আসুন এ অবস্থাকে রহমতের মাধ্যম বানাই – ২
প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা, আমরা কি একটি বিষয় বুঝি? কোনো রোগ-শোক ও বিপদাপদ যত প্রতিকূলতাই হোক, মুমিনের জন্য তা রহমত; তা সতর্কবাণী। তা আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে যাওয়ার সংকেত। আমরা বিপদ-দানকারী সেই সত্ত্বার দিকেই ফিরতে বাধ্য যিনি বিপদদূরকারীও বটে। আর, গুনাহ থেকে পলায়নই বা ফিরে থাকাই মুমিন-জীবনের আসল চেষ্টা হওয়া উচিত। এটা সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় করণীয়। আমরা পার্থিব বিপদাপদকে এত ভয় পাই, এবং বান্দা হিসেবে ভয়ের কারণও বটে, কিন্তু এর চেয়েও অনেক ভয়ের ব্যাপার তো আখেরাতের আযাব। সেটাকে কি আমরা তুলনামূলক অনেক কম ভয় পাচ্ছি না?!
দেখুন ঈমানদার বান্দাদের দোআ কুরআনেই বর্ণিত আছে:
অর্থ: আপনি যাকেই জাহান্নামে প্রবেশ করবেন, তাকে নিশ্চিতভাবেই লাঞ্ছিত করলেন। আর জালিমরা তো কোনও সাহায্যকারী পাবে না। সূরা আলে ইমরান: ১৯২
যদি আমি হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ না ছেড়ে আজ পার্থিব আযাবে গ্রেফতার হওয়াতে ভীত হয়ে থাকি, তাহলে প্রশ্ন হল, এই নিষিদ্ধ কাজ কি আল্লাহ তাআলার আসল আযাব থেকে আমাকে বাঁচাতে পারবে? এর উত্তর সবার জানা আছে। কখনই তা আমাকে আল্লাহ তাআলার আযাব থেকে বাঁচাতে পারবে না।
নিজেকে সবাই ভালোবাসি আমরা। নিজের ক্ষতি কেউ চাই না। নিজের আসল ক্ষতি তো এটাই যে, আমি আমাকে জাহান্নাম বা দোজখের আগুনের জন্য প্রস্তুত করছি। এর চেয়ে বড় ক্ষতি তো আর কিছুই নেই। এটি প্রত্যেক মুমিন বান্দার অন্তরের গেঁথে যাওয়া বিশ্বাস।
এ নশ্বর পৃথিবীতে কেউ মৃত্যুর পরোয়ানা ছাড়া তো আর আসেনি। মৃত্যু মানেই হল পার্থিব জীবনের হিসাব-নিকাশের পালা শুরু হয়ে যাবে। অতএব, একজন মুমিনের চিন্তা, চেষ্টা ও সাধনা আমরণ ও আজীবন কেবলই আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা — তিনিই আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মালিক ও পালনকর্তা। দুনিয়া নামক পরীক্ষাগারে আমাদেরকে কেবল পরীক্ষার জন্যই পাঠানো হচ্ছে। অন্য সব কাজগুলো সবই এই পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট । আমরা কি আল্লাহ তাআলার আদেশ মানছি, নাকি নিজের মন যা চাচ্ছে করছি? সব অবস্থায় এটারই পরীক্ষা চলছে। অতএব, এখানে সুখ আছে, আছে দুঃখ, শান্তি আছে, আছে কষ্ট, আনন্দ আছে, আছে বিপদাপদ। এগুলো সবই আল্লাহ তাআলার আদেশে আসছে ও কেয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন:
অর্থ: প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমাদের সবাইকে (তোমাদের কাজের) পুরোপুরি প্রতিদান কেয়ামতের দিনই দেয়া হবে। তারপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, প্রকৃত অর্থে সে-ই সফলকাম হবে। আর পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়। সূরা আলে ইমরান: ১৮৫
কুরআন ও হাদীসের মূল আহ্বান হল: হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ তাআলার আদেশের দিকে প্রত্যাবর্তন কর। একমাত্র তিনিই তোমাদের রব। তাঁর কাছে তোমাদেরকে এমনিতেই ফেরত যেতে হবে। তার আদেশ মেনে তোমরা মৃত্যুবরণ কর।
দেখুন এ তো আল্লাহ তাআলারই কথা! তাও কাদের প্রতি? তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের প্রতি:
অর্থ: হে মুমিনগণ! অন্তরে আল্লাহকে সেইভাবে ভয় কর, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত। (সাবধান! অন্য কোনো অবস্থায় যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে, তোমরা মুসলিম। সূরা আলে ইমরান: ১০২
Last Updated on March 7, 2023 @ 11:02 am by IslamInLife বাংলা