ইমাম মালিক বিন আনাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৭৯ হিজরী : ৭৯৫ খৃস্টাব্দ)

এমন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন যার সদস্যদের বুকে (সদা) কুরআন থাকে। যারা কুরআনের ধারক। যুহদ ও বিনয় দিয়ে মানুষের হৃদয়রাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। মমতাময়ী মা দুগ্ধের সাথে ঈমান ও আদব-শিষ্টাচারও পান করিয়েছিলেন। যখনই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বর্ণনা করেছেন তখনই তিনি উযূ অবস্থায় পবিত্র ছিলেন। দারুল হিজরতের ইমাম। হিজরত-ভূমির তিনি ইমাম। উম্মতের প্রমাণ, হুজ্জাতুল উম্মাহ। শাইখুল ইসলাম। অভিজাত এবং বুদ্ধিমান। তিনি মালিক বিন আনাস আসবাহী মাদানী।
মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে যিলমারওয়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ইলম ও জ্ঞানের আসক্ত ছিলেন। এই আসক্তি মনে তোলপাড় সৃষ্টি করতো। স্নেহময়ী মাতা তাকে ইলমের পোশাক পরিধান করিয়েছেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি রবীআ’ এর নিকট যাও। ইলম শেখার আগে তার থেকে আদব-কায়দা ও ইলমের শিষ্টাচার শেখে নাও।
জন্মগতভাবে প্রচ- ধীশক্তিসম্পন্ন ছিলেন। মদীনাবাসীদের মধ্যে তখন তিনি সবশ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন। কান্নাপ্রবণ মানুষ ছিলেন। ইবনুল মুবারক রহ. বলেন, উম্মতের জন্য আমাকে যদি ইমাম নির্ধারণ করতে বলা হয় আমি ইমাম মালিককে বাছাই করে নেবো। ইমাম আবূ হানীফা রহ. বলেন, দ্রুত সঠিক উত্তরদান এবং পরিপূর্ণ যুহদ ও দুনিয়াত্যাগের ব্যাপারে তার চেয়ে বেশি অন্য কাউকে অগ্রগামী দেখিনি। ইবনে ওয়াহাব বলেন, মালিক বিন আনাস অপেক্ষা বড় কোন মুত্তাকী আমার দু’চোখ কখনও দেখেনি। ইবনে মাহদী বলেন, ইমাম মালিকের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার ডর যেভাবে দেখিছি তেমন ডর-ভয় অন্য কারও হৃদয়ে থাকতে আমি দেখিনি।
মুহাম্মাদ ইবনে খালিদ বলেন, ইমাম মালিকের মুখম-ল দেখলে মনে হয় তার বদনে আখেরাতের কতগুলো উজ্জ্বল চেহারা ঝলমল করছে। যখন তিনি কথা বলেন মনে হয় তার মুখ দিয়ে সত্য নিঃসৃত হচ্ছে। তিনি বলতেন, দুনিয়ার যুহদ হল হালাল আয়-উপার্জন, ছোট আশা করা এবং আল্লাহ তাআলা গুপ্ত ধনভা-ার ব্যাপারে বেশি আস্থাশীল হওয়া। তিনি বলেছেন, ইলম ও জ্ঞান হল নূর ও আলো। মুত্তাকী ও বিনীত ব্যক্তির হৃদয়ের সাথে তার হৃদ্যতা।
তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি মনের আনন্দের দোআর খোলতে, মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে বাঁচতে, কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় তার জন্য বাহ্যিক আমলের চেয়ে উহ্য ও গোপন আমাল বেশি হওয়া উচিত। ইমাম মালিকের নিকট ইলম অতি সম্মানিত ও প্রিয় বিষয় ছিল। উপযুক্ত লোক ছাড়া কাউকে ইলম দিতেন না। বিশেষত হাদীসের রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস শরীফের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বেশি করতেন।
একদিন তিনি ইবনে হাযিম রহ. এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন। তখন তিনি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করছিলেন। তিনি চলে গেলেন। হাদীস শরীফ শোনার উদ্দেশ্যে বসলেন না। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বললেন, আমি এখানে বসার মতো কোন জায়গা পেলাম না। দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস শোনতে আমার কাছে ভালো ঠেকল না।
ইবনে মাহদীর বর্ণনায় একটি ঘটনা পাওয়া যায়, যা রাসূলের হাদীসের প্রতি ইমাম মালিক রহ. এর অগাধ শ্রদ্ধাবোধ প্রতীয়মান করে। তিনি বলেন, একদিন ইমাম মালিক রহ. এর সাথে হেঁটে আকীকের দিকে যাচ্ছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে ধমক দিলেন। বললেন, আমার দৃষ্টিতে তুমি অনেক বড় ছিলে। আমি তোমাকে অনেক বড় মনে করতাম। (কিন্তু তুমি হাঁটতে হাঁটতে রাসূলের হাদীস সম্পর্কে জানতে চেয়ে সে ধারণায় চিড় ধরালে!)। আমরা হাঁটছি আর তুমি কিনা রাসূলের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছো….
