ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ২০৪ হিজরী : ৮২০ খৃস্টাব্দ)

তিনি যদি বেশি বেশি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পেতেন উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য অন্য কোন ফকীহ’র দরকার হতো না। মানুষের আকল-বুদ্ধি ওজন করা হলে শীর্ষে তিনি থাকবেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (স্বপ্নযোগে) যার মুখম-লে থুতু নিক্ষেপ করেছিলেন। এমন এক ব্যক্তি যিনি শারীরিক অবয়ব ও চারিত্রিক গুণাবলীতে পূর্ণতাকে ছুঁয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিলেন। যাঁর প্রাণবন্ত আশা-আকাক্সক্ষা যুহদ ও তাকওয়ার পুষ্পস্তবক পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। তিনি মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস ইবনুল আব্বাস ইবনে সায়িব ইবনে হাশিম ইবনুল মুত্তালিব ইবনে আবদি মানাফ। কুরাইশ বংশোদ্ভূত। তিনি সৈয়দ বংশধর। যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও ফকীহ-বিশিষ্ট ইসলামী আইনজ্ঞ। ইলমে হাদীসের ধারক। ইমাম চতুষ্টয়ের তিনি একজন। তিনিই শাফেয়ী মাযহাবের প্রবক্তা।

প্রধান ইমাম হযরত আবূ হানীফা রহ. যে বছর ইন্তেকাল করেন সেই বছর ইমাম শাফেয়ী রহ. ফিলিস্তীনের গাজা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাতুলালয় মক্কা নগরীতে মায়ের কাছে অনাথ অবস্থায় বেড়ে ওঠেন। পরবর্তীতে বড় হয়ে মদীনা শরীফে ইমাম মালিক রহ. এর নিকট এসে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাকে পছন্দ করেন। অনেক দিন মদীনা শরীফে অবস্থান করেন। এক পর্যায়ে ইমাম মালিক রহ. এর উপস্থিতিতে ইমাম শাফেয়ী রহ. ফাতাওয়া দিয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স বিশ বছর।
‘মুয়াত্তা’ নামক হাদীসগ্রন্থ মুখস্থ করেছিলেন। আরও পরে ইরাকের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সফরসঙ্গী ছিলেন ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.।
ইমাম শাফেয়ী রহ. বিশুদ্ধভাষী ছিলেন। ভাষাবিদ ও বিখ্যাত কবি। অনন্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। বিদগ্ধ আলেম ছিলেন। শক্তিধর তার্কিক ছিলেন। এমনকি তর্ক ও বাহাসে এক হাজার লোকের বিপরীতে তিনি একাই সহজেই বাজিমাত করতে পারতেন।
একবার এক লোক ওয়ায-উপদেশ চেয়ে তাঁর কাছে আসে। তিনি তাকে বললেন, যুহদ ও দুনিয়াত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ কর। ইবনে রাহওয়াই রহ. বলেন, আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. এর সাথে মক্কা শরীফে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আসো আমি তোমাকে এমন এক ব্যক্তি দেখাই যার মতো মানুষ তোমার দু’চোখ দেখেনি। লোকটি বলে, একথা বলে তিনি আমাকে ইমাম শাফেয়ী রহ.কে দেখালেন। বাদশাহ মামূনুর রশীদ রহ. বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ.কে সকল বিষয়ে পরীক্ষা করে তাকে আমি পরিপূর্ণ ও কামেল লোক হিসেবে পেয়েছি। যোগ্যতার নিক্তিতে তিনি নিকষিত।
দানের জন্য দু’হাত খোলা ছিল। কল্যাণ ও ভালো তাঁর বাহুবেষ্টিত ছিল। বসন্তের বায়ুর ন্যায় তাঁর দান-দাক্ষিণ্য ছিল। উপহার-উপঢৌকন ছিল দরিদ্রবান্ধব। একবার ইমাম শাফেয়ী রহ. ইয়ামেন থেকে আগমন করলেন। তাঁর সাথে বিশ হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা)। মক্কা শরীফের বাইরে তিনি একটি তাঁবু বানালেন। মুহূর্তের মধ্যে তিনি সেগুলো দান করে বিলিয়ে দিলেন।
