আবূ বকর ছিদ্দীক রাযিআল্লাহু আনহু (মৃ. ১৩ হিজরী : ৬৩৪ খৃস্টাব্দ)
মহানবী ﷺ-এর পর তিনিই উম্মতের মহাদরদি ব্যক্তি। নিয়তি-ধ্বনিত ব্যক্তি। ইরানি ও রোম সাম্রাজ্য পতনের সূচনা ছিল তাঁর খিলাফতকাল। তাঁর শাসনকাল ছিল বাতিল রাজত্ব অবসানের গৌরচন্দ্রিকা ও পূর্বাভাস। নেতৃত্বের জন্য তিনি লালায়িত ছিলেন না। নেতৃত্বই ধেয়ে এসেছিল তাঁর কাছে। তিনি ঈমানের পাঠশালা। জান্নাতী দূতের হৃদয় আর কুদরতী মানবের মুখের মহিমা তাঁর দেহমনে। সাক্ষাতে পাবে সুরভিত ঘ্রাণ। হৃদয়ে দুনিয়ার মোহ জীর্ণ হয়েছে তাঁর মনে। দুর্বল আর জরাগ্রস্ত সেই আবেগ। শুকিয়ে চুপসে গেছে তার আবহ। হয়তো বিলুপ্ত। তিনি আবদুল্লাহ্ বিন উসমান কুরাইশী, আবু বকর ইবনে আবু কুহাফা আত্তাইমী। সর্বকালের নবী-রাসূলদের সেরা অনুসারী। রাসূলের আদর্শে নিকষিত নবুওয়তের নমুনায় খিলাফত, শুদ্ধতার মানদে উত্তীর্ণ শাসন-পদ্ধতি তথা খিলাফতের ধারকবৃন্দ, ‘খোলাফায়ে রাশেদীন’র প্রথম মুসলিম শাসক ও খলীফা। পৃথিবীতে ওহীর সংবাদের ভিত্তিতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের একজন। পুরুষ লোকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। হস্তীবাহিনী কর্তৃক আক্রমণ-অভিযানের আড়াই বছর পর জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনার ঘুর্ণাক্ষরেও টের পাননি যে, ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাঁর গল্প-কাহিনী বলে বেড়াবে। সোনার আখরে লেখা থাকবে তাঁর তাজা-সজীব টাটকা ঈমানের দাস্তান।
ঈমানের সতেজতা উপস্থিত আবেদনে হোঁচট খায়নি, আচমকায় প্রত্যুৎপন্নমতিত্বই দেখিয়েছেন। আমতা আমতা করেননি গ্রহণ-অগ্রহণের দোলায় পড়ে। হৃদয় জুড়ে তীব্র আবেগ, অনাবিল প্রকৃতি ও ধাত। পূত-পবিত্র আত্মা নবুওতের আলোর মিছিল দেখে হকের বাণী উচ্চারণ করেছেন উচ্চ কণ্ঠে। মেধা ও মনন ঈমান ও বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত। জ্ঞান-বুদ্ধি, মন-মেজাজ আদ্যান্ত ঈমান বিকশিত ব্যক্তি। জাহিলিয়াতের কৃষ্ণ গহ্বর থেকে ধেয়ে এসে রক্ষা করেছেন নিজের মান-সম্মান। ওধর-ওষ্ঠে স্পর্শ করেনি অবৈধ পানের সুরা, দু’ঠোটে লাগেনি কখনও শরাবের চুমুক। পৌত্তলিকতার সামনে কখনও ঝুঁকাননি নিজের মেরুদ-। সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর মন ও আত্মা। মুসলমান হওয়ার পর সাদা মনের সাথে সংযোজন হয়েছে দ্বীনের আন্তরিক অনাবিলতা। ঝলমলে হয়েছে তাঁর সমৃদ্ধ মন। ঔজ্জ্বল্যের স্বাক্ষরতায় পেয়েছেন ‘আতীক’ অভিধা। রাসূলের ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় ছিদ্দীকে ভূষিত হলেন।
সদ্য আগত আনকোরা দ্বীন ইসলামের সেবায় নিজের জান-মাল নিবেদন করলেন। মহানবী ﷺ-এর চারপাশে ছিলেন ছায়ার মতো। নিত্য সঙ্গ গ্রহণে হয়েছিলেন বরণ্য। হিজরতের পর্বও সারলেন নবীজীবর সাথে। রইলেন কালের সাক্ষী হয়ে নিঝুম গিরিগুহায়। জীবনবাজি রেখে হাজিরা দিলেন সমর অভিযানে। লড়ে গেলেন রণক্ষেত্রে। সৃষ্টি করলেন উৎসর্গের চমৎকার অধ্যায়। হৃদয়তটে দাঁড়াতে দেননি হাজার হাজার অশ্বারোহী। মুরতাদ আর ধর্মত্যাগীদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন উন্মত্ত সিংহের ন্যায়। সাহস আর ঈমানের পরাকাষ্ঠা দেখালেন কালও যা দেখেনি অতীতে। সময়ের গতি ফিরিয়ে সৃষ্টি করলেন যুগান্তকারী ইতিহাস। প্রশমিত করলেন বিদ্রোহের আগুন। নেভালেন মহাপ্রলয়ঙ্কর লেলিহান অনল।
