ইউসুফ ইবনে আসবাত রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ১৯৫ হিজরী : ৮১০ খৃস্টাব্দ)

যুহদের সূর্যালোকে খায়েশ ও প্রবৃত্তির আঁধার দূরীভূত করেছিলেন। চল্লিশ বছর পর্যন্ত জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন তখনও পর্যন্ত দুটি জামাও ছিল না। যার ইজ্জত নিয়ে দুনিয়াদার লোকেরা প্রতিযোগিতা করে না এবং যার লাঞ্ছনায় কেউ আফসোসও করে না। দুনিয়ার বাদশাহগণ যার প্রতি মুখাপেক্ষী। কিন্তু তাদের ধনাঢ্যতার প্রতি তার কোন প্রয়োজন নেই। তাদের ঠেকা থাকলেও তার কোন ঠেকা ছিল না। তাকওয়া-দগ্ধ এক ব্যক্তি। তাকওয়া-তাড়িত এই লোকটি নিজের হাতে লেখা সবকটি বই দাফন করে ফেলেন। তিনি আবূ মুহাম্মাদ ইউসুফ ইবনে আসবাত শাইবানী রহ.। বিখ্যাত যাহিদ ও বুযর্গ। ওয়ায়েয ও উপদেশদাতা। থাকতেন আনতাকিয়া শহরে। সিরীয় ইবাদতগুজার ও ক্বারীদের তিনি একজন। সময়ের সেরা উত্তম ব্যক্তি। রক্ষা করেছিলেন নিজের উদর। নিরেট হালাল ছাড়া উদরপূর্তি করেননি কখনও। হালাল আহার না পেলে মাটি খেতেন।
একবার তার নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করে, যুহদ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হালাল বিষয়ে যুহদ কর। যেগুলো হালাল সেগুলো কম ব্যবহার কর, কম খাও। হারাম তো ব্যবহার করাই যাবে না। করলে আল্লাহ তাআলা তোমাকে শাস্তি প্রদান করবেন। আরেক লোক এসে প্রশ্ন করে, যুহদের শেষ কথা কী? তিনি বললেন, যা আসে যা পাও তা নিয়ে খুশি হয়ো না। যা চলে যায় যা হাতছাড়া হয় তা নিয়ে আফসোস কর না।
লোকটি আবার সওয়াল করলো, বিনয়ের শেষ কী? জবাবে বললেন, ঘর থেকে বের হওয়ার পর যার সাথে দেখা হবে তাকে নিজের চেয়ে ভালো মনে করা। তিনি বলেন, আমার বয়স চল্লিশ বছর। দীর্ঘ এই সময়ে আমি দুটি জামারও মালিক নই। জীবনে কখনও কোন বিষয়ে সংশয়-সন্দেহ দেখা দেওয়ামাত্রই তা ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আরও বলতেন, ক্ষুধায় হৃদয় কোমল হয়। পৃথিবীতে ক্ষুধা সকল নেক ও পুণ্যের গোড়ার কথা।
তিনি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কাউকে ভয় করতেন না। আল্লাহ তাআলাকে খুশি করার জন্য যে কোন কথা বলতে বাদ সাধতো না। একদিন তার নিকট এক আমীর হাজির। বড় টুপি দিয়ে মুখম-ল আবৃত। (ছদ্মবেশে এসে) মাসআলা জিজ্ঞেস করল। হযরত ইউসুফ প্রতিবাদের চেহারায় তাকালেন। বললেন, আমার উস্তাদ সুফইয়ান সাওরী রহ. এমন টুপি পরিহিত ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। একথা শোনে আমীর মাথা থেকে টুপি নামালেন। মাটিতে রাখলেন। এরপর ইউসুফ রহ. আমীরের প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
তিনি আমীর ও বাদশাহদের হাদিয়া-উপঢৌকন গ্রহণ করতেন না। এ ব্যাপারে লোকদেরকেও উপদেশ-নসিহত করতেন। একবার জনৈক বাদশাহ কিছু একটা দিয়ে তার নিকট পাঠালেন। ইবনে সাবাত বললেন, এসব অর্থকড়ি গ্রহণ করার চেয়ে আমার হাত-পা কেটে দেওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয়।
মহান এই মনীষী হিজরী ১৯৫ সালে মারা যান।

error: you are not allowed to select/copy content. If you want you can share it