সুলাইমান খাওয়্যাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৬০ হিজরী : ৭৭৭ খৃস্টাব্দ)
কবরের জীবনে আলো পাওয়ার আশায় যিনি রাতের আঁধারে বিনিদ্র থেকে ইবাদত-বন্দেগী করেছিলেন। আবিদ ও যাহিদ। সিরয়ী ব্যক্তিত্বপূর্ণ মনীষীদের তিনি একজন। নিজের জন্য বিশেষ এক হায়াত ও জীবনকাল চিত্রিত করেছেন। যার পরিধি অনেক উঁচু এবং দুর্ভেদ্য। তিনি সুলাইমান খাওয়্যাস। ফিতনা-ফেসাদ ও খায়েশ-প্রবৃত্তি হৃদয়কে আচ্ছন্ন করতে অনেক কোশেশ করেছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। কান্নাকাটি আর রোনাজারি করে জীবনকাল কাটিয়েছেন। খোদাভীতি যার হৃদয় আঙ্গিনায় নীড় বেঁধেছিল।
সুলাইমান খাওয়্যাস এক মজলিসে বসে আছেন। সেই আসরে বেশ কিছু উলামা কেরাম বসে আছেন। যাদের মধ্যে ইমাম আওযায়ী এবং সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীযও রয়েছেন। ইমাম আওযায়ী রহ. যাহিদ ও দুনিয়াত্যাগীদের নিয়ে আলোচনা করলেন। তাদের সীরাত ও জীবনী নিয়ে বিচরণ করতে লাগলেন। সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বললেন, সুলাইমান খাওয়্যাস থেকে বড় কোন যাহিদ আমি দেখিনি। তখনও তিনি সুলাইমান খাওয়্যাসকে মজলিসে দেখেননি। একথা শোনে সুলাইমান মাথা ঢেকে নিলেন। নিঃশব্দে সটকে পড়লেন। ইমাম আওযায়ী রহ. সাঈদকে ধমক দিলেন। কী সর্বনাশ! তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি নেই? কেমন বেফাঁস কথা বলছো। উপস্থিত লোককে কষ্ট দিচ্ছো। তাকে (উপস্থিত লোক বলতে সুলাইমান খাওয়্যাসকে বুঝানো হয়েছে) তার আসন ছাড়তে বাধ্য করছো; কারণ তুমি তাকে মুখের সামনে প্রশংসা করছো। লজ্জার মাথায় সে ওঠে গেলো।
এক রাতে সাঈদ বিন আব্দুল আযীয দেখতে গেলেন সুলাইমান খাওয়্যাসকে । তিনি বৈরুতের বাড়িতে আছেন। বাড়িটি নিকষ আঁধারে নিমজ্জিত। বললেন, এ কেমন অন্ধকার? সুলাইমান বললেন, কবরের অন্ধকার আরও বেশি। এরপর সাঈদ একটি থলে বের করলেন। তাতে কিছু দিরহাম ছিল। সেই ব্যাগটি সুলাইমানকে দিলেন। বললেন, এক বন্ধুর প্রতি আরেক বন্ধুর হক ও অধিকার রয়েছে। আমার আশঙ্কা আমি আমার হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারিনি।
এরপর বললেন, এগুলো নিন। (আপনাকে আশ্বস্ত করতে) আমি আল্লাহ তাআলাকে সাক্ষী বানিয়ে বলছি এগুলো হালাল মাল। সুলাইমান বললেন, এগুলো আমার দরকার নেই। সাঈদ বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনার উপর রহম করুন। মানুষের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। সুলাইমান চেঁচিয়ে বললেন, সাঈদ! তুমি দুনিয়া দিয়ে আমাকে ফিতনায় ফেলেছো। একটু পর তুমি আমাকে দ্বীনের বিষয়ে ফেতনায় ফেলে দেবে?!
মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে তিনি চলে গেলেন ১৬০ হিজরীতে।