মহানবী ﷺ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, (অনুবাদ): আবু বকরের জান ও মালের কাছে আমি ঋণী। আবু বকর ছাড়া এমন কেউ নেই যার জীবন ও সম্পদের ঋণে আমি আবদ্ধ ও দায়বদ্ধ। যদি মানুষের মধ্যে কাউকে অন্তরঙ্গ দোস্ত বানাতাম তাহলে আবু বকরকে বানাতাম। তবে ইসলামের মিত্র হিসেবে তিনি আমার ঘনিষ্ঠ মিত্র। আবু বকরের গেইট ছাড়া মসজিদের সকল গেইট বন্ধ করে দাও। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৬৭)
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রা. নিজের হায়াত ও জীবনটাকে কল্যাণমূলক কাজে লাগিয়েছেন। কোমল প্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছেন ফযীলত ও নেক সাধনায়। যখনই কর্ণকুহরে এসেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রিয় ও পছন্দনীয় কোন কাজের কথা সেখানেই তখনই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। লালায়িত হয়েছেন সে কাজ সাধনে।
সাহাবাদের দল, একটি নক্ষত্রপুঞ্জ। সেখানে বসে আছেন সাইয়্যেদুল কাওনাইন, দু’জাহানের প্রধান ব্যক্তি। তিনি জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, আজ সকালে কে রোযাদার ? আবু বকর রা. বললেন, আমি ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আবার প্রশ্ন, আজ সকালে তোমাদের কেউ কি কোন রোগী দেখতে গিয়েছিলে? ছিদ্দীক রা. বললেন, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! মহানবী ﷺ এবার মন্তব্য করলেন, যাঁর মাঝে এসব কিছুর সমাহার সে জান্নাতী। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০২৮)
একদল সাহাবা কেরাম নিয়ে নবীজী ﷺ বসে আছেন। মুক্তা ঝরানো কথাবার্তা বলছেন। শ্রুতিমধুর হাদীস শোনাচ্ছেন। বললেন, ‘কেউ যদি আল্লাহ’র রাস্তায় জোড়া সম্পদ খরচ করে তাকে জান্নাতের গেইট দিয়ে ডাকা হবে। হে আল্লাহ’র বান্দা, এটা খায়র ও কল্যাণের দ্বার। যে নামাযী তাকে নামাযের দ্বার দিয়ে আহ্বান করা হবে। যে মুজাহিদ তাকে জিহাদের গেইট দিয়ে ডাকা হবে। যে রোযাদার তাকে রাইয়্যান গেইট দিয়ে ডাকা হবে। সাদাকা যে করে তাকে সাদাকা দ্বার দিয়ে আহ্বান করা হবে।’ এতক্ষণে হযরত আবু বকর রা. নীরবতা ভেঙে বলে উঠলেন, আমার মাতাপিতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। কাউকে সকল গেইট দিয়ে ডাকার কোন আবশ্যকতা নেই। তারপরও এমন কেউ আছে যাকে সকল গেইট দিয়ে ডাকা হবে? নবীজীর মোবারক দু’ঠোঁট উতরিয়ে বেরিয়ে এলো সেই কাক্সিক্ষত কথা। হাঁ, আমার আশা সৌভাগ্যবান লোকদের মধ্যে তুমিও হবে একজন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৭)
