আসওয়াদ আন্নাখয়ী رحمة الله عليه (মৃ. ৭৫ হিজরী : ৬৯৪ খৃস্টাব্দ)

সিয়াম যাঁর জাগতিক সফর এবং নামায যাঁর উর্ধ্বাকাশে গমন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দর্শন সৌভাগ্যে সাহাবা কেরাম যাঁকে ছাড়িয়েছিলেন। যুহ্দ ও দুনিয়াবিমুখিতার পথ ধরে যিনি ইতিহাসে প্রবেশ করেছিলেন। রাতের উজ্জ্বল নক্ষত্রমালার একটি নক্ষত্র ছিলেন। যুহ্দ ও তাকওয়ার অষ্টকেল্লার একটি কেল্লা ছিলেন। যুহ্দ ও তাকওয়া সালাত ও সিয়ামের আকৃতিতে মুসাফিহা করেছে। তিনি আল্আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে কাইস আন্নাখয়ী। কুফা নগরীর বিখ্যাত আলেমে দ্বীন। আল্কামাহ ইবনে কাইস এর ভাতিজা। বয়সে চাচার চেয়ে বড়। বহুত বড় বুযর্গ পরহেযগার এবং হাফেয। দুনিয়া বিরাগীদের তিনি প্রধান ব্যক্তি। প্রবৃত্তি-অনুসরণ থেকে নিজেকে রেখেছেন যোজন দূরে।

মুখাযরিম ব্যক্তিত্ব। জাহিলী ও ইসলামী উভয় যুগের কালের সাক্ষী। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত হয়নি। তাবেঈ নেতা। অনেক সাহাবীর কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁদের থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন। যাহেদ ও দুনিয়াত্যাগীদের পথিকৃৎ। হযরত আলকামাহ ইবনে মারসিদ বলেন, যুহ্দ ও দুনিয়া বিরাগীর সংখ্যা আট। আলআসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ তাঁদের একজন। হযরত উমারা বলেন, আলআসওয়াদ নিছক এক রাহিব, ইবাদতগুজার ও দুনিয়াত্যাগী।

তাঁর জীবনচরিত কল্পনাকে হার মানায়। রমাযানে প্রতি দুই রাতে পবিত্র কুরআন খতম করতেন। অন্য সময়ে প্রতি ছয় রাতে এক খতম করতেন। মাগরিব ও ইশার নামাযের মাঝে একটু ঘুমিয়ে নিতেন। আর ঘুমাতেন না। হযরত আলআসওয়াদ রহ. হজ্ব ও উমরা মিলে আশিবার বাইতুল্লাহ্ শরীফে হাজির হয়েছেন। তিনি হজ্বের কিংবা উমরার কথা উচ্চারণ করতেন না। (তালবিয়া পাঠের সময় কোন একটা সশব্দে উচ্চারণ না করায়) কেউ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নিয়তের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা জানেন। হজ্বের মওসুমে হাজী সাহেবানদের যাতায়াতে যখন পবিত্র স্থানগুলো সরগরম হয়ে উঠতো, তাঁদের তালবিয়া ও দোআ-দরূদে চারপাশের আবহ ও পরিবেশে সুঘ্রাণে সুবাসিত হতে থাকতো তিনি বলতেন, লাব্বাইকা গাফ্ফারায্ যুনূব। হে গুনাহ ক্ষমাকারী! বান্দা তোমার দরবারে হাজির। আলআসওয়াদ আন্নাখয়ী রহ. এর আসক্তি ছিল রাত জেগে আল্লাহ তাআলার দরবারে পড়ে থাকা। রাতের অন্ধকারে নিজের গুঞ্জন শুধু মাওলাকে শোনাতে বেশি ভালোবাসতেন।

বেশি বেশি রোযা রাখতেন। সিয়াম সাধনার প্রবণতা বেশি ছিল। অধিক রোযা রাখার কারণে শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। জিজ্ঞাসিত হলেন, আপনার শরীরকে এমন কষ্ট দিচ্ছেন কেন? গুনগুন করে বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তো শরীরের বিশ্রাম ও আরামের জন্যই এমন করছি। আলআসওয়াদ আননাখয়ী রহ. মৃত্যুশয্যায় শায়িত। সারা রাত শরীর কম্পমান। খোদাভীতিতে গ-দেশ বেয়ে চোখের ঝরছে। কেউ জিজ্ঞেস করল, কেন আফসোস? কেন এই হা-হুতাশ? উত্তরে বললেন, হা-হুতাশ না করে উপায় কি? আমার চেয়ে আর কে বেশি উপযুক্ত হা-হুতাশ করার? কসম, যদি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাত পেয়ে যাই তাহলে তো কৃতকর্মের জন্য মাওলা পাকের কাছে লজ্জা অনুভূত হবে। পরক্ষণে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়লেন। হিজরী ৭৫ সালে কুফা নগরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাওলার দরবারে চলে যান।

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it