বিবিধ প্রবন্ধ

ফেতনা: তার রূপ ও সে সময় করণীয়: ৮

কেয়ামত পূর্ববর্তী সময় ও ফেতনা যুগ বিষয়ে এভাবে বহু বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।

সর্ববৃহৎ ফেতনার অন্যতম যেটা, কোনো কোনো হাদীসে যাকে ‘অন্ধ ও বধির ফেতনা’ আখ্যা দেয়া হয়েছে, তা হল মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ ও কলহ-বিবাদের জটিল পরিস্থিতি। যখন কিনা হক ও না-হক পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।

একটি হাদীসে আছে, শীঘ্রই এমন সময় আসবে যখন মানুষ হয় বোকা সাব্যস্ত হতে বাধ্য হবে অথবা অনৈতিকতা বা পাপাচার অবলম্বন করতে হবে। অতএব যদি কেউ ঐ সময়ের সম্মুখীন হয়, সে যেন পাপাচার অবলম্বনের পরিবর্তে হাসির পাত্র হওয়াটাই গ্রহণ করে নেয়। কানযুল উম্মাল

আরেকটি হাদীসে আছে (অর্থ): আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল আল্লাহর হুকুমের উপর অবিচল থাকবে। তারা কখনো তাদের পরিত্যাগকারী বা তাদের বিরুদ্ধচারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না (অর্থাৎ, ধ্বংস হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে না, বাকি থাকবেই)। তারা আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুত সেই সময়ের পূর্ব পর্যন্ত (অর্থাৎ, কেয়ামত) সঠিক পথেই থাকবে। বুখারী, মুসলিম

হাদীসে পাকে একদিকে ফেতনা-ফ্যাসাদ যুগের ভয়াবহ ও করুণ চিত্রের বর্ণনা আর অন্যদিকে এই বাণী যে, এ অবস্থার মাঝেও আল্লাহর হুকুমের উপর দৃঢ়পদ মুসলমানদের চিত্র। যে বর্ণনাগুলো দ্বারা একথা সুস্পষ্ট যে, এ কঠিন থেকে কঠিন সময়গুলিতেও আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺএর নির্দেশনা মেনে চলা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

তিরমিযীতে বর্ণিত সেই প্রসিদ্ধ হাদীস, যা আমাদের প্রায় সবারই জানা। আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে যে, ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ঐ সময় ঐ ব্যক্তির ন্যায় হবে, যে হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণ করে আছে।

একটি কথা মুমিন হৃদয়ে গেঁথে নেয়া উচিত। সেটা এই যে, প্রতিকূল এ অবস্থাগুলো মুমিনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি। অন্যদিকে এগুলোই কাফের ও পথভ্রষ্টদের জন্য কেবল ক্ষণিকের সুযোগ। এই সুযোগ পেয়ে তারা যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে ও দাপট দেখাবে, তার পরিণতি হবে নিজেদেরই চিরস্থায়ী ক্ষতি।

মুমিন ঐ সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করে যাচাই করবে যে, আমি আল্লাহর পথে দৃঢ়পদ আছি তো? আমি এ অবস্থায় আল্লাহর সীমারেখা থেকে বের হয়ে যাইনি তো?

অবশ্যই, প্রয়োজনে দ্বীনদার ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গকে ঐ সময়ে কখন কী করণীয় তা জিজ্ঞাসা করে, কুরআন-সুন্নাহর ছায়াতলেই সে অবস্থান করবে। কারণ, মুক্তির সবসময় একমাত্র পথ এটাই।

Last Updated on February 4, 2023 @ 9:58 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it