অনাড়ম্বরতা ছিল হযরত আবু বকর রা.-এর ব্যক্তিত্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সাদামাঠা জীবন-প্রবাহে কাটিয়েছেন আয়ুষ্কাল। মদীনা বাসিদের হৃদয় জয় করেছিলেন সরলতা আর বিনয়ের জোরে। রাখেননি কোন সেবক ও খাদেম। বিদায়ের বাণী শুনিয়েছেন বড়াই আর অহঙ্কারকে তার মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে। ছিদ্দীকে আকবর রা. তিনি নিজেই খাদেম। নিজের কাজ নিজেই করেন। অন্যদের সেবা করেছেন বকরির পাল দোহন করে। খিলাফত ও মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসনভার তাঁর উপর অর্পিত হলে এক বালিকা বলে উঠল এখন তো আমাদের বাড়ির বকরি দোহন করে দিবেন না। এতে ছিদ্দীকের কানে ধাক্কা লাগল। তিনি বললেন, কেন? অবশ্যই আগের মতো এখনও ছাগল দোহন করে দিবো তোমাদেরকে। আমার আশা, আগের চরিত্রে এখন কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না। তাই তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন হয়েও তাদের বকরি পাল দোহন করে দিতেন।
ক্ষুদে সেনাপতি ও সমর অধিনায়ক উসামা বিন যায়েদ রা. সাদা-কালো ঘোড়ার পিঠে আরোহী। সিংহের ন্যায় এগিয়ে চলেছেন এই নরশার্দূল। হৃদয়জুড়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা বিধৌত এক মহান ব্যক্তি। তাজা ও সজীব ঈমান পান করেছেন ছেলেবেলায়। অচেনা শাহী মাহাত্ম্যের গাম্ভীর্য নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছেন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রা.। সৈন্যবাহিনীর প্রত্যেক সৈন্যসদস্যের খোঁজখবর নিতে লাগলেন। অবশেষে আসলেন ক্ষুদে সেনাপতির কাছে। এগিয়ে গেলেন তাঁর ঘোড়ার নিকট। দু’পায়ে মাড়িয়ে চলেছেন বালুরাশি। ঘোড়ার খুরের আঘাতে উড়ছে ধুলাবালি। এরই মধ্যে খলীফাতুল মুসলিমীনকে দেখতে পায় সমর অধিনায়ক। ক্ষুদে এই সিংহের বাচ্চা আবু বকর রা. কে দেখে নামতে ব্যস্তসমস্ত হয়ে পড়ে। ইসলামের চৌহদ্দি’র সীমানায় দীক্ষিত এই সেনাপ্রধান বড় আদবের সাথে আওয়াজ দিলেন: হে খলীফাতুর রাসূল! আল্লাহ’র কসম! হয় আপনি ঘোড়া আরোহণ করুন নয়তো আমি নেমে যাবো। আবু বকর রা. অতুলনীয় বিনয়ের সাথে বলে উঠলেন, দোহাই লাগে তুমি নামবে না। কসম! আমি আরোহণ করবো না। কিছুক্ষণ আল্লাহ’র রাস্তায় আমার পদযুগল ধুলা ধূসরিত হতে দাও।
মানবতা যখন নিগড়িত তখন দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে করেছেন মুক্ত অনেককে। খরচ করেছেন দেদার। মক্কা নগরীর অনেক দুর্বল অসহায় গোলামকে করেছেন দাসত্বমুক্ত। মুসলমান অনেক নারী ও বৃদ্ধ লোককে শোনালেন আযাদির জয়গান। একদিন তাঁর বাবা আবু কুহাফা এসে বললেন, বৎস! তুমি তো অনেক দুর্বল অসহায় মানুষের মুক্তির ব্যবস্থা করছো। তুমি যদি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গকে মুক্ত করতে তারা তোমার সহযোগিতার কাজে আসতো। তারা তোমার আত্মরক্ষা ও প্রতিরক্ষা করতে পারতো। আবু বকর রা. পর্বতসম কিংবা আরও দৃঢ়তা নিয়ে বললেন, বাবা! আমি তো চাই আল্লাহ’র সাহায্য। তখন পবিত্র কুরআনের এই আয়াত নাযিল হয়েছিল (অনুবাদ) যে দান করে এবং তাকওয়ার ভূষণ পরিধান করে….(সূরা আল্লাইল, আয়াত : ৫)
