আমাদের প্রিয় নবীজী صلى الله عليه وآله وسلم সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল: নবীজীর যথাযথ মর্যাদা ও আনুগত্য ফরয
ঈমানের পূর্ণতার জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ফরয
ঈমানের উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা নয়। সঙ্গে আল্লাহ যা কিছুর ওপর ঈমান আনতে আদেশ করেছেন সবকিছু ওপর ঈমান আনাও ফরয।
যেমন, আল্লাহ তাআলা যে নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) প্রেরণ করেছেন, তাদের সবার প্রতি ঈমান আনা ফরয। আমাদের শেষ উম্মতের জন্য নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী স্বীকারের সঙ্গে সঙ্গে তার সব আদেশ পালন করাও ঈমানের অভিচ্ছেদ্য অংশ।
নিঃসন্দেহে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বে প্রেরিত সর্বশেষ নবী এবং পূর্ববর্তী সকল নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাঁর বিশেষত্ব এতই বিশেষ যে, আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রিয় নবীর নাম রাউফ ও রাহীম হিসেবে প্রকাশ করেছেন, যা প্রকৃতপক্ষে স্বয়ং আল্লাহর নাম! নিঃসন্দেহে, আমরা যখন এই নামগুলো দিয়ে আল্লাহকে ডাকি তখন অর্থ ভিন্ন হয়। এটাও ঈমানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যে, আল্লাহর গুণাবলীকে কখনো কারো সাথে তুলনা করা উচিত নয়। তারপরও আল্লাহতায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠ বান্দা ও শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কী মর্যাদা ও মর্যাদা দান করেছেন সমগ্র সৃষ্টিকে বাকরুদ্ধ — তাঁকে উচ্চ প্রশংসার সঙ্গে এমন দুটি নামে ডাকা হচ্ছে! একজন নবীর জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বোচ্চ প্রশংসা! প্রিয় নবীর উম্মত হিসেবে আমরা বারবার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চারণ করি এবং বারবারই করা উচিত…
যখনই চন্দ্র মাস রবিউল আউয়াল শুরু হয়, তখনই আমরা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরও বেশি আকর্ষণ ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করি!
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা উপলব্ধি না হওয়ার কারণ, আলামত, পরিণতি
একজন উম্মত হিসেবে আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত যে, আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত বড় মর্যাদা বহন করেন।
কারো মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হওয়া সেই ব্যক্তির প্রাপ্য সম্মান দানে সহায়ক। আর কারো সম্মান যদি অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই! এমন ব্যক্তির সম্মান সম্পর্কে সচেতনতা তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! এমন কোনো মুসলমান নেই যে কিনা প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা সম্পর্কে জানে না। তারপরও যখন আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করব, তখন আমরা আরও বিস্মিত ও হতবাক হব! আমরা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বরকতময় নাম উচ্চারণে আরও বিনয়ী ও সতর্ক হতে পারব! আমরা তার [صلى الله عليه وسلم] মহৎ জীবন সম্পর্কে জানি, কিন্তু আরও বেশি জানতে অগ্রসর হব। কিয়ামতের দিন তার সামনে আমাদের অবস্থা নিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ব। আমাদের চিন্তা গভীরভাবে ডুব দেবে — আমাদের আদর্শ, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে অবহেলা করে আমরা প্রতিদিন কতই না ভুল করছি! হে আল্লাহ ক্ষমা কর আর তাওফীক দাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ ও অনুকরণের! আমীন।
মূল সমস্যা হল, আমরা আমাদের প্রিয় নবী [صلى الله عليه وسلم] এর মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানও অর্জন করতে পারিনি! অধিকাংশ মুসলমান প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত হয়নি। আমরা পবিত্র সীরাত (আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান জীবনী) অধ্যয়নের দিক থেকে অনেক দূরে! আমরা তাঁকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে তাই অনেক পিছিয়ে আছি।
আমরা যখন মরব, তখন মুসলমান হয়ে মরতে হবে। এর স্পষ্ট অর্থ হল, আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষার পদাঙ্ক অনুসরণের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে হবে। যখন আমরা বলি “আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ”, তা কিন্তু সম্পূর্ণ “শরীয়ত”-কে বেষ্টন করে আছে — অর্থাৎ যাকিছু মহান আল্লাহ আমাদের করতে আদেশ ও নিষেধ করেছেন – সবকিছুই আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ!
প্রত্যেক উম্মতেরই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যথাযথ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং আনুগত্য করা — এ তিন দিক থেকে হক রয়েছে। যথাযথভাবে হকগুলো পালন সম্ভব হবে না ঠিক, কিন্তু সাধ্য অনুযায়ী হকগুলো পালন করা জরুরি। প্রতিটি মুসলমানকে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাধ্য অনুযায়ী ভালোবাসবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে ও তার আনুগত্য করবে। কেবল ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, ভালোবাসার ভারসাম্য রক্ষার জন্য সম্মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আনুগত্য ব্যতীত নবীর পথই অনুসৃত হবে না — ফলে, আমাদের ভালো কাজগুলি অসম্পূর্ণ, এমনকি অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে — যা আমাদের ঈমানকে হুমকির মুখে নিয়ে যাবে!
