আত্মসংশোধন কি, কেন ও কিভাবে-১
আত্মশুদ্ধি, তাসাউফ, তাযকিয়া, নফসের ইসলাহ বা আত্মসংশোধন – সবগুলো শব্দ প্রায় সমার্থক।
ইলমে-তাসাউফ কী? কিভাবে তা কুরআন ও হাদীসের সাথে সম্পর্কিত, আর আত্মসংশোধনের সঠিক পথ-নির্দেশনা পাওয়া যাবে কিভাবে ইত্যাদি বিষয়গুলির খুবই চিত্তাকর্ষক, সহজ-সরল এবং জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় পূর্ণ একটি বই হল ‘ইসলাহী মাজালিস’।
[যদিও এই বইটির পরিচয় দেয়া আর বইটি পড়ার গুরুত্ব ও বিশেষ উপকারিতা উল্লেখ করাই উদ্দেশ্য। কিছু কথা তার আগে চলে আসলো এবং এই কথাগুলি ভূমিকা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ইনশাআল্লাহ, এই প্রবন্ধটির পরবর্তী অংশে ‘ইসলাহী মাজালিস’ বইটির পরিচিতি ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা হবে]
আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল আলাইহিমুসসালাম পাঠানোর ধারা তো বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের ওয়ারিশ, তথা উত্তরাধিকার হিসেবে যুগে যুগে আলেমে-দ্বীন পাঠানোর ধারা বন্ধ করেননি। আর, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা যেহেতু (তাদেরকে মাধ্যম বানিয়ে) দ্বীন-ইসলাম হেফাযত করেছেন-করছেন-করবেন, তাই কোনো প্রতারক/শঠ/ভন্ড কখনো ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে সার্বিকভাবে উম্মতকে বিভ্রান্ত করতে পারবেনা। এটা আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى -এর অশেষ মেহেরবানি যে, তিনি নেককার ও পরহেজগারদের এমন সব চিহ্ন, আলামত রেখেছেন যে, কোনো আন্তরিক হেদায়াত প্রত্যাশী ব্যক্তি সেই সব বুজুর্গ তথা পথনির্দেশক মানুষদেরকে খুবই সহজে খুঁজে নিতে পারেন। শুধু রাসূলে আকরাম ﷺ -এর প্রাত্যহিক জীবনের সুন্নাহ গুলির কথাই ভাবুন। যে ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনে নবীজি ﷺ -এর সু্ন্নতের ইহতিমাম রয়েছে সেই ব্যক্তির কথা, কাজ ও চিন্তাধারা খুব সহজেই আশেপাশের মানুষ ধরে ফেলতে পারে। বুঝতে পারে যে, না, এই ব্যক্তি অন্যদের মত নন। এই ব্যক্তি সাধারণ মানুষ নন।
আপনি যদি কখনো কোনো নেককার ও পরহেজগার ব্যক্তির সংস্পর্শে দু-এক মিনিটও বসে থাকেন, তার অন্তরের প্রশান্তি আপনাকে প্রভাবিত করবেই। হায়! আজ এই কথাটা বুঝানোর জন্য কত উপদেশ-নসীহত-বয়ান করতে হয়, কত কালি খরচ করতে হয়। কিন্তু এই বিষয়টা এত বাস্তব যে, সাধারণ ও সামান্য বিষয়ে আমরা এটা খুব ভালো করেই বুঝি। যেমন ধরুন, কারোর ব্যবহার যদি খুবই রুক্ষ হয়, তার সংস্পর্শে আমাদের মন শুষ্ক হয়ে যায়; অন্তরে কষ্ট লাগতে থাকে। যার ব্যবহার মধুর, তার সংস্পর্শে আরাম অনুভূত হয়। এই আরাম তথা শান্তি – মন ও দিলকে স্পর্শ করে। তাহলে চিন্তা করুন, যে ব্যক্তির অবস্থা এমন যে, সারাক্ষণ সে আল্লাহ তাআলার ধ্যানে মগ্ন – দুনিয়ার যত কিছুই করুক, তার আসল খেয়াল, চিন্তা ও ফিকির সবসময় আল্লাহ তাআলার সাথে লাগা, আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের ব্যাপারে সে সদা যত্নবান। তার দ্বারা কোনো মানুষই কোনো কষ্ট পায়না, এই ব্যাপারে সে খুবই সতর্ক। তার চালচলন-ঢং বলে দিচ্ছে যে, সে এক অন্য ধ্যান ও খেয়ালে আছে। যদি সব সময় এটা বোঝাও না যায়, তার সাথে কিছুক্ষণ চললে পুরা বুঝে আসে যে, সে আসলে যা ইচ্ছা তাই করে না, যা ইচ্ছা তাই বলে না। এমন ব্যক্তির সাথে কথা বলার দ্বারা, তার সাথে সামান্য কিছু সময় অবস্থানের দ্বারা কিরকম অনুভূত হবে? এখানে শয়তান ও নফস আমাদেরকে এক ধোঁকায় ফেলতে চায়। সে বলে, “আরে! এমন মানুষও কি আজ আছে নাকি? আরে যা ভালো, তুমিইতো। বেশি থেকে বেশি আশেপাশের মানুষ সব তোমার মতনই।” এই উস্কানি খুবই খারাপ। একে গ্রহণ করে, এই ভাবনা পোষণ করতে থাকাটাই অধ:পতনের প্রমাণ। আমরা তওবা করি। আল্লাহ তাআলা হেফাযত করুন।
বাস্তব কথা হল, এটা আল্লাহ তাআলার অশেষ-অসীম মেহেরবানি যে, শুধু আছে – না, সবসময়ই আল্লাহ তাআলার নেককার বান্দাগণ থাকবেন, আছেন। কিন্তু, তাদের খুঁজে নেবার জন্য আমাদের লাগবে এক অন্তর, এক দিল। যা থাকবে তৃষ্ণার্ত ও পিপাসিত। যে অন্তর তৃষ্ণার্ত ও পিপাসিত হবে সীরাতে মুস্তাকীম, সঠিক পথ পাবার জন্য। খাঁটি ঘি-এর খোঁজ করে, খাঁটি মধুর খোঁজ করে কি আপনি ক্লান্ত-শ্রান্ত? পাননি? হ্যাঁ, খোঁজ করে থাকলে – নিশ্চয়ই পেয়েছেন। খাঁটি মানুষ খোঁজ করতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা পর্যন্ত পৌঁছার জন্য এটা শর্ত। খাঁটি মানুষের খোঁজ করলে, তাও পাবেন। লাগবে আন্তরিকতা, লাগবে আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দোআ। দুনিয়ার এক একটি বস্তু হাসিলের জন্য যে পরিমাণ প্রচেষ্টা, ঝুঁকি ও ত্যাগ-সাধনা করা হয়, তার এক আনাও না করে আল্লাহ তাআলা-কে পাবার কামনা আর বাসনা কতই বিস্ময়কর! আসলে আমাদের মনের দৃঢ় সংকল্প তথা নিয়ত যে কি, সেটাতো আল্লাহ তাআলা উত্তম জানেন।
চলবে ইনশাআল্লাহ……
Last Updated on November 20, 2023 @ 7:38 am by IslamInLife বাংলা