ইমাম মালিক রহ. হাদীস বর্ণনা করতে মনস্থ করলে উযু করতেন, বিছানায় বসতেন, দাড়ি আঁচড়াতেন, গম্ভীর অবস্থায় ভালোভাবে বসতেন এরপর হাদীস রেওয়ায়েত করতেন। এমন পরিপাটি সম্পর্কে জিজ্ঞসাসিত হলে বললেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস মোবারকের সম্মান করতে চাই।
আমীরুল মুমিনীন বাদশাহ হারূনুর রশীদ হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। তিনি আসলেন ইমাম মালিক রহ. এর দরবারে। অনুমতি চাইলেন (দুনিয়ার বাদশাহ হারূনুর রশীদ); কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেল না। কিছুক্ষণ পর অনুমতি দিলেন। হারূনুর রশীদ প্রবেশ করলেন ইমাম মালিকের কাছে। বাদশাহ বললেন, আবূ আব্দুল্লাহ্ (ইমাম মালিকের উপনাম)! আপনার দোআরে আমাকে আটকিয়ে কেন রাখলেন? ইমাম উত্তরে বললেন, আল্লাহ কসম! হে আমীরুল মুমিনীন, আমি তো স্রেফ উযু করেছি। এতটুকু দেরি হয়ে গেছে। কারণ আমি জানি, আপনি কেবল রাসূলের হাদীসের উদ্দেশেই এসে থাকেন। তাই আমি হাদীস বর্ণনা করার মতো প্রস্তুতি নিয়েই হাজির হয়েছি।
তাকওয়া ও খোদাভীতি ভূষণে ভূষিত হয়েই তিনি জীবনযাপন করেছেন। যখনই কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেন তার একমাত্র লক্ষ্য থাকতো মাওলার বিষয়। আল্লাহ তাআলার হুকুম ও বিধানকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি সাহসিক পদক্ষেপে এগিয়ে যেতেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক রহ. বলেন, কোন বিষয়ে কোন ফতওয়া আমি প্রদান করিনি যে পর্যন্ত না আমার চেয়ে বড় কোন আলেমকে উক্ত মাসআলা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞেস করেছি। যখন তিনি আমাকে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার অবকাশ মনে করেছেন তখনই আমি ফতওয়া দিতে এগিয়ে এসেছি। তিনি ফতওয়া দেয়ার সময় এই আয়াত তেলাওয়াত করতেন, (অনুবাদ) ‘আমরা মনে করি এটি একটি ধারণামাত্র এবং আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত নই।’ (সূরা জাছিয়া, আয়াত : ৩২)
ইমাম মালিক রহ.এর কোন বাড়ি ছিল না। আমৃত্যু তিনি ভাড়া বাসায় থেকেছেন। তিনি যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়িটি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রা.এর। বাড়ির গেইটে লেখা ছিল, মাশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা ইমাম মালিকের হৃদয়ে ইলম ও আলেমের ভাবগাম্ভীর্য উভয়টা দিয়েছিলেন।
বাদশাহ মাহদী হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন করলেন। ইমাম মালিককে বাদশাহ’র নিকট আসতে ডেকে পাঠালেন। উদ্দেশ্যে বাদশাহ’র দুই ছেলে মুসা ও হারূনকে তিনি হাদীস শোনাবেন। ইমাম মালিক বললেন, আমীরুল মুমিনীন! ইলমের ইজ্জত করা উচিৎ। ইলমের কাছে আসা শোভনীয়। মাহদী বললেন, যথার্থ। এরপর দুই ছেলেকে বললেন, হেঁটে ইমাম মালিকের কাছে যাও। তারা হেঁটে গেল। ইমাম মালিকের সামনে গিয়ে বসল। উভয় সাহেবজাদা বলল, আপনি আমাদেরকে হাদীস পড়ে শোনান। ইমাম মালিক রহ. উলামাদের শান ও গাম্ভীর্যের সাথে বললেন, এই নগরীর বৈশিষ্ট্য হল, ওস্তাদকে পড়ে শোনানো হয়। যেভাবে বাচ্চা পড়ে ওস্তাদজিকে শোনায়। বাচ্চা ভুল করলে উস্তাদজি শুধরান। এ কথায় উভয় শাহজাদা রেগে গেলেন। চলে গেলেন। আব্বাজিকে জানালেন। বাদশাহ ডেকে পাঠালেন। বললেন, আসতে বললাম। আসলেন না। পরে আমার ছেলেরাই গেল; কিন্তু এবারও আপনি তাদেরকে হাদীস শুনালেন না?
