ঈমান ও আক্বীদাদোআ

দোআ করে হতাশ হয় না মুমিন

দোআর ব্যাপারে একটি বিষয় লক্ষ করার মতো।

চাওয়া এবং দেওয়া। দুটি কাজ। কেউ না চাইলে কি কেউ দেয়? হ্যাঁ, দেয়। আমাদের মত সাধারণ মানুষও এমনটা করে। আর আল্লাহ তাআলার দান তো অপরিসীম। তারপরও একটু লক্ষ করুন..

আল্লাহ তাআলা চাওয়ার আদেশ করেছেন। বলেছেন, তোমরা চাও, আমি দিব। মুমিন জানে যে আমার কী দরকার, আমার মুনিব খুব ভালো করে তা জানে। এটা প্রত্যেক মুমিনে দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিত। কারণ আল্লাহ তাআলার কাছে এটা একদমই অজানা নয় তাঁর বান্দার কখন-কী দরকার। তারপরও মুমিন চায়। মুমিন চাইল মানেই হল আল্লাহ পাকের ‘আমার কাছে চাও’ আদেশটি মুমিন পালন করল। এরপর আল্লাহ তাআলার দেওয়ার পালা। তিনি দিবেন কি দিবেন না – এটা তাঁর ব্যাপার, তিনি প্রার্থীর মুখাপেক্ষী নন। প্রার্থী অবশ্য তাঁর মুখাপেক্ষী। তাই মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলেও প্রার্থী দাঁড়িয়ে থাকে। প্রার্থীকে বলা হল, তোমার জন্য দরজা বন্ধ করার পরও এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? প্রার্থীর কাছে একটাই জবাব, উনি চাইতে বলেছেন, তাই দাঁড়িয়ে আছি (আমি উনার কাছে তাই চাইছি)। এটা আসলে অনেক বড় একটি নেক তাওফীক। কারণ বান্দা এভাবে প্রমাণ করছে যে, আমি যার জন্য আদিষ্ট তা আমি পালন করে যাচ্ছি।

দেওয়ার মূল এবং শ্রেষ্ঠ পাত্রের কাছে যে চায় সেই ব্যক্তি দেখুন কতটা ধন্য। এত মহান দরবার আর নেই, এত বড় দাতাও আর নেই। যে তাঁর সামনে নত হয়ে চায় সেও তাই উত্তম গ্রহিতা। গ্রহণের কিছু নেই কে বলল? এই যে অপেক্ষারত থাকা — এটা কী মনে হচ্ছে? সস্তা অথবা বেকার? এটাকে বেকার মনে করলে বড়ই ভুল করছি আমরা।

আল্লাহ তাআলার কাছে চেয়ে কিছু না পেলে মুমিন হতাশ হয় না। কারণ, কি জানেন? কারণ হল, কিছু একটা সে অবশ্যই পেয়েছে। এটা কেমন কথা? এখানে কী যুক্তি? আসলে ভাই, যে চেয়েছে সে পেয়েছে, যে পেয়েছে সে দেখেছে সে কী পেয়েছে।

যেকোনো মুমিন, যে কিনা সবসময় আল্লাহর কাছে চায়, সে কেন চায়? সে কি কিছু পায়? আচ্ছা যদি না পায় তাহলেও কেন চায়? জি, আসল ব্যাপার হল, সে যতবারই চায় ততবারই পায়। তাই সে আরও চায়, বার বার চায়।

দুনিয়াতে পর্দা উন্মোচন হচ্ছে না। তাই মুমিন আর কাফের কে অথবা তাদের মধ্যে পার্থক্য কী – এটা সবসময় বোঝা যাচ্ছে না। একইভাবে দোআর ফলাফলও ঢাকা বা আবৃত। তার মানে এ নয় যে তা ফলাফল শূন্য। তা মোটেই নয়। বান্দার কাজ চাওয়া, আর আল্লাহর কাজ দেওয়া। বান্দাকে নিয়ম-নীতি মেনেই চাইতে থাকতে হবে, আর আল্লাহ তাআলা কোনো নিয়ম-নীতির মধ্যে আবদ্ধ নয়। তিনি যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা দিবেন। এটাই বাদশাহী-বৈশিষ্ট্য। এটা সবাই একভাবে বুঝে না। তাই কেউ বাদশাহর কাছ থেকে ‘কিছু’ চাওয়ার পর পেয়ে অনেক খুশি হয়, আর কেউ কেউ বাদশাহর কাছে ‘অনেক কিছু’ চাওয়ার পর পুরো বঞ্চিত হওয়ার পরেও আরো বহুগুণ বেশি খুশি হয়ে যায়। কারণ কী? কারণ হল, শেষোক্ত ব্যক্তি বাদশাহকে যেহেতু ঠিক মতন চিনি, তাই সে চিনে তাঁর দানের ধরণও! শেষোক্ত ব্যক্তি আসল মুমিন৷ দোআ ইবাদত, এটা সে জানে এবং বুঝে। দোআ তাকে রূহানি শক্তি জোগায়, দোআ তার সাহসকে বৃদ্ধি করে। দোআয় তার মনোযোগ আছে, এবং কেবল বাহ্যিক ফলের প্রতি দৃষ্টি নেই। এগুলো দোআকারীর প্রতি আল্লাহ পাকের বিশেষ দান।

আমাদেরকে দেখতে হবে, আমরা কতটুকু নিবেদিত দোআ করায়? কিসের আশায় দোআ করি। শুধু বাহ্যিক ফল আর দুনিয়ার অভাব মোচন? নাকি আল্লাহ তাআলার অশেষ দান ও কল্যাণের প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা আছে?!

ছোট্ট শিশুকে খেলনা গাড়ি আর বড় গাড়ির মধ্যে একটি সাধলে দেখবেন ছোট্ট খেলনা গাড়ির দিকেই সে হাত বাড়াচ্ছে, ওটার দিকেই তার নজর আর আকর্ষণ। আমরা তার চেয়েও অধম হয়ে গেলাম; দোআর মধ্যে কীসব চাই।

আসুন লম্বা সময় মনোযোগ সহকারে দোআ করি। বার বার এক দোআ করি। উঠতে চলতে ফিরতে দোআ করি। কান্নার ভান করে দোআ করি। নিজের জন্য ও পুরা উম্মতের জন্য দোআ করি। দোআ কবুল হচ্ছে বিশ্বাস রেখে দোআ করি। আল্লাহ পাক রাজি হচ্ছেন ও দান করছেন — এ ধারণা রেখেই দোআ করি। কাকুতি মিনতি করে দোআ করতে থাকি।

আল্লাহ! কবুল কর। আমীন

Last Updated on March 7, 2023 @ 10:23 am by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *