গুনাহের উপলক্ষ থেকে সতর্কতা আবশ্যক
আমরা আল্লাহ তাআলার বান্দা। আমাদের দৈনন্দিন প্রতিটি কাজ হবে আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে। মুসলমান হয়ে আমরা এ কথারই স্বীকৃতি দিয়েছি যে, মন মত কাজ করা চলবে না, মন মত চলা যাবে না। আমি যা ভালো মনে করব বা আমি যা খারাপ মনে করব – এই ধারণা ও চিন্তা দিয়ে ভালো মন্দ যাচাই করা যাবে না। বরং, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ যা ভালো বলেছেন, সেটাই ভালো। একইভাবে, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ যেটাকে খারাপ বলেছেন, সেটাই খারাপ। এভাবে আমার সমস্ত চাওয়া আর পাওয়াকে আমি আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও আদেশের অধীন করে দেব, সে অনুযায়ী প্রতিটি কথা ও কাজ করব – এই মৌলিক বিশ্বাসের উপরই আমি একজন মুসলমান হব।
আল্লাহ তাআলা কত দয়া ও মায়া করে বলেছেন (অর্থ): হে ঈমানদারেরা! আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর সেইভাবে যেইভাবে ভয় করা উচিৎ! সাবধান অন্য কোনো ভাবে যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে, বরং এই অবস্থায় যেন আসে যে তোমরা মুসলিম। সূরা আল ইমরান: ১০২
আজ ঈমানী আলোচনা কমে গেছে। ঈমানী চিন্তা ভাবনা কমে গেছে। বিশ্বাসগত ভুল আর কর্মগত ভুলে আমরা ঈমানদাররাই ডুবে যাচ্ছি। আলেমে দ্বীন ও আল্লাহওয়ালারা এভাবে বলছেন, “না – দ্বীন (ইসলাম) থেকে আমরা দূরে নয়, বহু – বহু দূরে সরে গিয়েছি আজ!” এটা খুবই চিন্তার বিষয়, খুবই আশঙ্কাজনক।
আজ আমাদের সমাজে বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠান, দিবস পালন হয়ে থাকে। সামাজিকতা রক্ষার নামে আমরা অনেকেই এসবের মধ্যে অংশগ্রহণ করে ফেলি। বাস্তবে এসবই হল মনের অবৈধ চাহিদা মেটানোর নানান পথ। বিভিন্ন ফাংশন, প্রোগ্রাম, মিলনী, জন্মদিন, বার্ষিকী, দিবসের নামে গুনাহের আয়োজন। কখনো কি ভেবে দেখেছি যে, এগুলোর কারণে আমার রব, আমার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আমার প্রতি সন্তুষ্ট না কী অসন্তুষ্ট? কখনো কি এই সব আনন্দ-অনুষ্ঠান-প্রোগ্রামকে কুরআন ও হাদীসের কষ্টিপাথরে যাচাই করে দেখেছি আমরা? যারা আল্লাহ তাআলাকে বিশ্বাসই করে না, আখেরাতের হিসাব নিকাশের বিষয়ে যারা একদম বেখবর, নামাযের ধার যারা একদমই ধারে না, বেপর্দা চলার বিষয়ে যারা একেবারে বেপরোয়া – আফসোস তাদের জন্য তো তত নয়, যত বেশি আফসোস ঐসব মুসলমানের সন্তানদের জন্য যারা এসব কাজের অনিষ্টতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। নামাযও পড়ে, রোযাও রাখে। পর্দা রক্ষা না করতে পারলে চিন্তিত হয়। তারা যদি এ জাতীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অন্যদের সাথে একাকার হয়ে যায়, তাদের জন্য বড় আফসোস! !