রহমত ও দয়া এবং বিনয় ও নম্রতা বিশেষণ নিয়ে সবটুকু আগ্রহ নিয়ে বিলিয়েছিলেন নিজের অর্থকড়ি। নিজের জন্য কিছুই করতেন না। অন্যকে দান করতেন সবসময়।
একবার নবী ﷺ দাঁড়িয়ে সাহাবা কেরামকে দান-সদাকা করতে উৎসাহিত করলেন। উমর ইবনে খাত্তাবের হৃদয় উন্মোচিত হল। প্রাণখুলে তাঁর সম্পদ দান করলেন। আনন্দে বললেন, আজ আবু বকরকে ছাড়িয়ে যাবো। দ্রুত গতিতে গেলেন দান করার মানসে। অর্থকড়ির বড় এক থলে নিয়ে রাসূলের দরবারে হাজির। স্বর্ণমুদ্রা ভরা ব্যাগের দিকে তিনি তাকালেন। উমরের দিকে ফিরে বললেন, পরিবার-পরিজনের জন্য কী রেখে এসেছো? হযরত উমর রা. বললেন, সমপরিমাণ তাদের জন্য রেখে এসেছি। অতঃপর তিনি নবীজীর কাছে চলে গেলেন। ইতোমধ্যে আবু বকর ছিদ্দীক রা. একটা থলে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন। অবশ্য তাঁর থলেটা হযরত উমর রা. এর থলে অপেক্ষা অনেক বড়। এনে রাসূল রাসূলুল্লাহ্ ﷺের সামনে রাখলেন। নবীজী মুচকি হেসে বললেন, পরিবার-পরিজনের জন্য অবশিষ্ট কী রেখে এসেছো? বিনীত শব্দে উত্তর দিলেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। আবু বকরের দানের বিশালতা দেখে হযরত উমর মাথা নেড়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেন। গুনগুন করে যেন বললেন, হে আবু বকর! আমি কখনও কোন ব্যাপারে তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবো না।
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা. হযরত আবু বকর ছিদ্দীকের দানশীলতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর কুদরতি হাতে আমার জীবন! যখনই কোন কল্যাণমূলক বিষয়ে আবু বকরের সাথে পাল্লা দিয়েছি সে বিষয়ে আবু বকর আমাদের ছাড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁর দানের পরিমাণ ছিল চল্লিশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা। যার পুরোটা তিনি দিয়েছিলেন আল্লাহ তাআলা’র রাস্তায়। ফি সাবীলিল্লাহ’র এই দানের অর্থকড়ি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ নিজের সম্পদের মতো সেখানে ইচ্ছা খরচ করেছিলেন। মহানবী ﷺ বলেছেন, আবু বকরের ধন-সম্পদ আমার যে কাজে লেগেছে এবং তাঁর মালে আমার যে উপকার হয়েছে অন্য কারো ধন-সম্পদে আমার সেই উপকার হয়নি। তিনি দুনিয়া চাননি। দুনিয়াও তাঁকে চায়নি। তাঁর স্মৃতিতে ছিল, দুনিয়া নবীজী ﷺ চান না। তাই তিনি যুহদ ও সাধনার মরূদ্যানে নিজের হৃদয়-মনকে গেঁথেছিলেন। দুনিয়া তাঁর কাছে ধরা দিয়েছিল কিন্তু তিনি চোখ বুজে থেকেছিলেন।
বড় বিনয় ও গাম্ভীর্য নিয়ে গল্প করছেন তিনি সাথী-সঙ্গীদের সাথে। কিছুক্ষণ পরে কাজের ছেলেকে বললেন, একটু পানি দাও। পরক্ষণে বালক পানপাত্রে পানি নিয়ে হাজির। হযরত আবু বকর রা.