ইমাম মুযানী রহ. বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ. এর চেয়ে অতি সম্মানিত অন্য কাউকে দেখিনি। ঈদের রাতে তাঁর সাথে মসজিদ থেকে বের হলাম। একসাথে আসতে আসতে তাঁর বাড়ির গেইট পর্যন্ত আসলাম। এমন সময় ব্যাগ নিয়ে এক গোলাম হাজির। বলল, মনিব আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। আপনাকে এই ব্যাগটি নিতে অনুরোধ করেছেন। ইমাম শাফেয়ী রহ. ব্যাগটি নিয়ে আস্তিনে রাখলেন। এমন সময় মজলিস থেকে এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বললেন, আবূ আব্দুল্লাহ্! এ মুহূর্তে আমার বিবির বাচ্চা হয়েছে। খরচ করার মতো আমার কাছে কোন অর্থকড়ি নেই। কথা শোনে তিনি তাকে ব্যাগটি দিয়ে চলে এলেন। অথচ সেই মুহূর্তে ইমাম শাফেয়ী রহ. এর নিকটও কোন অর্থকড়ি ছিল না।
একদিন বাদশাহ হারূনুর রশীদ ইমাম শাফেয়ী রহ.কে এক হাজার দীনার দিতে ফরমান দিলেন। তিনি একহাজার দীনার নিতে সম্মতি জ্ঞাপন করে সেখান থেকে বের হয়ে গেলেন। বাদশাহ হারূনুর রশীদ কাজের লোককে বললেন, বের হয়ে ইমাম শাফেয়ীকে অনুসরণ কর। তিনি একহাজার দীনার গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি এক হাজার দীনার দীনদরিদ্র লোকদের মাঝে মুষ্টিভরে বিলিয়ে দিতে লাগলেন। বাড়িতে আসার আগ পর্যন্ত তার শুধু এক মুষ্টি দীনার ছিল। সেটাও কাজের লোককে দিয়ে বললেন, তুমি এটা তোমার কাজে লাগাও। কাজের লোক ফিরে এসে বাদশাহকে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে শোনায়। বাদশাহ হারুনুর রশীদ বললেন, এ জন্যই তাঁর কোন দুশ্চিন্তা নেই এবং কোআবূ সুলাইমান দারানী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(মৃ. ২১৫ হিজরী : ৮৩০ খৃস্টাব্দ)

ঘুমের মজার চেয়ে মুনাজাতের মজা যাঁর অধিক পছন্দনীয়। মাবুদের কাছে রোনাজারি যাঁর নিকট অগ্রাধিকারভাবে সমাদৃত। উদর জ্বালায় নিজেকে রেখে যিনি হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন করেছিলেন। যুহদের সিঁড়িতে তাকওয়া ছিল যাঁর প্রথম ধাপ। দিবসের ক্ষুধা আর রজনীর বিনিদ্রা হাতিয়ার দিয়ে যিনি দুনিয়ার ধোঁকা দূরীভূত করেছিলেন। হৃদয় মরিচা আর আত্মমল ধুয়ে-মুছে সাফসুতরা করেছিলেন ক্ষুধার অস্ত্র ব্যবহার করে। জাগতিক ক্ষতি সাধন করে আখেরাত লাভ করেছিলেন। তিনি আবূ সুলাইমান দারানী। আব্দুর রহমান ইবনে আহমাদ ইবনে আতিয়্যা আলআনাসী। দামেস্কের দারাইয়া এলাকার বিখ্যাত যাহিদ। কিছু দিন বাগদাদেও ছিলেন। পরবর্তীতে আবার সিরিয়ায় আসেন।
হিকমত ও প্রজ্ঞার তূণীরে যার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। যা দিয়ে তিনি দুনিয়া গরিমা ধূলিস্যাৎ করেছিলেন। তাঁর কথায় হৃদয়ের মরিচা দূর হতো। হযরত আবূ সুলাইমান বলেন, যা কিছু আল্লাহ তাআলা থেকে নির্লিপ্ত রাখে তার ত্যাগ করাই হল যুহদ। ছোট আশা পোষণ করে যুহদ অর্জন কর। জাগতিক মোহ দূর করার প্রতিষেধক হিসেবে তিনি বলতেন, সামান্য ক্ষুধা, সামান্য রাত জাগা এবং সামান্য শীতে দুনিয়া মোহ দূর হয়। তিনি আরও বলেছেন, তাকওয়া হল যুহদের প্রথম পদক্ষেপ।