প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর ভেবে দেখতে হবে, চিন্তা করতে হবে গভীর ভাবে। আনন্দ-ফূর্তি, দিবস পালন, বিবাহ উৎসব – নানান নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে জীবনের অমূল্য সময়গুলি কোথায় অতিবাহিত হচ্ছে? সব বাদ দিয়ে শুধু মহিলা-পুরুষের অবাধ মেলামেশা – যদি শুধু এই একটি বিষয়ই উপস্থিত থাকে, তাহলে কত ভয়াবহ পরিণতির অপেক্ষায় আমরা আছি! একটু চিন্তা করা দরকার; একটু ভেবে দেখা দরকার।
কম-সে-কম যেন গুনাহ-কে আমরা গুনাহ মনে করি। আল্লাহ তাআলার ভয় অন্তরে পোষণ করি। এতটুকু ছুটে গেলেতো ঈমানটাও হারিয়ে গেল! (আল্লাহ তাআলা হেফাজত করেন!)
দুনিয়া এবং আখেরাতে – উভয় জগতে শান্তি ও সফলতা পাবার জন্য আল্লাহ তাআলার নাফরমানি থেকে বাঁচা জরুরি। আনন্দ-ফূর্তি, সামাজিকতা রক্ষা, বিবাহ উৎসব – এগুলোর সীমা ইসলাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সীমাগুলিকে লংঘন করে আমি সাময়িক কিছু ফূর্তি-আনন্দ তো পাব। কিছু মানুষকে খুশিও করা হবে। কিন্তু সেটা আল্লাহ তাআলাকে নারাজ করেই করা হবে। এটা কত ভয়াবহ বিষয়!
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের পার্থিব জীবনে যত অশান্তি, পেরেশানী, আর অসহনীয় বিপদাপদ — সবই হল এসব গুনাহের ফল। আর আল্লাহ তাআলা হেফাজত করুন, তওবা না করলে এসব পাপাচারের কারণে মৃত্যুর পরপরই কত বড় শাস্তি যে রয়েছে তা তো প্রতিটি ঈমানদারদের জানা (ও তাদের অন্তরের বদ্ধমূল বিশ্বাস)!
একজন মুসলমানের জন্য নেককার বন্ধু, ভালো পরিবেশ, ইসলাম অনুমোদিত আনন্দ হল বিরাট নেয়ামত। ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই এগুলোকে তার ঈমান-আমল হেফাজতের দূর্গ মনে করবে। আর অসৎ বন্ধু, গুনাহের পরিবেশ, বল্গাহীন আনন্দ-ফূর্তি, নাচ-গানের আসর – এগুলো সবই হল ঈমান ও আমলের জন্য ধ্বংসাত্মক। একজন ঈমানদারের জন্য এসবই হল চোর-ডাকাতের মতন। এইসব গুনাহ ও গুনাহের মাধ্যম আমাদের ঈমান ও নেক আমলকে চুরি করে, ডাকাতি করে।
আসুন একজন মুসলমান হিসেবে সেইসব ফাংশন, প্রোগ্রাম, মিলনী, জন্মদিন, বার্ষিকী, দিবসের থেকে আমরা পরিপূর্ণভাবে বিমুখ হয়ে যাই। যেখানে গেলে সিংহভাগ গুনাহ-ই গুনাহ হয় সেখান থেকে দূরে সরে পড়ি। ওসব জায়গায় সাময়িকভাবে আমার মনটা হয়ত তৃপ্ত হয়। কিছু ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়, বন্ধু বান্ধবদের আড্ডা খুব জমে। আত্মীয়-স্বজন একত্রিত হয়ে কিছু গল্পও হয়। কিন্তু অবৈধ কাজের দিকটাই ভারী হয়ে থাকে। এসব পরিবেশে নাজায়েয কাজ ও গুনাহের প্ররোচণাই বেশী!
আল্লাহ তাআলার নাফরমানির কাজে কাউকে খুশি করা কোনো মুসলমানের কাজ নয়। আজ থেকেই এই চেষ্টা ও দোআ করি যেন এইসব নাফরমানি থেকে আমরা তওবা করে আল্লাহ তাআলার দরবারে খাঁটি মুসলমান হিসেবে হাজির হতে পারি সবাই (আমীন)!
Last Updated on December 7, 2023 @ 6:42 pm by IslamInLife বাংলা