কে পান করতে দিল। আবু বকর রা. পানি নিয়ে পান করতে উদ্যত হলেন। লক্ষ্য করলেন, মধুমিশ্রিত পানি। স্রেফ মধু নয়। তিনি পানপাত্র নামিয়ে রাখলেন। পান করলেন না। চোখের পানি ঝরাতে লাগলেন। বুক ভাঙা কান্না আসলো। হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। লোকজন জিজ্ঞেস করতে লাগল। আবু বকর, হে খলীফাতুর রাসূল! কেন কাঁদছেন? অশ্রু গড়িয়েছে বহু। তিনি কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলেন। বললেন, নবীজীর অন্তিম শয়নের সময় আমি তাঁর কাছে ছিলাম। তাঁর অন্তিম শয্যায় কাছে থেকে দেখেছি, তিনি কী যেন দু’হাত দিয়ে দূরে সরাচ্ছেন। আমার নজরে কিছু আসছিল না। তিনি ক্লান্ত স্বরে বলছেন, আমার থেকে দূর হও! আমার থেকে দূর হও! আমি তাকিয়ে কোন কিছু লক্ষ্য করতে পারলাম না। তাঁকে শোধালাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কী জিনিস তাড়াচ্ছেন ? আপনার কাছে তো কোন কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। মহানবী ﷺ বললেন, এই তো দুনিয়া তার যাবতীয় সহায়-সম্পদরাজি নিয়ে আমার কাছে হাজির হয়েছে। আমি তাকে বললাম, দূর হও আমার থেকে!! সে আমার থেকে দূরে সরে গেল। সে বলছে, আপনি আমার খপ্পর থেকে বেঁচে গেলেও আপনার পরবর্তী লোকেরা আমার কবল থেকে নিস্তার পাবে না। হযরত আবু বকর রা. মাথা নেড়ে দুঃখ ও অনুতাপ নিয়ে বললেন, মধু দিয়ে মিশ্রিত পানি দেখে আমার আশঙ্কা হল হতে পারে দুনিয়া আমার সাথে লেগে গেল। এই জন্যই কাঁদছি।
নবী ও রাসূলদের পথ ও পন্থায় তিনি নিজের জীবনকে গড়েছেন। ঈমান ও তাকওয়ার কিংবিদন্তি। সংশয় ও সন্দেহকে মাড়িয়েছিলেন দু’পায়ে। পাত্তা দেননি শোবা-সন্দেহকে। পরিহার করে চলেছিলেন অহেতুক কানকথা। হযরতের এক কাজের লোক ছিল। সে খাবার ও শস্য নিয়ে তাঁর কাছে নিয়ে আসতো। তিনি খাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করে নিতেন কোথা হতে আগমন ঘটলো এ সকল আয়োজন?
একদা বালকটি কিছু খাবার নিয়ে হাজির। হযরতকে খেতে দিলে তিনি তা খেলেন। কিছুটা খিদের তাড়নায় আজ খাবার-সূত্র জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলেন। বালক বিস্ময়াভিভূত হয়ে বলল, যখন কোন খাবার নিয়ে আপনার কাছে আসি আপনি আমাকে খাদ্য-সূত্র জেনে নেন। আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কোথা থেকে খাবার নিয়ে এসেছো? কিন্তু আজ? আবু বকর রা. বালকের দিকে তাকালেন। খাওয়া বন্ধ করে বলে উঠলেন, আমার খিদে পেয়েছিল। তাই জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা বলো, এ খাবার কোথা থেকে এনেছো? বালক বলল, জাহিলী যুগে আমি এক লোকের হাত গোনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম। গণকগিরি আমি ভালোভাবে জানতাম না। সাধারণত আমি প্রতারণার আশ্রয় নিতাম। সম্প্রতি তার সাথে আমার দেখা হলে সে বলল, তোমার সে ভবিষ্যদ্বাণী ফলেছিল। আগাম তথ্য সত্যে পরিণত হয়েছিল। সে সুবাদে পারিশ্রমিক স্বরূপ আমাকে এ খাদ্যসামগ্রী দিয়েছিল। এ কথা আবু বকর রা.-এর চোখে মুখে ভয়ভীতির এক প্রভাব আচ্ছন্ন করেছিল। তিনি বলে উঠলেন, তুমি তো আমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এলে! এ কথা বলে তিনি গলার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। বমি করে সব খাবার বের করে নিয়ে এলেন। তখন তাঁকে বলা হল, এতকিছু একটিমাত্র লুকমার জন্য? তিনি বললেন, যদি আমার জান বের হওয়া ছাড়া এগুলো বের হওয়ার কোন পথ না থাকতো তারপরও আমি জান বের করে হলেও তা বের করতাম। এ কথা বলার সময় তাঁর মুখমণ্ডলে হাসি ও তৃপ্তির ঝিলিক দোলায়িত হচ্ছিল।
