই কাজটি আন্তরিকতার সাথে করলে উম্মতের মাঝে হেদায়াতের চেরাগ হতে পারব ইনশাআল্লাহ। প্রথমত, নিজে হেদায়াতের পথে অটল থাকা সহজ হবে। আবার উম্মতের শ্রেষ্ঠ অংশের সাথে আমাদেরও মিল হবে ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে দাওয়াত-তাবলীগের কাজের পদ্ধতি নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয় তা অবান্তর। কাজ করার প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও পদ্ধতির যে আয়োজন তা সহায়ক এবং যে যুগে উলামাগণ যে পদ্ধতি ও উপায় অবলম্বন বেশি উপকারী মনে করবেন সেটা প্রয়োগ করেন। সেটা প্রয়োগের নির্দেশনা দেন, নেতৃত্বও দেন। আল্লাহ তাআলার হুকুম থেকে সরে না গিয়ে উপায় অবলম্বন ও ব্যবস্থা গ্রহণ শরিয়ত অনুমোদন করেছে। তাই না জেনে, না বুঝে আমরা যেন মন্তব্য না করি। প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আলেমের কাছে যাই – জিজ্ঞাসা করে নিজের ভুল শুধরে নিই।
বিশ্ব ইজতেমার একটি বয়ান শুনলে যে কোনো বিবেকবান বুঝবে যে, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পার্থিব নয়। মুসলমানের মূল লক্ষ্য তো আখেরাতই। হ্যাঁ, আখেরাতের লক্ষ্যে আমল করেই মুমিনের দুনিয়া হয় রহমতের, শান্তির, সম্প্রীতির এবং সমৃদ্ধির। উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নেক হয় এবং সমষ্টিগতভাবে পুরো উম্মত যেন এক ও নেক হয়, আল্লাহ-মুখী হয়, সেই ঈমানী আন্দোলনের প্রতীক এ বিশ্ব ইজতেমা। আজতো উম্মত দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর করা জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করছে। সফলতা হল আখেরাতের জীবনকে প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়ার প্রয়োজন মিটিয়ে, দ্বীনের জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে মুসলমান থেকে নিজেকে মিটিয়ে দেয়া। এর ফলেই পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। এই পয়গামই বিশ্ব মুসলমান নয়, প্রথমত নিজের প্রতি ও সাথে সাথে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেয়াই বিশ্ব ইজতেমার মূল লক্ষ্য।
হে আল্লাহ! এই মহৎ ও কল্যাণকর মেহনতে তুমি আমাদের সবাইকে কবুল কর – আমীন।
Last Updated on August 15, 2022 @ 9:53 am by IslamInLife বাংলা