বাংলার একজন কিংবদন্তি মহাপুরুষের ইন্তেকাল
কেউ যদি নিজেকে উলামায়ে কেরামের জুতা বাহক বলেন, তাহলেই কি সে উলামায়ে কেরামের জুতা বাহক হতে পারে?! এমনটি নয়। তবে যাকে আল্লাহ তাআলা এ সৌভাগ্য দেন, তিনিই অবশ্যই পারেন হতে! আর এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলব, যিনি এমন গুণের পাশাপাশি রাহমানের প্রকৃত হামেদ ছিলেন!? মাশাআল্লাহ তিনি ছিলেন..আজও আছেন আমাদের অন্তরে, জীবন স্পন্দনে, ইনশাআল্লাহ সবসময় থাকবেন..নামই যার হামীদুর রাহমান — রাহমাতুল্লাহি আলাইহি! ইনশাআল্লাহ তিনি সফল ও সার্থক মাকবুল এক বান্দা, প্রকৃতই উলামায়েকেরামের একজন জুতা বাহক! নিজেকে তিনি এভাবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। একদিকে এটি ছিল তার মহানুভবতা, অন্যদিকে এটি ছিল তার মর্যাদা। আমাদের জন্য যার মধ্যে রয়েছে অনুসরণীয় অজস্র শিক্ষা!
এ সময়ে ঐ আয়াতটিই বার বার মনে পড়ছে:
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ – ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً – فَادْخُلِي فِي عِبَادِي – وَادْخُلِي جَنَّتِي
অর্থ: হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। আর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও ও আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। সুরা ফা’জর – ৮৯:২৭-৩০
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে তাঁর নেক বান্দাগণের আলোচনা করেছেন। নবীগণের আলোচনা করেছেন। করেছেন তাদের সঙ্গীগণের আলোচনা। এছাড়াও তিনি আলোচনা করেছেন এমন মানুষদের, যারা নবীও নন, আবার দুনিয়ায় উনারা নবীগণের বিশেষ সঙ্গীও ছিলেন না। কিন্তু উনারা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। উনাদের কারো কারো নাম নিয়ে অথবা নাম না নিয়ে, ইঙ্গিত দিয়ে প্রশংসা করেছেন রাব্বুল আলামীন।
নেক মানুষের আলোচনা করা সৌভাগ্যের বিষয়! তারা আল্লাহ তাআলার প্রিয় ও বিশেষ বান্দা। যুগে-কালে মানুষ তাদের মাধ্যমেই নেককার হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলার পথ, দ্বীন পায়। দ্বীনের ইলম, ফাহাম এসব নেক মানুষদের মাধ্যমেই ছড়ায়। তারা নিজের যুগ-কাল-সময়ের নমুনা হন। সত্য, সৎ কাজ, সঠিক কথার দিশারী জ্বালিয়ে নিজ বংশ, পরিবেশ, সঙ্গী, বন্ধু, অধীনস্থ সবাইকে আলোকিত করেন। তাদের হায়াতটি বরকতময় হয়ে থাকে। কর্মময় হয়ে থাকে। তাদের চিন্তা-ফিকির, প্রচেষ্টা, দৌড়-ঝাঁপ, দোআ হাজার-লক্ষ মানুষের হেদায়েতের মাধ্যম হয়ে থাকে। তাদের মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহ পুনরুজ্জীবিত হয়। নেক কাজের সিলসিলাহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
তারা কখনো চান না তাদের নাম-ডাক হোক, খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক। আল্লাহ তাআলার কবুলিয়াতই তাদের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করে। মানুষ যতই তাদের প্রশংসা করুক, প্রতিক্ষণ তারা মানুষকে আল্লাহর প্রশংসা করা শেখান, নিজেরা আজীবন আল্লাহ তাআলার প্রশংসাকারী হিসেবে বেঁচে থাকেন। নিজের কাজে কখনো তারা পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হন না। সবসময় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অন্বেষণে ব্যাকুল ও ব্যস্ত থাকেন। নামায, তেলাওয়াত, যিকির-ফিকির, নসীহত, দোআ তাদের সারাক্ষণের কাজ। আরাম করার মধ্যেও তারা চিন্তার সমুদ্রে ডুবন্ত — কিভাবে আরেকটু ভালো কাজ করা যায়!
..একজন ব্যক্তির মধ্যেও কত শত গুণের সমাবেশ হতে পারে! মাশাআল্লাহ।
ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاء وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
অর্থ: এটি আল্লাহ তাআলার (বিশেষ) অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আল্লাহ তো মহান অনুগ্রহকারী! সুরা জুম’য়া – ৬২:৪
মরহুম প্রফেসর হামীদুর রাহমান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। এমনই একজন মানুষ ছিলেন। চলে গেলেন ক্ষণস্থায়ী নিবাস থেকে চিরস্থায়ী আবাসে! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিয়ুন। নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য, আর তাঁর দিকেই আমাদের সবার প্রত্যাবর্তন।
প্রফেসর হামীদুর রাহমান হুজুরকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসে উঁচু মাকাম দান করুন (আমীন)! তার দ্বীনের খেদমত ও ফিকির বলে দেয় তিনি আল্লাহ তাআলার কত প্রিয় ছিলেন। এ কথা আমাদের মতন সাধারণ মানুষ মনে করা, বলা এজন্যই সম্ভব হচ্ছে কারণ, যুগের বরেণ্য উলামায়েকেরাম এ সনদ তাকে দিয়েছেন! আমরা তো কেবল সেটির স্বাক্ষ্য দিচ্ছি! আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা কী আর বলব!? আমাদেরও নেক পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা বৃদ্ধি করতে হবে। এমন মানুষদের জীবন থেকে কুরআনের ভালোবাসা, উলামায়ে কেরামের ভালোবাসা গড়ার সবক গ্রহণ করতে হবে! দ্বীনের খেদমত, দ্বীনি প্রতিষ্ঠান — মসজিদ-মক্তব-মাদ্রাসা গড়ার জন্য কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। নিজ সন্তানদেরকে আখেরাতের পুঁজি বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইখলাস দান করুন! এমন নেক সোহবত দান করুন! এমন চিন্তা-ফিকির দান করুন! এমন শাকের (আল্লাহর প্রশংসাকারী) হিসেবে কবুল করে নিন! কুরআনের এমন আশেক বানিয়ে দিন! এমন দুনিয়া-বিরাগী বানান! উলামায়েকেরামকে মূল্যায়ন করার এমন যওক ও শওক সৃষ্টি করে দিন!
হে আল্লাহ!!
..প্রফেসর হযরতের কবরকে নূর দ্বারা ভরে দিন! আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
Last Updated on November 3, 2023 @ 7:57 am by IslamInLife বাংলা