নিজেকে নিকষিত করেছিলেন সাধনা করে। আত্মসমালোচনায় ও নিজের হিসাব-নিকাশের তিনি ছিলেন তুলনীয় ব্যক্তি। সংশোধন ও আত্মশুদ্ধি নিজের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য ও প্রয়োজন-এ মতবাদের তিনিই পাঠশালা। একদিন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হযরত আবু বকর রা. নিকট আসলেন। বাড়িতে প্রবেশ করে দেখেন, ঘরের দেয়ালের নিম্নঅংশে বসে তিনি জিভের মাথা টেনে ধরে শিক্ষা দিচ্ছেন। আবু বকরের এমন কাজ দেখে উমর রা. থ বনে গেলেন। আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না। জিজ্ঞেস করলেন, কেন এমন করছেন খলীফাতুল মুসলিমীন? কেনই বা জিভকে শিক্ষা দিচ্ছেন? আবু বকর রা. ইস্তেগফার করতে করতে বললেন, বিভিন্ন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তো এই জিভ-ই আমাকে ফেলে থাকে।
তিনি তাঁর দীর্ঘ হায়াত কাটিয়েছেন তাঁর প্রিয় মানুষ ও শিক্ষক হযরত মুহাম্মাদুর রাসূল্লাল্লাহ্ ﷺ-এর সাথে। যাঁর প্রথম সবক ছিল নিজেকে নিয়ে সাধনা করা। মনের গরিমা ধূলিস্যাৎ করাই ছিল তাঁর প্রথম পাঠ। সত্য যেখানেই হোক আসামাত্রই তা গ্রহণ করে নেওয়া এবং হকের সাথে আলিঙ্গন করা।
একবার মদীনা শরীফে আবু বকর রা. সাদাকার উটের পাল মানুষের মাঝে বন্টনের ঘোষণা দিলেন। যখন সময় হল তিনি বললেন, কেউ যেন অনুমতি ব্যতীত আমাদের কাছে প্রবেশ না করে। তখন জনৈক ব্যক্তি আসল। তার হাতে উটের গলায় ব্যবহৃত একটি রশি। এসে হযরত আবু বকর ও উমর রা. এর কাছে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করে। তখন তাঁরা উভয়েই দান-সাদাকা ভাগ-বাটোয়ারা করছিলেন। আবু বকর রা. চেয়ে দেখলেন লোকটি তাঁদের সামনে এবং তার হাতে একটি রশি। আবু বকর রা. তার হাত থেকে রশি নিয়ে তাই দিয়ে তাকে প্রহার করলেন এবং জোর গলায় বলে উঠলেন, আমাদের এখানে তোমাকে কে আসতে বলেছে ? লোকটি ভীত হয়ে চলে গেল। আবু বকর রা. দুঃখিত হলেন। লোকটিকে আবার আনা হল। তিনি তাকে বললেন, তুমি আমার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে নাও। উমর রা. বললেন, প্রতিশোধ নিতে হবে না। তখন আবু বকর রা.-এর হাত-পা কাঁপছে। তিনি বললেন, কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে কে বাঁচাবে? হযরত উমর রা. বললেন, তাকে খুশি করে দিন। তখন আবু বকর রা. তার জন্য একটি বাহন, একটি চাদর ও পাঁচটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে তাকে খুশি করে দিলেন। লোকটি মহাখুশিতে চলে গেল।
সব সময় তাঁর মাঝে আল্লাহ-ভীতি ভর করে থাকতো। খোদাভীতি নিয়ে তাঁর জীবন-সংসার। হৃদয়জুড়ে দুশ্চিন্তা। অথচ চারদিকে নির্মল আবহাওয়া, পরিবেশ খুব শান্ত। আবু বকর রা. ঘর থেকে বের হলেন। কোথাও যাচ্ছেন। আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। দেখছেন পাখি গাছের ডালে মনের সুখে মিষ্টি সুরে গান করছে। এরই মধ্যে বলে উঠলেন, হে পাখি! তোমাকে স্বাগতম! মোবারক ও সুসংবাদ তোমাকে! কসম, আমার হৃদয়ের অভিপ্রায় আমি যদি হতাম তোমার মতো! তুমি গাছে গাছে উড়ে বেড়াও। ফলমূল খেয়ে তোমার জীবন। নানা দিকে উড়ে বেড়াও। তোমাকে কোন কিছুর হিসাব দিতে হবে না। নেই কোন আযাব ও শাস্তির ভয়।
