পারিবারিক অশান্তি: কোথায় আসলে সমাধান
এই একটি বিষয় এত জটিল আকার ধারণ করেছে যে তার মাত্রা সমাজের শিক্ষিত, সচেতন – সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বাস্তবিকই, ঘরেই যদি শান্তি পাওয়া না যায়, বলুন – এর চেয়ে দুঃখ-কষ্টের কি আছে?
মুসলমানদের জন্য এখানে অন্য কিছু ভাবার কোনো অবকাশ আছে কি? যারা বস্তু জগতের সাথে সম্পর্ককেই আসল ও একমাত্র মনে করে তাদের মত আমরাও কি “একই তালে” চলব? ফল তাহলে এই হবে যে, সমস্যা, অসুবিধা, বিপদাপদ কমবে তো না, বেড়ে আরো আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
আসল সমাধান কুরআন ও হাদীসে। আসল সমাধান দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু আমাদের আন্তরিকতা লাগবে। সত্যিকার ভাবে নত হতে হবে আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى -এর হুকুমের প্রতি। ঔষুধ কখনো অনেক তিতা হয়, চিকিৎসা কখনো অনেক দীর্ঘ হয়। এর কারণ হিসেবে ডাক্গতারণ যেমন বলেন, আগের সব চিকিৎসাতো ভুল হয়েছে। এখন আমি আঙ্গুলের তুড়িতে কিভাবে রোগী বাঁচাবো? ঔষুধ খাও, নিয়ম মানো – আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে ধৈর্য সহকারে চিকিৎসাধীন থাকো, আশা আছে সুস্থ হয়ে যাবে। আমাদের অনেকের পারিবারিক সমস্যাতো এমন পর্যায়ের যে, তাদের জন্যও ডাক্তারদের এই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু এখানে আশার কথা এই যে, ডাক্তারগণ রোগীদের যত না আশার বাণী শোনান, উলামাগণ তার চেয়ে অনেক বেশি উম্মতকে আশার কথা শোনান। কারণ, যখন কারো দ্বীনের জ্ঞান আসা শুরু হয়, সে বুঝে যে আমাকে আল্লাহ তাআলার নাফরমানি করে নয়, বরং, তার ফরমারদারী করে শান্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে, তখন সে আল্লাহ তাআলার রহমত প্রাপ্তও হয় খুব দ্রুত। উলামাগণও তাকে আরো আল্লাহ-মুখী হতে নির্দেশ দেন ও সাথে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে সাহায্য করেন।
আপনি পরিবারের একজন সদস্য। সে হিসেবে পরিবারের সব সমস্যা নিরসনে যে কোনো অবস্থায় নেক নিয়ত লাগবে। দ্বন্দ্ব-কলহ নয়, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ লাগবে। অহংকারী মনোভাব নয়, বিনয়ী হতে হবে। হিংসা নয়, উদারতা প্রয়োজন। ক্ষিপ্ত হয়ে, যত্রতত্র মুখ চালনা করে, নিজের মনোভাব ও সিদ্ধান্তকে অন্যদের উপর জোর করে চাপিয়ে কখনো শান্তি আসবে না। আপনি পরিবারের কর্তা বা গৃহকর্ত্রী হলে তার সবর, ভারসাম্য, অন্যদের প্রতি লক্ষ্য ইত্যাদি খুবই সতর্কতাপূর্ণ হওয়া চাই। পরিবারের কর্তার উচিত স্নেহশীল ভূমিকা নিয়ে সবার সাথে কথা বলা। প্রতিদিন বাড়িতে সবাইকে নিয়ে দ্বীনি তালীম করা। প্রতি সপ্তাহে বা কমপক্ষে প্রতি মাসে সবাইকে নিয়ে পরামর্শে বসা। সবার প্রয়োজন যথাসম্ভব খোঁজখবর নেওয়া। কলহ-বিবাদ হলে তা মীমাংসায় কখনই খুব বেশি এক পক্ষ না নেওয়া উচিত। সদস্যদের মাঝে যারা বয়সে একটু বড় ও তুলনামূলক যারা ছোটো তাদের শাসনের কায়দা এক হওয়া উচিত নয়। বড় ছেলে বা মেয়েকে যে কায়দায় শাসন করা হবে, ছোটোদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হয় না।