আহার কমানোর জন্য তিনি উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, আখেরাতের চাবিকাঠি হল ক্ষুধা। দুনিয়ার মূল চালিকাশক্তি হল উদরপূর্তি। দুনিয়া ও আখেরাতে সকল কল্যাণের মূল নিয়মক হল খোদাভীতি। একদিন তিনি লোকদেরকে ওয়ায-উপদেশ দিতে বের হলেন। বললেন, হৃদয় ক্ষুধিত ও তৃষিত হলে স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন হয়। পক্ষান্তরে পরিতৃপ্ত হলে এবং আশ মিটিয়ে পানাহার করলে তা ভোঁতা হয়ে পড়ে।
তিনি বলতেন, সকল কিছুতে মরিচা লাগে। পরিতৃপ্ত পানাহার হল আত্মার মরিচা। তিনি নিজের শিষ্যদেরকে দুনিয়াত্যাগে উৎসাহিত করতে বলতেন, আখেরাতের জন্য যে দুনিয়া ত্যাগ করবে সে উভয় জাহানে লাভবান হবে। পরন্তু যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য আখেরাত ছাড়বে সে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি সুনাম-সুখ্যাতি থেকে দূরে থাকতেন। নিঃসঙ্গতা পছন্দ করতেন। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে ভালোবাসতেন। তিনি বলেছেন, তুমি যদি কোনভাবে অখ্যাত-অজ্ঞাত থাকতে পারো এবং (তোমার প্রতি) অঙ্গুলি নির্দেশিত না হয়ে থাকতে পারো তাহলে তুমি তা কর।
রাতের বেলায় তিনি অশ্বারোহী। যিকিরের নূরে নেককার লোকদের রাত আলোকিতকারীদের তিনি একজন। যারা তাসবীহ’র গুঞ্জনে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয় তিনি তাদের একজন। ভোর রাতে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে তিনি বসে আছেন। কিয়ামুল লাইলের আবেগ নিয়ে তাদের সাথে গল্প করছেন। রাত জেগে নামায ও ইবাদত-বন্দেগী না করলে কীভাবে পস্তাতে হবে তার চিত্রায়ণ করছেন। বললেন, রাতের নামায না থাকলে আমি দুনিয়ায় আর থাকতাম না। দুনিয়ায় টিকে থাকার উপকরণ একমাত্র রাতের নামায। কিয়ামুল লাইলের ফযীলতে আবূ সুলাইমান দারানীর অর্জিত কারামাত (লোকাতীত ঘটনা) সম্পর্কে বিবৃতি দিচ্ছেন। বলেছেন, এক রাতে সালাতুল লাইলের অযীফা শেষ করে ঘুমালাম। হঠাৎ দেখি, জান্নাতী রমণী। তিনি বলছেন, আবূ সুলাইমান! তুমি আমাদের বাদ দিয়ে ঘুমাও! অথচ আমি তোমার জন্য পাঁচশত বছর ধরে অন্দরমহলে লালিত হচ্ছি? তোমার দু’চোখ ঘুমাচ্ছে অথচ ফিরিশতা সজাগ? তিনি দেখছেন, কারা তাহাজ্জুদ পড়ছে!! সে চোখের কী দুর্ভোগ!! যে চোখ মাওলার মুনাজাতের মজা ছেড়ে সামান্য ঘুমের মজা নিতে তৎপর! আবূ সুলাইমান, ওঠো! আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি রহম করুন। কেন এই সমাদৃত ঘুম?
তিনি বললেন, আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জেগে ওঠলাম। তার ধমকে আমি লজ্জিত হলাম এবং ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম। তার কথার মাধুর্য ও রেশ এখনও আমার কানে ও হৃদয়ে বিরাজমান।
আবূ সুলাইমান দারানী রহ. ইহরামের কাপড় পরিধান করলেন। ইচ্ছে ছিল, উচ্চকণ্ঠে তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) পড়বেন। তালবিয়ার পবিত্র ধ্বনিতে দিগন্ত সুরভিত হবে। হঠাৎ তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। মাটিতে পড়ে গেলেন। লোকজন চিকিৎসা দিতে দৌড়িয়ে আসে। সম্বিত ফিরে পেলেন। জিজ্ঞাসা করা হল, আবূ সুলাইমান কী ঘটেছে? তিনি ফেকাসে বদনে বললেন, জানতে পারলাম, যে ব্যক্তি যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে হজ্জ করার ইচ্ছা করে এবং তালবিয়া পড়ে, আল্লাহ তাআলা তাকে বলেন, না তোমার কোন লাব্বাইক নেই। তুমি যা কিছু বলছো এগুলো তোমার হাতে ফেরত। আমারও আশঙ্কা না জানি তিনি আমার ব্যাপারে এমন কথা বলেন!!
