আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলার ভয় ও ভালোবাসা
আল্লাহ তাআলার ইবাদতে নিবিষ্ট থাকার জন্য দুটিরই প্রয়োজন: ভয় ও ভালোবাসা। শুধু ভয় নয়, আবার কেবল ভালোবাসা নয়, বরং উভয়ই প্রয়োজন, উভয়ই উপকারি।
কারো বিশেষ অবস্থা থাকতে পারে, বয়সভেদে ও বিশেষ অবস্থার কারণে ভয় অথবা ভালোবাসার প্রাবল্য হয়েও থাকে। কিন্তু সাধারণভাবে নেক বান্দাগণের উভয় গুণই অর্জিত থাকে, তারা আল্লাহকে ভয়ও করে, ভালোও বাসেন। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সুসম্পর্ক অটুট রাখতে দুটিরই খুব প্রয়োজন।
পার্থিব জীবনেই এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। বাবাকে সন্তান ভয় পায়, আবার একই সঙ্গে অনেক ভালোবাসে। কখনো কখনো ভালোবাসার কারণেই ভয় থাকে যে, কোনো কথা বাবাকে যেকোনোভাবে বলে ফেললে হয়ত বাবা খুব রাগ করবেন। তখন মনে এ কথার উদয় হয়, বাবা রাগ করলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। এই যে টান ও ভালোবাসা, এরই সঙ্গে অজানা এক ভয় ও ভীতি — বাবার সঙ্গে সুসম্পর্কের দরুন যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আল্লাহ তাআলার প্রতি যে ভয় ও ভালোবাসা সেটি অতুলনীয় ও বিস্ময়কর। আল্লাহ পাকের সঙ্গে তো কোনো সৃষ্টির তুলনা চলে না। তাঁর সত্ত্বা অতি পবিত্র। তিনি সব জানেন, সব শোনেন। তিনি অমুখাপেক্ষী। সবকিছু তাঁর মুখাপেক্ষী। আমাদের যত দুর্বলতা, আদি ও অন্ত সম্পর্কে উনার পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। মানুষের ভয়ের মতন উনাকে ভয় করা যায় না, আবার মানুষের মধ্যে পরস্পর যে ভালোবাসার সম্পর্ক, এটি ভিন্ন। স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির ভয় ও ভালোবাসা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
যুগে যুগে নেককার বান্দাগণ আল্লাহ তাআলার পথে সাধনা করে তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়েছে। তাই ঘুরে-ফিরে এ কথা বলতেই হয়, যা কিনা অনস্বীকার্য, আল্লাহওয়ালাদের মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। এটি আল্লাহ তাআলার সুন্নত (নিয়ম)। আল্লাহ তাআলাকে পাওয়ার জন্য যত ভালো গুণ প্রয়োজন সবই তাদের কাছ থেকে জানতে ও শিখতে হয়। আল্লাহ তাআলার ভয় ও ভালোবাসা গুণ অর্জনও এর ব্যতিক্রম নয়।
মৌলিকভাবে ভয় অতি উপকারী ও বুনিয়াদি বিষয়। তাই কুরআন মাজীদে বার বার ভয় করতে বলা হয়েছে। কারণ এই ভয় আল্লাহ পাকের পরিচয় লাভের সহজ ও কার্যকরী মাধ্যম। যে যত বড় হয় তাঁর বড়ত্ব উপলব্ধি করা তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। ভয়ের স্তর পার হয়ে বড়র কাছে পৌঁছতে পারলে তাঁর মর্যাদা ও শান-শওকত সঠিকভাবে বুঝে আসে। তাঁর বড়ত্ব অন্তরে স্থায়ী হয়। তারপর যে ভাব সেই সত্ত্বার সঙ্গে জন্মে সেটি খাঁটি হয়, কারণ তার ভিত্তি অনেক মজবুত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ভয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট সুসম্পর্ক খাঁটি ভালোবাসা উৎপন্ন করে। তখন সম্পর্কে ভারসাম্য থাকে। কারণ, সম্মানের পাত্র যিনি, তাঁর পরিচিতি, মর্যাদা ও মাকাম সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে।
আসলে আল্লাহ তাআলার শান, তাঁর মর্যাদা, তাঁর তুলনা সম্পর্কে আমরা কী বলব আর কী বোঝাব?! তাঁর হাবীব, আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় নবীজি ﷺ আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলার প্রশংসায় বলেন:
لا أًحصى ثناء عليك
أنت كما أثنيت على نفسك
অর্থ: আমি তোমার (পরিপূর্ণ) প্রশংসা করতে সক্ষম নই, তোমার প্রশংসা তেমনই যেমনটি তুমি স্বয়ং তা করেছ! ইবনে মাজাহ
অতএব, সেই সুমহান সত্ত্বার ভয় ও ভালোবাসা অর্জনের উদ্দেশ্যে হাজার-কোটি জীবন ফেদা (বিসর্জন) হলেও তা তুচ্ছ! (কিন্তু নিঃসন্দেহে এ পথে সামান্য প্রচেষ্টা বড় মহৎ, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম)
আমরা কদম উঠালে তিনি আমাদেরকে তাঁর পথে উঠিয়ে পথ পার করে তাঁর (সন্তুষ্টি) পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন ইনশাআল্লাহ। সুদৃঢ় ইচ্ছা, সাধ্যমতন চেষ্টা আর দোআকে পুঁজি করে তাঁর দিকে ধাবিত হতে হবে আমাদের।
ও আল্লাহ সহায় হও! আমীন।
Last Updated on March 14, 2023 @ 3:46 pm by IslamInLife বাংলা