কখনো কখনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কলহ-বিবাদ বা মনোমালিন্য হয়। স্বামী-স্ত্রীর এরূপ বিষয়াদি যত প্রকাশ্য হয় অথবা প্রকাশ পায় ততই ক্ষতিকর। প্রকাশ হয়ে গেলেও, অন্য কেউ তাতে তাৎক্ষণিক নাক গলানো ঠিক নয়। অবশ্য তারা যদি মুরুব্বীদের শরণাপন্ন হন, সেটা ভিন্ন কথা। স্বামী-স্ত্রীর নেতিবাচক কথা বা স্ত্রী-স্বামীর নেতিবাচক কথা যতই হজম করবে ততই ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। তাদের মাঝে আন্তরিক ভালোবাসা থাকলে – ব্যস – একটু কথা কাটাকাটি, এমনকি মাঝেমধ্যে ঝগড়া-বিবাদও সাময়িক বিষয়, এগুলোকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। বরং এটা এই ঈঙ্গিত বহন করে যে, তারা পরস্পরের আকাঙ্ক্ষী।
সবার যার যার পক্ষ থেকে খেয়াল রাখা উচিত যে পরিবারের কোনো কলহ-দ্বন্দ্ব, সমস্যা-অসুবিধা ইত্যাদি যেন স্থায়ী না হয়। যে পক্ষ যত সবর করবে ও বিনয়ী হবে সে পক্ষ তত সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। খোটা মেরে কথা, লাগালাগি জাতীয় কথা, হিংসা-কুটনামি অনেক বড় গুনাহ বটে। বরং, প্রত্যেককে ছাড় দেওয়ার মনোভাব ও ক্ষমা চাওয়ার এবং ক্ষমা করার মনোভাব থাকতে হবে, এগুলো অনেক বড় নেক কাজ। এই সব বিষয়ে ঘরে তালীম হতে থাকলে মনোভাব ইতিবাচক হতে থাকবে। রাসুলে কারীম ﷺ-এর যে পবিত্র আচরণ ও আখলাক, সেটাই আমাদের অনুসরণীয় ও অনকরণীয়। সাহাবাগণ رضي الله عنهم -এর পবিত্র জীবন আমাদের জন্য পাথেয়। সীরাতুন্নবী ﷺ ও হায়াতুস-সাহাবা رضي الله عنه থেকে পারিবারিক জীবন সম্পর্কিত ঘটনাবলি ও উপদেশাবলি বার বার পাঠ করে চিন্তা ফিকির করা উচিত।
উম্মত “চেষ্টা” করার সঠিক অর্থ যেন আজ ভুলতে বসেছে। পারিবারিক কোনো সমস্যা হলে মিটিং-আলোচনা যতটুকু হয়, হায়! দোআ যদি তার “এক আনা” পরিমাণও হত। সব বিষয়ের জন্যই তো আমরা আল্লাহ তাআলারই মুখাপেক্ষী। তার কাছে চাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। কল্যাণ, শান্তি, সমাধান তো তারই হাতে। আমরা আমাদের ঈমানী শক্তি, বিবেক, বু্দ্ধি যা-ই প্রয়োগ করিনা কেন, সাহায্য এবং শেষ ফল আল্লাহ তাআলারই কাছে, তার হুকুমেই সব কার্যকর হয়। তাই তার কাছ দোআ করতে হবে, তার সাহায্য চাইতে হবে। এর ফলে দেখবেন, কত বিস্ময়করভাবে নানান পথ আপনা-আপনিই খুলে যাবে ইনশাআল্লাহ।
Last Updated on May 21, 2024 @ 5:50 pm by IslamInLife বাংলা