একদিন তিনি লোকদের সাথে বসে কথা বলছেন। তিনি বললেন, গুনাহের কথা মনে পড়লে মরতে মনে চায় না। তওবা যেন করতে পারি এজন্য বাঁচতে চাই। তিনি তার ছেলে সুলাইমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকে বলা হল, সে তো উপার্জন করতে, হালাল রুটি-রুজির সন্ধানে এবং জমি-জিরাত ক্রয়বিক্রয় করতে বের হয়েছে। পিতা মন্তব্য করলেন, সে আত্মা কখনও সফলকাম হবে না যে আত্মা অর্থকড়ি সঞ্চয়ে তৎপর। টাকাকড়ি ধান্দায় থাকলে হৃদয় ও মন পরিশীলিত হবে না।
মহান এই মনীষীর রূহ ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করে এবং সমাধিগোরে শরীর আত্মগোপন করে হিজরী ২১৫ সালে।
মর সোজা আছে।
একবার ইমাম শাফেয়ী রহ. রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এমন সময় হাত থেতে চাবুক (বেত) পড়ে যায়। সাথে সাথে কাজের লোক সেটা হাতের আস্তিনে মুছে তাঁকে এগিয়ে দেয়। ইমাম শাফেয়ী রহ. তাকে (পুরস্কারস্বরূপ) সাত দীনার প্রদান করেন।
ক্ষুধায় থেকে তাঁর পেট পরিশীলিত ও মার্জিত হয়েছিল। প্রতিটি লুকমা তাঁর পেটে যেতো খোদাভীতির সাথে। নিজের সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে বসে খাবারের গল্প শোনাচ্ছেন। ষোল বছরে মাত্র একবার পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খেয়েছি। আশ মিটিয়ে আহার্য গ্রহণ করে বমি করে দিয়েছিলাম। কারণ পরিতৃপ্ত ভোজনে শরীর ভারী হয়, হৃদয় পাষাণ হয়, বুদ্ধিমত্তা ও মেধার তেজস্বিতা নষ্ট হয়, ঘুম বাড়ে এবং ইবাদতে শক্তি দুর্বল করে।
প্রচুর পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগী করতেন। প্রতিভা, বিচক্ষণতা, সঠিক বিচার করার ক্ষমতা এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। রমাযান মাসে ইমাম শাফেয়ী রহ. ষাট কুরআন শরীফ ষাট খতম দিতেন। প্রতিটি খতম নামাযে দিতেন।
ইমাম শাফেয়ী রহ. সম্পর্কে বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তিনি রাতের বিভিন্ন প্রহর তিনভাগে ভাগ করতেন। প্রথম এক-তৃতীয়াংশ লেখালেখির জন্য। দ্বিতীয় এক-তৃতীয়াংশ নামায পড়ার জন্য। শেষ এক-তৃতীয়াংশ ঘুমানোর জন্য। হুসাইন কারাবিসী রহ. বলেন, এক রাতে আমি ইমাম শাফেয়ী রহ. এর সাথে ছিলাম। তিনি রাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত নামাযে ব্যস্ত থাকেন। এক রাকাতে পঞ্চাশ আয়াতের চেয়ে বেশি পড়তেন না। বড় জোর একশত আয়াত পড়তেন। রহমতের আয়াত পড়ার সময় আল্লাহ তাআলার কাছে সেই রহমত চেয়ে নিতেন। আবার আযাবের আয়াত পড়ার সময় আল্লাহ তাআলা শরণ (পানাহ ও আশ্রয়) নিতেন। এভাবে তিনি ভয় ও আশার সমাহার করেছিলেন কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার সময়। (বস্তুত ভয় ও আশা এই দু’য়ের মাঝে ঈমান অবস্থান করে। যার পুরো মাত্রায় এই বুযর্গ লোকের মাঝে পাওয়া গিয়েছিল)।
আব্দুল্লাহ্ ইবনুল হাকাম রহ. বসে আছেন ইমাম শাফেয়ী রহ. এর পাশে। আব্দুল্লাহ্ উপদেশছলে বললেন, আপনি যদি মিসরে থাকতে চান তবে আপনার কাছে এক বছরের খাবার-সামগ্রী থাকা চাই। এক্ষেত্রে সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চললে সহজে সংগ্রহ করা যাবে। ইমাম শাফেয়ী রহ. বললেন, হে আবূ মুহাম্মাদ! তাকওয়া যাকে ইজ্জত দিতে পারেনি তাকে কোন কিছুই ইজ্জত দিতে পারবে না। তার কোন সম্মান নেই। (শোন) আমার জন্মস্থান গাজা এলাকায়। বেড়ে ওঠেছি হিজায এলাকায়। এ পর্যন্ত কোন রাতে এক দিনের খাবার সংগ্রহে ছিল না। (কিন্তু) কোন রাতে ক্ষুধার্তও ছিলাম না।
ইমাম শাফেয়ী রহ. মিসরে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর-ই বন্ধু শাইখ মুযানী তাকে গোসল দেন। হিজরী ২০৪ সালে কায়রোর বনী যুহরা গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মৃত্যু-সংবাদ কানে আসার পর ইবনে উয়াইনা রহ.বললেন, তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ মানুষটি মারা গেলেন। যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীনের ইন্তেকাল হয়ে গেল।

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it