একদিন দিনদুপুরে আবু বকরের কাছে আগমন করলেন উমর রা.। বললেন, রাসূলের পর হে শ্রেষ্ঠ মানব! আবু বকর রা. লজ্জা আর বিনয়ে মাথা নিচু করে রাখলেন। এরপর বললেন, আপনি এটা বললেন। অথচ রাসূল ﷺকে বলতে শুনেছি, উমরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন মানুষের উপর সূর্য উদিত হয়নি। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস : ৩৬১৭)
দুনিয়া বিনাশের প্রথম প্রস্তরখুঁটি তিনিই রেখেছিলেন। জগত সমুদ্রে তিনি সাঁতরিয়েছেন অথচ ভেজেনি তাঁর কাপড়চোপড়। জাগতিক চাকচিক্য থেকে নিজেকে করেছেন সংশ্রবমুক্ত। সময়ের মিছিলে দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়েছে। আবু বকর রা. দীর্ঘসময় রোগশয্যায় ভয়তরাসে দিনাতিপাত করেছেন। দুঃখের রাজ্যে চারপাশে অনুতাপের আবহে উম্মে মুমেনীন সাইয়্যেদা আয়েশা বিনতে আবু বকর রা. তাঁর পাশে বসে চোখের পানিতে নয়ন ভাসিয়েছেন। ছিদ্দীক রা. হ্রস স্বরে বললেন: বেটি, ব্যবসা-বাণিজ্যে কুরাইশ সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ বণিক ছিলাম। সেরা ধনাঢ্য ছিলাম আমি। খিলাফত ও রাষ্টপরিচলনার কাজে ব্যস্ততার দরুন প্রয়োজনীয় অর্থকড়ি বায়তুল মাল থেকে গ্রহণ করেছিলাম। মা, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কোন সম্পদ এখন আর আমার কাছে নেই। আছে শুধু এই আবা। ঢিলে এই জামা। আর আছে এই পাত্র ও কাজের লোক। আমার ইন্তেকালের পর এসব কিছু দ্রুত হযরত উমরের নিকট পৌঁছে দিবে।
হযরত আবু বকর রা. মারা যাওয়ার পর হযরত আয়েশা রা. ওসিয়ত অনুযায়ী পরিত্যক্ত এসব কিছু নিয়ে উমর রা.-এর নিকট গেলেন। উমর রা. অশ্রুবিধৌত নয়নে বললেন, আল্লাহ তাআলা হযরত আবু বকরের প্রতি দয়াপরবশ হোন। তিনি পরবর্তীদেরকে কঠিন অবস্থায় ফেলে গেলেন। সাধনার এক কঠিন অধ্যায় রেখে গেলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, যেন কেউ কখনও তাঁর ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস-ই না পায়।
হযরত আয়েশা রা. বলতেন, আবু বকর রা. যখন মারা যান তখন তিনি কোন স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রা রেখে যাননি। তাঁর অবশিষ্ট সম্পদ তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি অশ্রুসিক্ত ও কোমল হৃদয়ের মানুষ। হযরত সাইয়্যেদিনা আয়েশা রা. বলেন, আবু বকর কোমল হৃদয়ের লোক। নামাযে দাঁড়ালে তাঁর কান্না পায়। কান্না চেপে বসলে তাঁর পড়ার আওয়াজ শোনা যায় না।
হযরত আবু বকর রা.-এর ইন্তেকালের পর হযরত উমর রা. গেলেন তাঁর বিবি আসমা বিনতে উমাইস রা.-কে জিজ্ঞেস করতে, আবু বকর নির্জন-নিভৃতে কিভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করতো? উত্তরে তিনি স্মৃতিকাতর হয়ে বললেন, রাতের শেষপ্রহরে শয্যা ছেড়ে উঠতেন। অবিরাম নামায পড়তেন আর কেঁদে কেঁদে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। দোআ করতেন। সিজদায় পড়ে থেকে কাঁদতেন। এ কথা শোনে হযরত উমর রা. কাঁদলেন।
