প্রবৃত্তির অনুসরণ পার্থিব ও পরকালীন সফলতা ধ্বংসকারী
প্রবৃত্তির অনুসরণ মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। আর যে কিনা মনের বিরোধিতা করে চলে সে লাভবান হয়। এটি এমন একটি সূত্র যে, ঈমানদার ও অবিশ্বাসী সবাই স্বীকার করে, সবাই বিশ্বাস করে।
একজন ঈমানদার মনের বিরোধিতা করেই আল্লাহ তাআলার পথে চলে থাকে। তার সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে সকাল — পুরো সময়টিতে যত কাজ হয় — মনের বিরোধী হয়েই সে এগিয়ে যায়। অবশ্য সব ঈমানদারের অবস্থা এক নয়। ঈমানের স্তরভেদে প্রবৃত্তি বা মনের বিরোধীতায় পার্থক্য হয়। কিন্তু মৌলিক বিষয়টি যেন একই।
প্রবৃত্তির চাহিদাকে দমন না করলে অধিক ও স্থায়ী শান্তি অর্জন সম্ভব হয় না। মনের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে থাকলে ক্ষণিকের শান্তি আর আরাম, চিরদিনের শান্তি ও আরামকে ব্যাহত করে দেয়। এর চেয়ে কষ্ট ও যন্ত্রণা কী হতে পারে?!
যারা চিরকালের শান্তি ও আরামের তোয়াক্কা করে না — একজন ঈমানদারের কি তাদের মতন হওয়া সাজে? কখনো নয়।
নিজের বড় ক্ষতি করে কেউ কি শান্তি ও আরাম লাভ করতে পারে? কোনোদিন সম্ভব নয়। কত মানুষ মন মতনই চলছে কিন্তু তাদের শান্তি ও আরাম কেন উবে যায়, চিন্তা করুন। অথচ তারা অনবরত মনমতনই কাজ করছে! মন যা চাচ্ছে তা-ই করছে। কিন্তু তারা শান্তি পাচ্ছে না। অন্তরে তাদের কোনো প্রশান্তি নেই। এর কারণ হল, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই এ প্রকৃতি ও নিয়ম বানিয়ে দিয়েছেন যে, মন মতন চললে ক্ষতি অনিবার্য। নিয়ম-নীতি অনুসরণে সার্থকতা-সফলতা, যদিও তা মনের বিরোধী।
মনের অনুকূলে চলেই মানুষ নিজেদের দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে দিচ্ছে। একজন অমুসলমান সেটা বুঝে কেবল দুনিয়ার ক্ষেত্রে। কারণ তার তো আখেরাতের শান্তি ও শাস্তির বিশ্বাস নেই। একজন মুসলমান সেটা বুঝে দুনিয়া ও আখেরাত — উভয় ক্ষেত্রে। তাই মনের বিরোধিতায় একজন মুসলমানের লাভ অনেক বেশি। কারণ তার লাভ দুনিয়া ও আখেরাতে! ঈমানের সৌভাগ্য যেই অর্জন করেছে তারই এ কথা বুঝে আসে যে, মনের বিরোধী হয়ে চলতে হবে তবু আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ ত্যাগ করা যাবে না। একজন ঈমানদারের সামনে তাই এ কথাও স্পষ্ট যে, যদি সে মনের অনুকূল চলতে থাকে, ক্ষতি অনেক বেশি; কারণ, ক্ষতি কেবল পার্থিব হায়াতে নয়, চিরস্থায়ী আখেরাতেও।
ফজরের নামায জামআতে পড়লাম না কিন্তু সকালে অফিসে সময় মতন উপস্থিত হলাম। বন্ধুর সঙ্গে গল্পগুজবে এক ঘন্টা কম মনে হয় কিন্তু আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথপোকথন (অর্থাৎ, তেলাওয়াত ও নামাযে মনোনিবেশি) কঠিন মনে হয়। এ অবস্থা কেন হয়েছে? কারণ, আমরা মনের বিরোধিতা করিনি। যদি করেও থাকি, লক্ষ করুন, সঠিক জায়গায়, সঠিকভাবে করিনি। যেখানে মনের বিরোধিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেখানে কম করেছি। দুঃখজনক ও বিস্ময়কর নয় কি যে, সন্তানকে লেখাপড়ার স্বার্থে দূর-দূরান্তে পাঠিয়ে দিতে মাতাপিতা রাজি, কিন্তু নিকটবর্তী মসজিদে পাঠাতে নানান দ্বিধা! আমাদের মন সন্তানকে সেখানে পাঠাতে বিরোধিতা করছে যেখানে পাঠানো তাকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বরং জরুরি।
আল্লাহ তাআলা লাগামহীন প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি অনুসরণের সর্বনাশা পরিণতি জানিয়ে দিয়েছেন:
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِن بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
Last Updated on September 26, 2023 @ 10:18 am by IslamInLife বাংলা