আসল অভাবের অনুভূতির হয়েছে অভাব
আমাদের আলোচনাগুলি অনেক অভাব ও অভিযোগ নিয়ে মুখরিত থাকে। কিন্তু এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলোর অভাব সম্পর্কে আমরা না তেমন অবগত, আর সেগুলি যে আসলেই অভাব ও অভিযোগের বিষয় – না সেই অনুভূতি আমাদের রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই বিষয়গুলি আমাদের আলোচনা ও বিবেচনায় আসে না; সব সময় অবহেলিতই থেকে যায়।
মুসলমানদের অনেক অভাবের মধ্যে অন্যতম এক অভাব হল দ্বীনি জ্ঞানের অভাব। এই অভাব এমন আকার ধারণ করেছে যে, এর ফলশ্রুতিতে আজ ব্যাপকভাবে মুসলমানগণ বিভ্রান্ত, পথহারা ও দিশেহারা! অথচ দ্বীনের ইলম তথা দ্বীনের জ্ঞান হল এক নূর, যেটা মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। কুরআন ও সুন্নাহ হল সেই নূরের মূল উৎস। কিন্তু আজ উম্মত দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে, দুনিয়ার প্রতি অতি মগ্ন হয়ে সেই অমূল্য রত্ন হারাতে চলেছে।
যে ব্যক্তি কমপক্ষে তার দ্বীনের জ্ঞানের এই অভাব তথা অজ্ঞতাকে স্বীকার করে নেয়, এটাও মহৎ গুণ। এই বিনয়মূলক স্বীকারোক্তি তার সংশোধন, তওবা এমনকি সার্বিক উৎকর্ষের কারণ হতে পারে। কিন্তু এরকম মানুষও আজ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। দ্বীনি বিষয়ে আত্মতুষ্টি আমাদেরকে পেয়ে বসেছে। যারা দ্বীনের বাহক, ধারক ও প্রচারক তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
দ্বীনের জ্ঞানের এই অভাব বড় বিপজ্জনক। আরও বেশি বিপজ্জনক হল, যদি কারো মধ্যে এই অনুভূতিই না থাকে! রোগী যদি এটাই না বুঝে যে, সে অমুক এক মরণ ব্যাধিতে ভুগছে, তাহলে তার আর কি অভাব অনুভূত হবে? তার আর কি বেচায়েনি-চিন্তা-ফিকির থাকবে। দ্বীনের জ্ঞানের অভাবে অভাবী যদি না জানে যে, সে কি থেকে মাহরুম, তাহলে তার অন্তরে আর কি ব্যথা থাকবে? তার মনতো আত্মতৃপ্তই থাকবে। এই সুযোগে শয়তান পুরো দ্বীন-কে তার কাছে ‘নফল’ বা ঐচ্ছিক বিষয় বলে দাঁড় করিয়ে দিবে। অর্থাৎ, দ্বীনকে শয়তান উপস্থাপন করবে এরূপভাবে যে, দেখ, এটাই উত্তম – যার যতটুকু মন চায় করুক, যার যতটুকু মন চায় ছাড়ুক – এটা ব্যক্তিগত খেয়াল খুশির ব্যাপার! দ্বীন-কে জানা আর দ্বীন-কে মানা। মুসলমান যদি ঐচ্ছিক বিষয় মনে করে, তাহলে সেই মুসলমান কত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে – একটু ভাববার বিষয় বটে। এরকম মানুষের অন্তরে আল্লাহ তাআলার ও তাঁর রাসূল ﷺ-এর প্রতি আগ্রহ ও মহব্বত থাকা তো বহু দূরের কথা – সে ঈমান ও ইসলামের মাঝে কতটুকু রয়েছে – সেটাই খতিয়ে দেখতে হবে আগে!
টাকার অভাব, ডিগ্রীর অভাব, চাকুরীর অভাব, বাড়ির অভাব – ইত্যাদি সব অভাব তার অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু দ্বীন আমার জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে, ঈমান ও আমল আমার জীবন থেকে শূন্য হয়ে যাচ্ছে, ইসলাম থেকে আমি বেরিয়ে পড়ছি….হায়! আজ মুসলমান সেই অভাব অনুভব করছে না। দ্বীন আমার প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে জরুরি – এর ভ্রুক্ষেপই নেই! কবি বলছেন:
যেই জিনিসের আসল অভাব তা নাহি মোরা জানি,
কোন জিনিসের সন্ধানে রই সর্বদা দিবাযামি।
আসল-নকল সব হবে ফাঁস স্বপ্ন ভাঙবে তোমার
অভাব তখন বুঝবে যখন সময় হবে ফেরার!
বিখ্যাত ফকীহ সাহাবী সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ رضي الله عنه -এর কথার উপর আমরা একটু চিন্তা-ফিকির-আমল করি: তোমরা তিনটি সময়ে আপন অন্তরের সমীক্ষা কর – কুরআন শোনার সময়, যিকির (আল্লাহ তাআলার স্মরণ)-এর মজলিসে এবং নিভৃতে। যদি এই তিন সময়ে নিজেদের কাছে অন্তরকে না পাও (অর্থাৎ, এই তিন সময়ে তোমার মন না লাগে এবং আল্লাহ তাআলার দিকে আকৃষ্ট না হয়) তাহলে তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে দোআ কর যে, তিনি যেন দয়া করে তোমাকে ১টি অন্তর দান করেন। কারণ, তোমার কাছে কোনো অন্তর নেই।
Last Updated on January 4, 2024 @ 3:56 pm by IslamInLife বাংলা