চিন্তার খোরাক​

কষ্ট-ক্লেশ করতেই হবে, অতএব…

কষ্ট-ক্লেশ করেই মানুষ বড় হয়। কষ্ট-ক্লেশ করেই মানুষ দুনিয়াতে জীবনধারণ করে। কষ্ট-ক্লেশ ছাড়া লেখাপড়া, আয়-রোজগার, সংসার — কোনো কিছুতেই সফলতা সম্ভব নয়। এমনকি এই দুনিয়ার জীবনে যত আনন্দ-উৎসব আর মনে চাহিদা মেটানোর বিষয় রয়েছে, সবই কষ্ট-ক্লেশ করেই অর্জন করতে হয়। মনের চাহিদা মেটানোর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি সবসময় করতেও যে খুব ভালো লাগে তাও নয়। তবু অনেক সময়ই আমরা মনের বিরুদ্ধে পর্যন্ত সেগুলোতে অংশ নেই। এটা দুনিয়ার নিয়ম। দুনিয়াতে অবিমিশ্রিত সুখ বা দুঃখ পাওয়া সম্ভব নয়। দুটোই থাকবে। আসবে পর্যায়ক্রমে। কখনো বা সুখের পাল্লা হবে ভারি, কখনো দুঃখের।

একজন ঈমানদার, একজন পরহেযগার, একজন আখেরাতমুখী মানুষের জন্য তাই অবিরাম চিন্তা হল, সময়টা কিভাবে যাচ্ছে? হাত, পা, চোখ হারিয়ে গেলেও আখেরাতে আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে দেবেন। কিন্তু ঈমান হারিয়ে গেলে(!) যদি কেউ ঈমান হারিয়ে আখেরাতে যায়, তার অবস্থা যে কত শোচনীয় হবে ঐ বিষয়ে সে বেশি চিন্তিত থাকে। দুনিয়ার বৃহৎ কিছু হারানো তার কাছে ক্ষুদ্র। আখেরাতের ক্ষুদ্র কিছু হারানো তার কাছে বৃহৎ। অসীম শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, পেরেশানী – সবই তার কাছে পানি। সেজন্যই-তো সে দুনিয়ার জীবনের প্রতিকূলতায় মুষড়ে পড়ে না, ঘাবড়ে যায় না, হতাশ হয়ে যায় না। স্বাভাবিক চিন্তা তাকে অবশ্যই বেষ্টন করে, কিন্তু কখনোই সেটা সীমালঙ্ঘন করে না। ইবাদত বন্দেগী, আল্লাহ তাআলার প্রতি তার সুধারণা অটুট থাকে। এমন বলে না যে, সব শেষ হয়ে গেল আমার, সবই হারিয়ে ফেললাম। বরং বুঝে যে, এ হল তার ভাগ্যের লিখন। এ হল তার জন্য মহামহিম আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত। এটা মেনে নিলে লাভই লাভ। এতে অস্থির হলে ক্ষতিই ক্ষতিই। মৃত্যুর পর আসল জীবন। দুনিয়াতে কেউ ‘এই কষ্ট’, কেউ ‘সেই কষ্ট’ করবেই। অতএব, একপর্যায়ে হাসিমুখে তার অন্তর যেন বলে উঠে, হে আমার রব! আমি তোমার সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম, তোমার সিদ্ধান্তেই আমি রাজি থাকলাম। কষ্ট-ক্লেশ করতেই হবে। অতএব, দুনিয়াতে করব, যা কিছুই একটু করা লাগে….দুনিয়াতেই করব; আখেরাতের মামলা হবে অনেক ভয়াবহ। হে আল্লাহ! তুমিই আমার সহায়, দুনিয়া ও আখেরাতে। তার সামনে কুরআনের সে-ই যে আয়াত….(অর্থ): “বলে দাও, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাকদীরে যে কষ্ট লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট আমাদেরকে কিছুতেই স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহ তাআলারই উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত।” সূরা তওবা: ৫১

———————————————————

  • এর অর্থ কিন্তু এ নয় যে, আল্লাহর কাছে আমরা পার্থিব জীবনে কষ্ট চেয়ে নেব। বরং আমরা ইহকাল ও পরকাল – উভয় হায়াতেই শান্তি চাব। দুনিয়াতে আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার পরীক্ষা যদি চলেই আসে, সবর করব এবং বিপদ থেকে মুক্তির জন্য দোআ অবশ্যই করব।

Last Updated on July 23, 2022 @ 12:27 pm by IslamInLife বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it