উম্মত হয়ে নবীজীর উম্মতের প্রতি সর্বনিম্ন দরদ জরুরি
একজন উম্মত হিসেবে আমি নবীজীর প্রতি কতটুকু কৃতজ্ঞ? সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমি কতটুকু যত্নবান? আমার জীবনের চলার পথই সেটা বলে দেবে। সুন্নাহর অনুসরণ যেমন সালাতে (নামাযে), তেমনি অন্যান্য ইবাদত, চালচলন, আদব-আখলাক, ঘর-সংসার, চাকুরী-ব্যবসা, রাষ্ট্র-পরিচালনা, দাওয়াত, জিহাদ ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ও অঙ্গনে সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণ থাকতে হবে। তাহলেই না “আমি শেষ নবীর একজন উম্মত” — এ কথাটির সত্যিকার মান রাখার আশা করা যাবে! কিন্তু আমরা শুধু উম্মতের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেই যেন ক্ষান্ত হয়েছি। সমগ্র পৃথিবীর যে উম্মত যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, সে যে আমাদেরই একজন ভাই বা বোন — এ উপলব্ধিটি যেন নিঃশেষ হতে চলছে! অথচ যে সম্পর্কটি স্বয়ং আল্লাহ বেঁধে দিলেন, কিভাবে তার বিচ্ছেদ সম্ভব?! প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো উম্মতের দরদে আমি এক উম্মত দরদী হব না? তার কান্নায় আমি কাঁদব না? তার বিপদে আমার সাহায্যের হাত প্রসারিত হবে না — এটা কিভাবে সম্ভব? বাস্তবিকই এ শিক্ষা অর্জন থেকে দূরে সরেই আজ সমগ্র উম্মতের দুরবস্থা হয়েছে।
এ কথা কে অস্বীকার করতে পারে যে, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত আজ অসংখ্য ভাবে মজলুম ও বিপদগ্রস্ত। অথচ, আমরা অধিকাংশ উম্মত এ বিষয়ে বেখবর, বেখেয়াল। অন্যকে দায়ী করা উদ্দেশ্য নয়, নিজকে প্রশ্ন করে নিজের হিসাব গ্রহণ ও সংশোধন জরুরি। আমি নিজে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক “আদনা” (ক্ষুদ্র) উম্মত হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য উম্মতের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া, বিপদে সঙ্গী হওয়া, তাদের দরদে কান্না করা — এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যার শ্রেষ্ঠ নমুনা সাহাবায়েকেরাম রাদ্বিআল্লাহু আনহুম। আমাদের ঈমান ও নেক কাজের সঙ্গে এ বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বর্তমান সময়ের একটি উদাহরণ দিলে সহজ হবে। ফিলিস্তিনে ইয়াহুদীদের জুলুমের কথা কে না জানে। এটা বিগত এক দুই বছরের কথা নয়! যুগের পর যুগ যাবৎ অবর্ণনীয় পৈশাচিক জুলুম-অত্যাচার। কিন্তু অনেক মুসলমান এমন চিন্তা করে আমরা ক্ষান্ত, “এটা তাদের ব্যাপার”। আহা! ভাই, তাহলে “আমরা মসুলমান ভাই-ভাই”-এর অর্থ কি তবে অর্থহীন হয়ে গেল?!
**** **** ****
বাস্তবিকই, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা, মান, মর্যাদা, তার সুন্নাহ অনুসরণ ও পূর্ণ আনুগত্য — এ সবকিছু থেকে দূরে সরেই আমাদের এ অবস্থা! আরও গোঁড়া থেকে চিন্তা করলে আল্লাহ তাআলার আদেশ ও বিধান লঙ্ঘনই এইসব ফলাফল বয়ে এনেছে। আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য আমাদের প্রত্যেকের ওপর ফরয। হাঁ, কোনো দ্বিধা-সন্দেহ নেই যে, ইবাদত কেবল আল্লাহ তাআলার — আর কারো নয়! মূল আনুগত্যও তাঁর; আর তিনিই আদেশ করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য আমাদের করতে হবে — কোনো বিকল্প পথ নেই।
আমরা এই প্রবন্ধটি পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত দিয়ে সমাপ্ত করছি। যেখানে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা স্পষ্টভাবে চিত্রিত করা হয়েছে এবং যদি আমরা এর অর্থ নিয়ে চিন্তা করি তাহলে এই ধরনের যেকোনো একটি আয়াতই সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, আল্লাহর হাবীব, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলকে চিনতে আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ, তবে আয়াতের কেবল তরজমা পাঠ যথেষ্ট নয়। আসল উদ্দেশ্য ও মর্ম বোঝার জন্য অবশ্যই কোনো নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব অধ্যায়ন করতে হবে!
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। [সুরা আম্বিয়া – ২১:১০৭]
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। [সুরা আলাম-নাশরাহ – ৯৪:৪]
لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। [সুরা ইমরান – ৩:১৬৪]
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন। [সুরা ফাতাহ – ৪৮:১০]
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। [সুরা আহযাব – ৩৩:৪০]
Last Updated on October 15, 2024 @ 4:07 pm by IslamInLife বাংলা