হৃদয়রাজ্যে বাস করতো হায়া আর লজ্জশীলতা। বংশীয় গুণে তিনি ছিলেন খান্দানি ও বনেদি। তা সত্ত্বেও কেউ তাঁর প্রশংসা করলে তিনি ছোট হয়ে যেতেন। কেউ তাঁর স্তুতি ও গুণকীর্তন করলে তিনি লজ্জায় লাল হয়ে যেতেন। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রোনাজারি করে আওড়াতেন, মাবুদ, তারা যেমন আমাকে মনে করে আমাকে তাদের ধারণার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও ভালো বানিয়ে দেন। তারা যা জানে না তাও আমাকে মাফ করে দিন। তারা যা বলে সে কারণে আমাকে পাকড়াও করবেন না।
মৃত্যুশয্যায় আবু বকর রা. শায়িত। শরীরে বহু রোগের আক্রমণ। তিনি পড়ে রইলেন শয্যাশায়ী হয়ে। দায়িত্বের ভারে ন্যুব্জ। ভয় ও অজানা শঙ্কায় তাঁর হাত-পা কাঁপছে। লোকজন দলে দলে তাঁকে দেখতে আসছে। তাঁর চারপাশে বসে জিজ্ঞেস করছে, খলীফাতুর রাসূল! হে আবু বকর! আপনার জন্য ডাক্তার ডাকবো না? তিনি ঠোঁটে সামান্য হাসির ঝলক দিয়ে বললেন, ডাক্তার তো আমার কাছে এসেছিল। আবেগের সঙ্গে তারা বলল, ডাক্তার আপনাকে কী বললেন। তিনি কোটরাগত দু’চোখ বুজে বললেন, ডাক্তার আমাকে বলেছেন যে, আমি যা চাচ্ছি তাই করতে যাচ্ছি। এ কথা শোনে লোকজন মাথা নেড়ে আফসোস করলো। তারা গভীর নীরবতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ল। এতঃপর সাইয়্যেদেনা আয়েশা রা. আবু বকর রা. এর নিকট প্রবেশ করলেন। তখন আবু বকর রা. মৃত্যুমুখে পতিত। দুই কপোল বেয়ে চোখের পানি ঝরছে। কবির ভাষায় :
لَعَمْرك مَا يُغني الثَّرَاءُ عن الفتى * إذا حَشْرَجَتْ يَوْمًا و ضاقَ بها الصدورُ
‘কসম, মৃত্যুযন্ত্রণা আর বিভীষিকায় পড়লে যুবকের কোন কাজে আসে না তার সম্পদ।’
আবু বকর ছিদ্দীক রা. তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, মেয়ে, আমার বিষয়টা এমন নয়। বরং তুমি বলো, (অনুবাদ) মৃত্যুযন্ত্রণা ন্যায়সঙ্গত এসে গেছে। (সূরা ক্বাফ, আয়াত : ১৯)। এরপর বিনয় ও স্নেহ-মমতার সাথে বললেন, আমার এই দু’টি কাপড় ধুয়ে নাও। এই দুই কাপড়েই আমাকে কাফন দিবে। কারণ নতুন কাপড় মৃত লোকের চেয়ে জীবিত লোকের বেশি দরকার।
হযরত সালমান ফারসী রা. হযরত আবু বকর রা. এর নিকট আসলেন। আবু বকর রা. তখন মৃত্যুশয্যায় মুমূর্ষু। তিনি বললেন, হে খলীফাতুর রাসূল! আমাকে ওসিয়ত করুন! তিনি পতিত দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও জগত খুলে দিবেন। জাগতিক কল্যাণ তোমাদের করতলগত হবে। সুতরাং যা প্রয়োজন তাই গ্রহণ করো। এরপর তিনি পরলোকে গমন করলেন। আবেগ আর আকাঙ্খা নিয়ে পাড়ি জমালেন। চারপাশে রয়েছে ফেরেশতা দল। তখন হিজরী ক্যালেন্ডারে ১৩ সাল। নবীজী ﷺ-এর ওফাতের দিন যেভাবে মদীনা শরীফ কান্নায় ভেঙে পড়েছিল ঠিক তেমনিভাবে তাঁর মৃত্যুতেও মদীনা শরীফ জুড়ে কান্নার রোল পড়েছিল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। তাঁর শাসনামল ছিল দুই বছর তিন মাস আট দিন। দেহ মোবারক সমাহিত হয়েছিল নবীজী ﷺ-এর পার্শ্বে।