আব্দুল্লাহ্ বিন আওন রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৫১ হিজরী : ৭৬৮ খৃস্টাব্দ)
যুহদ ও দৃঢ়তায় গণমানুষের হৃদয়ে আসন করে নিয়েছিলেন। যার সততা সূর্যালোকে জাহির হওয়ার আগে গোপনে আঁধারে বিস্তৃত হতো। মায়ের কণ্ঠস্বরের চেয়ে নিজের গলার আওয়াজ উঁচু হওয়ায় দু’টি গোলাম আযাদ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা যাঁর জবানে তাকওয়া গচ্ছিত রেখেছিলেন। যার মুখে গুঞ্জরিত হতো পরহেযগারির কথা। তিনি আব্দুল্লাহ্ ইবনে আওন। মনীবের বংশসূত্রে যিনি মুযানী। বসরা নগরবাসীর প্রধান শ্রদ্ধেয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন হাফেযে হাদীস।
নিজেকে নিয়েই ব্যাপৃত থাকতেন। কারও সাথে হাসি-রসিকতা করতেন না। বাকবিত-া করতেন না। সুন্নাতের ব্যাপারে গোটা ইরাকে তার চেয়ে বড় কোন আলেম ছিল না। সকল ব্যাপারে তিনি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। জিহাদ করতেন এবং ঘোড়া চড়ে বেড়াতেন। তার এক ঘনিষ্ঠ লোক বর্ণনা দিচ্ছেন, ফজরের নামায জামাতে পড়ে মুসল্লায় বসে থাকতেন। কিবলামুখী হয়ে বসে বসে যিকির করতেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ইশরাকের নামায পড়তেন। এরপর বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলতেন। কোন গোলাম বা বাঁদিকে কখনও গালি দিতে দেখিনি। অন্য কাউকে খিস্তিখেউর করতেও দেখিনি। এমনকি কোন মুরগী বা বকরীকেও কখনও গালি দেননি। জীবনভর একদিন পরপর রোযা রেখেছেন। কেউ তার প্রতি সুসম্পর্ক বজায় রাখলে তিনি তার সাথে গোপনে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। ভালো-মন্দ কোন কাজে কসম খেতেন না।
হযরত কুররা বিন খালিদ রহ. বলেন, ইবনে সীরীনের তাকওয়া দেখে আমরা থ বনে যেতাম। কিন্তু ইবনে আওনের তাকওয়ার সামনে ইবনে সীরীনের বুযর্গী বিস্মৃত হয়ে গেলো। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনুল মুবারক রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইবনে আওন কীভাবে এই পর্যায় উন্নীত হল? তিনি বললেন, আমলের প্রতি অবিচল থেকে। হযরত ইয়াহইয়া কাত্তান রহ. বলেন, ইবনে আওন দুনিয়া ছেড়ে নেতৃত্ব লাভ করেনি। তিনি দুনিয়াকে করায়ত্ব করেছিলেন নিজের জবান হেফাজত করে।
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আওন রহ. রাগ করতেন না। কারও প্রতি বিক্ষুব্ধ হলে দুর্মুখ হতেন না। জবানের হেফাজত করতেন। শুধু বলতেন, আল্লাহ তাআলা তোমাকে বরকতময় করুন। কাজের লোক চেঁচিয়ে বলল, উটের চোখ উপড়িয়ে ফেলা হয়েছে আর আপনি বলছেন, তোমাকে আল্লাহ বরকতময় করুন? শান্তভাবে তিনি বললেন, হাঁ!! আল্লাহ তাআলা তোমাকেও বরকতময় করুন। তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। তুমি মুক্ত ও স্বাধীন।
হযরত মুয়ায ইবনে মুয়ায বলেন, মুসলমানের মাঝে ইবনে আওনের চেয়ে অন্য কাউকে এমন বড় আশাবাদী দেখিনি। তার কাছে কারও কোন দোষের কথা আলোচিত হলে তিনি বলতেন, আল্লাহ তাআলা দয়ালু। হযরত খারিজা ইবনে মুসআ’ব ইবনে আওনের সাথে নিজের চলাফেরা থেকে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ইবনে আওনের সাথে চব্বিশ বছরে চলাফেরা করেছি। আমার জানামতে ফেরেশতা তার একটি গুনাহ লিখতে পারেনি।
একবার এক লোক কোন এক বিষয়ে বিতর্ক বেধে যায়। লোকটি কঠোর ভাষায় অকথ্য কথাবার্তা বলতে থাকে। বিভিন্ন কটুকথা বলল। ইবনে আওন রহ. নিজের লাজুকতা আর শিষ্টাচার রক্ষা করে শুধু এ কথা বললেন, তার ব্যাপারে আমি যা জানি তা আমি বলতাম যদি ফেরেশতা আমার গুনাহ না লিখতো।
ইবনে আওন রহ. এর কিছু দোকানপাট ছিল। তিনি সেগুলো ভাড়া দিতেন। কিন্তু মুসলমানের নিকট ভাড়া দিতেন না। প্রশ্ন করা হল, আপনি দোকানগুলো মুসলমানের নিকট কেন ভাড়া দেন না? তিনি বললেন, মাসের শুরুতে ভাড়ার টাকা নিয়ে মানুষের মধ্যে টেনশন থাকে। আমি চাই না কোন মুসলমানকে এই ভীতিকর অবস্থায় ফেলে টেনশনে রাখি।
ইবনে আওন রহ. বিছানায় শুইয়ে আছেন। রোগের উপসর্গ দেখা দিল। মৃত্যুশয্যায় তিনি শায়িত। ধৈর্যধারণ করে রইলেন। এটা রোগ থেকে নিরাময় হতে পারেননি। এভাবে তিনি দুনিয়া থেকে চলে যান। হিজরী ১৫১ সালে এই মহামনীষীর জীবনাবসান হয়।