আল্লাহ তাআলার শোকর
আমরা সাধারণত আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় ঐ বিষয়ের বেশি করি যা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রবল ছিল – পেয়েছি, অথবা যে বিষয়ের মুখাপেক্ষী আমরা নিজেকে মনে করি এবং সেটা অর্জিত হয়েছে।
এটাতো ঠিক আছে। কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যাবে জীবনসহ যত কিছুই আমরা পেয়েছি, সেগুলোর আকাঙ্ক্ষা আমরা করি বা না করি, সে জিনিসগুলোর মুখাপেক্ষী নিজেকে মনে করি বা না করি, সবকিছুর জন্যই মহামহিম আল্লাহ পাকের শুকরিয়া করা উচিত। আমাদের চিন্তা-কল্পনা কোনো কিছুই আল্লাহ তাআলার দানকে বুঝতে সক্ষম নয়। তাহলে আল্লাহর প্রকৃত শোকর আদায় করা কিভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্ভব?!
অতএব সবসময়, সব বিষয়েই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার চেষ্টা করা উচিত। কমপক্ষে দৈনিক একটি বার আল্লাহ তাআলার প্রতি একটু মনোযোগী হয়ে বলা উচিত – হে আল্লাহ! তোমার নেয়ামতেই ডুবে আছি, তোমার নেয়ামতই ব্যবহার করছি। আমার জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেবল তোমারই দান। তাই প্রশংসা সব তোমারই। এমনকি এই যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করা হচ্ছে বা হবে – এও নেহায়েত তাঁরই তাওফীক। আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লাহ তাআলার বিশেষ বান্দাদের অবস্থা হল, তারা প্রতি মুহুর্তে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত অবলোকন করেন। সারাক্ষণ শুকরিয়া করতে থাকেন। তারপরও তারা বলেন, হায়! আমার দ্বারা তো আল্লাহ তাআলার কোনো শুকরিয়া আদায় হল না। এটা এজন্যই যে, তারা আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব সম্পর্কে চিন্তা করেন। তাঁর নেয়ামতের কথা বার বার স্মরণ করেন। সবকিছুই যে আল্লাহ তাআলার অশেষ-অসীম রহমত বেষ্টন করে রেখেছে এবং কেউ কখনই তাঁর নেয়ামতসমূহ থেকে বের হতে পারবে না। এ বিষয়টি তারা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
মানুষ আল্লাহ তাআলার পথে যত বেশি আন্তরিকভাবে চেষ্টা-মেহনত করে, সে আল্লাহ তাআলার তত বেশি নিকটবর্তী হতে থাকে। তত বেশি সে আল্লাহ তাআলাকে চেনে। তাঁর দান ও নেয়ামতসমূহ সে তত বেশি উপলব্ধি করতে পারে। তখন তার অন্তর আরও অধিক শোকরগুযার হয়।
অধিক শুকরিয়া আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার সম্পর্ক মজবুত করে, নেয়ামত বৃদ্ধি করে, জীবনকে করে শান্তিময় ও বরকতময়।
উলামাগণ তাই বলেছেন, দেখ যত পার শুকরিয়ার আদত (অভ্যাস) বানাও। অর্থাৎ, সর্বাবস্থায় আন্তরিকভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে থাক। এই যে ঠিক মতন চলতে-ফিরতে পারছ – বল আলহামদুলিল্লাহ। একটা কাজ করছ, কাজটা ঠিক মত হচ্ছে – বল আলহামদুলিল্লাহ। কাজটা শেষ হল – বল আলহামদুলিল্লাহ। কেউ কিছু বলল, তুমি ঠিকঠাক তার কথা শুনতে পেলে, বুঝলে – মনে মনে বল আলহামদুলিল্লাহ। আরে আল্লাহ-র তাওফীক ছাড়া কি শুনেছ বা বুঝেছ?! গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছ কোথাও যাবে, যেই না গাড়ি আসল – বল আলহামদুলিল্লাহ। শান্তি মত গাড়িতে উঠলে – বল আলহামদুলিল্লাহ; বসলে -বল আলহামদুলিল্লাহ; গাড়ি থেকে নামলে – বল আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে, প্রতিটি শ্বাসে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের অভ্যাস বানাও। এটা একটুও কঠিন নয় – সহজ।
আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা অর্জনের এ বড় সহজ উপায়। আল্লাহ তাআলা শোকরগুযার বান্দাকে ভালবাসেন। কবি বলেছেন:
পথের দিকে তাকিয়ে মনে করলাম এই পথ চলা বড় কঠিন;
কেউ কানে কানে আমাকে বলল – ‘তুমি এই পথ চলবে না তো…(!)
তুমি শুধু এরাদা (ইচ্ছা) কর – তোমাকে এ পথে চালানো হবে।’
তখন একটু হিম্মত করে দেখলাম
– হায়! এ তো জান্নাতের পথ, আসলেই আসান!
আমি চলছি না, কেউ আমাকে চালাচ্ছে!
Last Updated on December 12, 2024 @ 8:44 am by IslamInLife বাংলা