দুনিয়াতে থেকে আখেরাতের অবস্থা
পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় আজ বুঝতে পারছি না যে, এই জীবনের উদ্দেশ্য কী? কোথায় আছি, কোথায় যাচ্ছি? কী করছি? বাস্তবে কী অর্জিত হচ্ছে?
পরবর্তী জীবন – ‘আখেরাত’ এমন যে, দুনিয়াতে বসে না সেই জীবনকে দেখা যায়, না সেখানের কথা শোনা যায়, না কারো মাধ্যমে একটু জানা যায় তার হাল-হকিকত।
হ্যাঁ, যা কিছু জানা গেছে তা কুরআন আর হাদীস থেকেই।
কুরআন হাদীসের কথা স্বীকার করে কেউ হয়েছে মুমিন-মুসলমান; আর সেই কথা অস্বীকার করে কেউ হয়েছে অবিশ্বাসী-কাফির। যেকোনো কালের যেকোনো সময়েই এ দুটিই দল। একটু ঘুরে তাকালেই হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। লক্ষ লক্ষ নবী عليهم سلام গণ-এর দাওয়াত চলেছে। কেউ সেই দাওয়াত গ্রহণ করছে, কেউ তা অগ্রাহ্য করেছে। কী পরিণতি হয়েছে? এদিকে কুরআন মাজীদ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বার বার। যেমন:
(অর্থ): তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক আদ (জাতি)র প্রতি কি আচরণ করেছেন? ইরাম সম্প্রদায়ের প্রতি, যারা উঁচু উঁচু স্তম্ভের অধিকারী ছিল। যাদের সমান পৃথিবীতে আর কোনো জাতিকে সৃষ্টি করা হয়নি? এবং কি আচরণ ছামুদ (জাতি)র প্রতি, যারা উপত্যকায় বড়-বড় পাথর কেটে ফেলেছিল? এবং কি আচরণ করেছেন পেরেক-ওয়ালা ফেরাউনের প্রতি? যারা দুনিয়ার দেশে-দেশে অবাধ্যতা প্রদর্শন করেছিল। এবং তাতে অশান্তি বিস্তার করেছিল। ফলে তোমার প্রতিপালক তাদের উপর শাস্তির কষাঘাত হানলেন। দৃঢ় বিশ্বাস রাখ, তোমার প্রতিপালক সকলের উপর দৃষ্টি রাখছেন। সূরা ফাজর ৬ – ১৪
এই যে শাস্তি ও সাজা আর আল্লাহ তাআলার ধর-পাকড় — এগুলো এক দিনে আসেনি। কখনো কখনো এক বছরেও না। এমনকি একশত বছর, পাঁচশত বছর বা তারও বেশি ফুরসত আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন নিদর্শন এসেছে, ছোট-খাট শাস্তি এসেছে। কিন্তু সুযোগ দেয়া হয়েছে অনেক বেশি। লম্বা লম্বা সময় পরে শাস্তি এসেছে। সেজন্যই তো বলা হচ্ছে: অর্থ: “দৃঢ় বিশ্বাস রাখ, তোমার প্রতিপালক সকলের উপর দৃষ্টি রাখছেন।”
প্রকৃতপক্ষে, কর্মফলের জন্য আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন আখেরাতকে। পক্ষান্তরে কর্ম সম্পাদনের জন্য জায়গা হল এই দুনিয়া। যে কিনা আখেরাতে বিশ্বাসী, যে কিনা আখেরাতের হিসাব-নিকাশে বিশ্বাসী – তার অবস্থা তাহলে কেমন হবে? ভাবা উচিত। সে কি পার্থিব পরিণতির চিন্তা নিয়েই দুনিয়াতে থাকতে বিশেষ ব্যস্ত থাকবে? না, বরং ধৈর্য আর সহনশীলতায় সে থাকবে অনেক অগ্রগামী।
আজ আমাদের অনেকের দুশ্চিন্তার বড় কারণ এটাই যে, আমরা নগদ অনেক ফলাফলের পিছনে পড়ে যাই। অন্যায়কারী কেন অমুক কারণে শাস্তি পাচ্ছে না বা আমি কেন অমুক কাজের জন্য এখনো পুরস্কৃত হলাম না(?!) অনেকের জীবন এসব প্রশ্ন নিয়েই সমাপ্ত হয়ে যায়। এ প্রশ্নের উত্তর আন্তরিকতার সাথে খোঁজা হয় না, ফলে মৃত্যু-পরবর্তী নিজ প্রস্তুতির সুযোগ করা হয়ে উঠে না। দুনিয়াতে অবস্থানের এই সময়টাতে আমি কী ভাল কাজ করতে পারতাম, কী অর্জন করে আখেরাতে পুরস্কৃত হতে পারতাম যার ফলে আখেরাতে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারি – এ চিন্তা অধিকাংশেরই অনুপস্থিত।
প্রত্যেক মুসলমানের এ কথা চিন্তা করা উচিত যে, আমিও কি ঈমান এনে, মুমিন হয়ে, চিন্তা ও কর্মগতভাবে ঐসব কাফিরদের মতন দুনিয়াতেই ভোগের পিছনে হেলে পড়লাম না তো? আমিও কি দৈনিক চব্বিশ ঘন্টার মাঝে এ চিন্তাই বেশি করছি না তো – দুনিয়াতে কি খাব, কি পড়ব আর কিভাবে থাকব? যদি এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর সন্তোষজনক না হয় তাহলে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত।
আমাদের প্রত্যেকের উচিত সঠিক জ্ঞান, সঠিক জায়গা থেকে অর্জন করা। সাথে সাথে উচিত সেই জ্ঞানের আলোকেই সাধ্যমত জীবন পরিচালনা করা। মুমিন হয়েও চিন্তা-চেতনা ও কাজে ভ্রষ্টতার শিকার হওয়ার কারণ, এই সঠিক জ্ঞান ও তার প্রয়োগে চরম অবহেলা।
কত স্পষ্টই আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন (অর্থ): তারা পার্থিব জীবনের কেবল প্রকাশ্য দিকটাই জানে আর আখেরাতের ব্যাপারে তাদের অবস্থা হল, তারা সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল। তবে কি তারা নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখেনি? আল্লাহ তাআলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে এবং উভয়ের মাঝে বিদ্যমান জিনিসকে যথাযথ উদ্দেশ্য ও কোনো মেয়াদ ব্যতিরেকে সৃষ্টি করেননি (অর্থাৎ, উদ্দেশ্যবিহীন ও মেয়াদবিহীন মনে করে)। বহু লোকই এমন, যারা নিজ প্রতিপালকের সাথে মিলিত হওয়াকে অস্বীকার করে। সূরা রূম: ৭ – ৮
Last Updated on August 3, 2022 @ 11:11 am by IslamInLife বাংলা