ইমাম মালিক রহ. উত্তরে বললেন, আমীরুল মুমিনীন! ইবনে শিহাব যুহরী রহ.কে বলতে শুনেছি, এই ইলমে ওহী আমরা হাসিল করেছি রওযা আতহারের কিছু লোক থেকে। তাদেরকে হাদীস শুনানো হতো তারা কখনও পড়তেন না। এ কথা শোনে মাহদী মাথা নেড়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। নিজের দুই ছেলের মুচকি দিয়ে তাকালেন। বললেন, যাও। তোমরাই তাকে হাদীস শোনাবে। তাদের মাঝে রয়েছে আদর্শ! তারাই অনুকরণীয় ব্যক্তিবর্গ।
ইমাম মালিক রহ. একদিন বাদশাহ হারূনুর রশীদের নিকট গেলেন। জনকল্যাণে কাজ করতে উৎসাহিত করে ওয়ায-নসিহত করেন। ডানপিটে ও দুরন্ত শব্দে কথা বললেন, উমর ইবনুল খাত্তাব, তার মর্যাদা ও অবস্থান সত্ত্বেও, তিনি দুর্ভিক্ষের বছর জনকল্যাণে নিজে হাঁড়ির নিচে ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছিলেন। এমনকি তার দাড়ির নিচ দিয়ে ধোঁয়া বের হয়েছে। এমন কষ্ট না করলে জনগণ কী আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে?
মুগীরা বর্ণনা করতে গিয়ে বলন, একরাতে লোকজন ঘুমিয়ে পড়ার পর বের হলাম। মালিক ইবনে আনাসকে দেখতে পেলাম। হঠাৎ তাকে দেখলাম, তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন। সূরা ফাতিহা শেষ করে তিনি সূরা তাকাছুর পড়তে লাগলেন। শেষ আয়াত পড়ার সময় খুব কাঁদলেন। দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদেন আর আয়াতটি পড়েন। এভাবে কেঁদে সকাল পর্যন্ত কাটালেন। (আয়াতটির অনুবাদ) ‘এরপর অবশ্যই সেই দিন তোমাদেরকে নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা তাকাছুর, আয়াত : ৮)
ইমাম মালিক রহ. নিজের ওযিফা পালনকালে রুকু-সিজদা দীর্ঘায়িত করতেন। নামাযে যখন দাঁড়াতেন মনে হতো শুষ্ক কোন নিথর কাষ্ঠখ-। দিবারাত্রিতে যা-ই ইবাদত-বন্দেগী করতেন সেগুলোর অধিকাংশ গোপনে হতো। সাধারণত কেউ দেখতে পেতো না।
ইমাম মালিক রহ. এর খাদেম বলেন, আজ ইমাম মালিকের বয়স ৪৯ বছর। অধিকাংশ দিন তিনি ইশার উযূ দিয়ে ফজর নামায পড়েছেন। লোক দেখিয়ে তিনি খাবার খাননি। প্রয়োজন না হলে কথা বলতেন না। জিজ্ঞাসা করা হলে বললেন, মানুষ যে অধোমুখে জাহান্নামে পড়বে; কেন পড়বে? মুখের দিকে ইশারা করে বললেন, এ কথার কারণেই পড়বে।
যুহদ ও বিনয়ের কারণে তিনি আত্মভোলা ও আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকতেন। বাদশাহ হারূনুর রশীদ একদিন পরমর্শ দিলেন, আপনি মুয়াত্তা কিতাবটি কা’বা শরীফে ঝুলিয়ে রাখুন। লোকদেরকে সেটি পড়তে অনুপ্রাণিত করুন। ইমাম মালিক রহ. এই পরামর্শ শোনে লজ্জিত ও সুনামভীতি অবস্থায় বললেন, আমীরুল মুমিনীন! মুয়াত্তা গ্রন্থের কথা বললেন, কা’বা শরীফে ঝুলিয়ে রাখতে। সেটা কীভাবে সম্ভব? কারণ অনেক সাহাবা অনেক মাসআলায় দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বিভিন্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছেন। সবাই যার যার অবস্থানে যথার্থ ও সঠিক। এ কথা শোনে বাদশাহ খুশি হয়ে গেলেন। মুচকি হাসি বললেন, আবূ আব্দুল্লাহ! আল্লাহ তাআলা তোমাকে বেশি বেশি বুদ্ধিমত্তা দান করুন এবং তাওফীক দান করুন।
বিশর ইবনে উমর বর্ণনা করেন, ইমাম মালিক হাসতেন না। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে বললেন, (অধিক) হাসি বোকামি জন্ম দেয় এবং মেধার স্ফুরণ নষ্ট করে দেয়। পরন্তু, হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাসি ছিল মৃদুমন্দ। তিনি মুচকি হাসি দিতেন।
একদিন ইমাম মালিক রহ. মদীনার কোন শাসকের দরবারে গেলেন। গিয়ে দেখেন, লোকজন শাসকের ভূয়সী প্রশংসা করছে। এতে তিনি রেগে গেলেন। আমীরকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার প্রতি তাদের এই স্তুতিগান আপনাকে যেন ধোঁকা না দেয়। কারণ আজ যারা আপনার প্রশংসা পঞ্চমুখ এবং এমন তারিফ করছে যা আপনি ভূষিত নন, সেদিন বেশি দূরে নয়, তারা-ই আপনার এমন নিন্দা করবে এবং আপনার দোষারোপ করবে যে দোষে আপনি দোষিত নন। সুতরাং নিজেকে সাধু ভাববেন না।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভূমিতে শায়িত, তার সম্মানে তিনি মদীনার মাটিতে কখনও আরোহণ করেননি। কোন বাহনে চড়ে সফর করেননি। পায়ে হেঁটে সায়ের করেছেন। ইমাম মালিক রহ. এর তাকওয়া-পরহেযগারি এবং নবীজীর প্রতি কীরূপ আদব-কায়াদা বজায় রেখে চলতেন সে সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী রহ. বিবরণ দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ইমাম মালিকের দোআরে খুরাসান দেশীয় ঘোড়া বাঁধা। আমি তাকে বললাম, কী চমৎকার!! ইমাম মালিক রহ. বললেন, এগুলো আপনাকে দান করে দিলাম। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, আপনার জন্য একটা রাখুন। বাহনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। আদবের হাসি মুখম-লে ঝুলিয়ে ইমাম মালিক রহ. বললেন, আল্লাহ তাআলার সামনে আমি কীভাবে মুখ দেখাবো? যে মাটিতে আল্লাহ’র রাসূল শায়িত সেই ভূমি আমার বাহন পদদলিত করবে!!
ইমাম মালিক রহ. নামায পড়তেন মসজিদে নববীতে। জানাযায় অংশগ্রহণ করতেন। রোগী দেখতে যেতেন। লোকদের সাথে মিশে খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু মৃত্যুর দু’বছর আগে হঠাৎ এসব কিছু বন্ধ হয়ে গেলো। মানুষ হতভম্ব হয়ে গেল। কী কারণে এমন হল! ইমাম মালিকের সাথে দেখা করে বিষয়টি উদ্ঘাটন করা হল। তিনি বললেন, এখন যেহেতু আমি দুনিয়ার শেষ দিন এবং আখেরাতের প্রথম দিনে উপনীত তাই তোমাদেরকে বলছি। অন্যথায় তা কখনও আমি এ তথ্য বলতাম না। আমার প্রস্রাব ঝরে। আমি কীভাবে রাসূলের মসজিদে আসি? এখানে রাসূলে আকরাম শায়িত; তাঁর সম্মানার্থে আমি অপবিত্র অবস্থায় আসতে পারি না। আবার কী করে তোমাদের জানাই আমার সমস্যার কথা। কারণ আমার সমস্যার কথা আমি কেবল আমার মাবুদকেই জানাবো। অন্যদেরকে জানাতে পারি না।
ইমাম মালিক রহ. হিজরী ১৭৯ সালে মারা যান। বাইশ দিন অসুস্থ থাকার পর রোববার তিনি ইন্তেকাল করেন। ইবনে কিনানা, ইবনে আবিয্ যুবাইর এবং তার ছেলে ইয়াহইয়া তাঁকে গোসল দেন। কাতেব (ব্যক্তিগত কেরানী) হাবীব গায়ে পানি ঢালেন। ইন্তেকালের আগে তিনি সাদা কাপড়ে কাফন দেওয়ার কথা ওসিয়ত করে গেছেন এবং (মসজিদে নয়) জানাযা নামাযের মাঠে নামায পড়ানোর কথাও বলে যান। আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম জানাযা নামাযের ইমামতি করেন। তিনি তার পিতার পক্ষ হতে মদীনার গভর্নর ছিলেন। এই গভর্নর পায়ে হেঁটে জানাযায় শরীক হন। খাটিয়া বহন করেছেন। পাঁচ দীনার খরচ হয়েছিল তাঁর কাফনের কাপড়ে।